ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিমান, নৌ ও স্থল বন্দরে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ

আইএসের হয়ে যুদ্ধ করা দেশী জঙ্গীদের বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৮ জুলাই ২০১৮

আইএসের হয়ে যুদ্ধ করা দেশী জঙ্গীদের বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ

শংকর কুমার দে ॥ ইরাক ও সিরিয়ায় জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেটসের (আইএস) মার খাওয়ার পর পলায়নপর বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত জঙ্গীরা যাচ্ছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে। ওসব জঙ্গী যাতে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে সেজন্য আগাম সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। বাংলাদেশ থেকে শতাধিক ব্যক্তি ইরাক-সিরিয়ায় গিয়ে আইএসের হয়ে যুদ্ধে যাওয়ার পর সেখানে অনেকেই নিহত হয়েছে। যারা জীবিত আছে তারা পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে পারে এমন আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থা। শুধু বাংলাদেশীরাই নয়, আইএসের যেসব দেশের ব্যক্তিরা জঙ্গী হয়ে যুদ্ধ করতে যায় তারা এখন নিজ নিজ দেশে ফিরে আসার চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন রাজ্যে ঢুকে পড়তে পারে আইএসের হয়ে যুদ্ধে যাওয়া জঙ্গীরা। এসব জঙ্গীর মধ্যে যারা বাংলাদেশী তারা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে বলেও গোয়েন্দা সংস্থার আশঙ্কা । গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ইরাক ও সিরিয়া থেকে পলায়নপর জঙ্গীরা নিজ দেশে ঢুকতে চাইছে। আইএস প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদি যে মসুলে আছে সেই শহরটিরও পতন ঘটানোর পর আইএস প্রধান আদৌ জীবিত নাকি মৃত কিংবা তার বিষয়ে সঠিক তথ্য কারও কাছে নেই। যৌথ বাহিনীর মুখপাত্রদের কেউ বলছেন, আইএস প্রধান নিহত, কেউ বলছেন তার লাশের হদিস নেই, আবার কেউ বলছেন তিনি আত্মগোপনে। ইরাক-সিরিয়ায় আইএস ঘাঁটির পতনের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে জঙ্গী হামলা অব্যাহত আছে। এতে হতাহত হলেও পশ্চিমা দেশগুলোতে খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না আইএস জঙ্গীরা। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশী যারা সিরিয়া-ইরাক ভিত্তিক জঙ্গী আইএসের হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিখোঁজ রয়েছে তারা আবার ফিরে আসতে পারে এমন আশঙ্কায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক করা হয়েছে। এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ইরাকে আইএস জঙ্গীদের পতন ঘটার মুহূর্তে বিদেশী যোদ্ধাদের প্রতি ‘হয় আত্মঘাতী হও, নয়ত পালাও’ এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন ইসলামিক স্টেটস প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদি। আইএস প্রধানের বক্তব্যের পর আইএসের হয়ে যুদ্ধ করা বাংলাদেশের জঙ্গীরা দেশে ফেরার চিন্তা করে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক নজরদারি ও কঠোর পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশের জঙ্গীরা ফিরে আসতে পারেনি। তবে নাম-পরিচয় পরিবর্তন করে কেউ কেউ ঢুকে পড়তে পারে এমন তথ্য থাকলেও তার হদিস করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসের হয়ে বাংলাদেশের কেউ যুদ্ধ করছে কিনা, বা কতজন যুদ্ধ করছে সে সম্পর্কে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছে সঠিক পরিসংখ্যান নেই। শুধু মাঝেমধ্যে দু’এক জনের আইএস পোশাক পরা হাতে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল হাতে ছবি ভার্চুয়াল বা আইএসের দাবির ম্যাগাজিন, আমাক নিউজের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাইট ইন্টেলিজেন্সের পোস্ট করা ছবির খবর ছাড়া আর কোন তথ্য নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি আইএস জঙ্গী নেই, সবাই হোমগ্রোন জঙ্গী। ২০১৪ সালে ইরাকের মসুল থেকেই কথিত খিলাফতের ঘোষণা দেন আইএস প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদি। মাত্র চার বছরের ব্যবধানে সেই শহরের পতন ঘটে হাতছাড়া তো হয়েছেই এমনকি মসুলের পতন ঘটার পর আইএস প্রধানের কোন হদিসই নেই, নেই আইএস তৎপরতাও। ইরাকে পরাজয়ের মুহূর্তে এক বিবৃতিতে বিদেশী জঙ্গীদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার অথবা আত্মঘাতী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বাগদাদি। এরপর সিরিয়াতেও পতন ঘটে আইএস জঙ্গী গোষ্ঠীর। বাগদাদির এই নির্দেশের পর ইরাক-সিরিয়ায় আইএসের পক্ষে লড়াই করা বাংলাদেশী জঙ্গীরা দেশে ফিরে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, এক সময়ে ইরাক-সিরিয়ায় আইএস জঙ্গীদের আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি, গ্রেনেড-বোমার শব্দে ঘুম ভাঙ্গত আবার ওই শব্দের মধ্যেই ঘুমাত। এখন ইরাক-সিরিয়ার বদলে সেই অবস্থা হয়েছে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে এখন এমন কোনদিন নেই যে আগ্নেয়াস্ত্রে হতাহতের ঘটনা ঘটছে না। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যারাকসহ পবিত্র মসজিদেও হতাহতের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। বাংলাদেশে যাতে ওসব আইএস জঙ্গী সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে কোন আইএস জঙ্গী নেই এটা নিশ্চিত। বাংলাদেশ থেকে যারা মিসিং অর্থাৎ নিখোঁজ আছে তারা আইএস যোদ্ধা কিনা তাও পরিষ্কার নয়। তবে যারা মিসিং আছে তাদের সব তথ্য সব বিমানবন্দর, স্থলবন্দরে দেয়া আছে। এসব লোক যদি দেশে আসতে চায় ইমিগ্রেশনে কোন রকম সন্দেহ হলে তাদের আটকের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় থাকার পাশাপাশি নজরদারির জন্যও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেশের হোমগ্রোন জঙ্গী যারা আছে তাদের বিরুদ্ধে জঙ্গীবিরোধী অভিযান অব্যাহত বলে ওই পুলিশ কর্মকর্তার দাবি।
×