ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জয়পুরহাটে ডায়রিয়ার প্রকোপ ॥ ঠাঁই নেই হাসপাতালে

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ১৫ জুলাই ২০১৮

 জয়পুরহাটে ডায়রিয়ার প্রকোপ ॥  ঠাঁই নেই হাসপাতালে

নিজস্ব সংবাদদাতা, জয়পুরহাট, ১৪ জুলাই ॥ জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে প্রায় একশ’ রোগী। গত এক সপ্তাহ থেকে হাসপাতালের আট শয্যার ওয়ার্ডে গড়ে প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছেন প্রায় ৭০ রোগী। স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় যাদের চিকিৎসা চলছে ওয়ার্ডের মেঝে ও হাসপাতাল করিডরে। রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, জয়পুরহাট পৌরসভা ছাড়াও সদর উপজেলার বম্বু ইউনিয়নের ধারকি, দোগাছি ইউনিয়নের দোগাছি মঙ্গলবাড়ী, মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের শাহাপুর, পাঁচবিবি উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের কাশিয়াচাপর, আয়মা রসুলপুর ইউনিয়নের আয়মা গোপিনাথপুর ও নওগাঁ জেলার ধামুইরহাট উপজেলার ইসবপুর গ্রামের ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীরা ভর্তি হয়েছে। গত এক সপ্তাহ থেকে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে প্রতিদিন রোগী ভর্তি ৬০ জনেরও বেশি। শুক্রবার রাত ও শনিবার ভোরের দিকে হঠাৎ করে এই সংখ্যা বেড়ে একশ’ ছাড়িয়ে যায়। হাসপাতালে রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা দেয়ার পর অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরে। হঠাৎ ডায়রিয়া শুরু হওয়ার কারণ কী জানতে চাইলে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ তুলসী রায় জানান গরম আবহাওয়া এবং আম-কাঁঠালের মৌসুমের কারণে পানি বাহিত এ রোগের প্রকোপ বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে। তবে বিষয়টি নিয়ে আমরা খোঁজখবর রাখছি। শনিবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে পা ফেলার জায়গা নেই। আট শয্যার ওয়ার্ডে রোগীদের মেঝে ও দুই পাশের করিডরের মেঝেতে শুয়ে আছেন অনেক রোগী। জয়পুরহাট সদর উপজেলার দোগাছি গ্রাম থেকে ৫ বছরের শিশু তাপসকে নিয়ে তার মা শুক্রবার রাতে এসেছেন হাসপাতালে। তাপসকে আইভি স্যালাইন দিলে সে তা না নেয়ায় মুখে স্যালাইন খাওয়ানো হচ্ছে রাত থেকেই। বাবা সঞ্জীব কুমার জানান, শুক্রবার দুপুরে কাঁঠাল খাওয়ার পর সন্ধ্যা থেকে তার ছেলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। একই এলাকার আজেদা বেগম ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত চারদিন ধরে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ না হতেই তার যুবতী মেয়ে মেহেরুন্নেছা আক্রান্ত হওয়ায় শনিবার তাকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কী কারণে তারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন তা তারা বলতে পারেননি। তবে তাদের ধারণা কয়েকদিন থেকে প্রচ- গরমের কারণেই তারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। নওগাঁ জেলার ধামুইরহাট উপজেলার ইসবপুর গ্রামের ফরিদা বেগম (৪৫) শুক্রবার রাতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। একইভাবে সদর উপজেলার ধারকী গ্রামের মোমেনা (৬০), সবুজনগরের আব্দুস সালাম ভর্তি হয়েছে। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ লায়লা আরজুমান্দ বানু বলেন, ‘তাদের ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা মাত্র আটটি। অথচ গত সাত দিন থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬০ এরও অধিক রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। দিন দিন কমা তো দূরের কথা রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। যাদের চিকিৎসা দিতে তারা পুরোপুরি হিমশিম খাচ্ছেন। হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ তুলসী চন্দ্র রায় বলেন, ‘গত সাত দিনের তুলনায় শনিবার রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। পুরো ওয়ার্ড জুড়ে রোগীদের চিকিৎসা চলছে। গরম আবহাওয়ায় আম-কাঁঠাল খেয়েই অধিকাংশ রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এ ছাড়া পানির সমস্যা থেকেও এ রোগ ছড়াতে পারে।
×