ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জন্মনিয়ন্ত্রণ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৫ জুলাই ২০১৮

জন্মনিয়ন্ত্রণ

দেশে জনসংখ্যা সমস্যা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। তবে অপ্রিয় হলেও সত্য যে, গত কয়েক বছরে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে অনেকাংশে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর বলে সরকারের একটি বিভাগ থাকলেও বিশেষ করে মাঠপর্যায়ে তাদের সক্রিয় কার্যক্রম তেমন দৃশ্যমান নয়। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে দেশব্যাপী পরিবার পরিকল্পনা তথা জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম সম্প্রসারণে সবিশেষ জোর দেয়া হলেও গত কয়েক বছরে অজ্ঞাত কারণে এই কর্মসূচীতে অনেকটা স্থবিরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। জন্মনিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত ওষুধপত্রসহ আনুষঙ্গিক সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধিসহ দুষ্প্রাপ্যতার অভিযোগও আছে। অথচ এসবই এক সময়ে ঘরে ঘরে গিয়ে নারী কর্মীরা বিনামূল্যে বিতরণ করতেন মা-বোনদের কাছে। এ নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে উঠান বৈঠকও হতো গ্রাম-গঞ্জে। বর্তমানে এর ব্যত্যয় ঘটায় জনসংখ্যা হ্রাসের তেমন সুফল মিলছে না। বিশেষ করে দুর্গম চরাঞ্চল, হাওড়-বাঁওড় অঞ্চল ও অনুন্নত দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরেও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের অভাবে প্রতিদিন অন্তত ৬০ শিশুর জয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে, যেটি রীতিমতো উদ্বেগজনক। অথচ দেশে মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বেড়েছে জিপিডি। তবে অনিয়ন্ত্রিত জন্মহারের কারণে এর সুফল সবাই পাচ্ছে না। ওই প্রেক্ষাপটে সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মাঠপর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম জোরদার করার যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এর জন্য তিনি মাঠকর্মীদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বসে না থেকে ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার-প্রচারণার আহ্বান জানিয়েছেন। এর সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টকর্মীদের পোশাক পরিধান করার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েরেছন। এর পাশাপাশি সরকারের উচিত হবে, দেশের সর্বত্র নারী ও পুরুষের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সম্ভব হলে বিনামূল্যে অথবা স্বল্পমূল্যে বিতরণ করা, বিশেষ করে অনুন্নত ও অনগ্রসর অঞ্চলগুলোতে। এ ব্যাপারে অবহেলার কোন সুযোগ নেই। বর্তমান সরকারের অনেক সমুজ্জ্বল সাফল্যের অন্যতম একটি দেশব্যাপী কমিউনিটি ক্লিনিক। সম্প্রতি এটি পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি; বিশেষ করে বিশ্বব্যাংকের মতো সুবৃহৎ বহুজাতিক দাতা সংস্থার। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সার্বিক স্বাস্থ্য খাতের উন্নতিতে ‘অসাধারণ ভূমিকা’ রাখছে কমিউনিটি ক্লিনিক। স্বাস্থ্য খাতে অভাবনীয় উন্নতির উল্লেখ করে সংস্থাটি বলেছে, এটি সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেছে। এর ফলে নবজাতক ও শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু, প্রজনন হার নিয়ন্ত্রণসহ ১০টি সূচকে সন্তোষজনক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা এবং পুুষ্টি সেক্টর উন্নয়ন কর্মসূচীর সুবাদে সম্ভব হয়েছে এই অগ্রগতি। এর আওতায় ২০১৪ সাল থেকে দেশে ১৩ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। এর ফলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীর সেবা নেয়ার হার ২১ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) আওতায় ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার কমানোর জন্য সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ ২০১০ সালে জাতিসংঘের এমডিজি এ্যাওয়ার্ড অর্জনে সক্ষম হয়, যা বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল করে তুলেছে। বিশ্বব্যাংকের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে অবশ্য কয়েকটি চ্যালেঞ্জের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দারিদ্র্য, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, চিকিৎসা উপকরণের অভাব, বিভিন্ন রোগের প্রকৃতির পরিবর্তন ইত্যাদিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। মা ও শিশুর অপুষ্টির কথাও বলা হয়েছে। তদুপরি নগরায়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সমস্যা তো আছেই। সে অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোয় প্রশিক্ষিত ধাত্রীসহ সেবার মান বাড়ানো গেলে নারীর অপুষ্টিজনিত সমস্যাসহ প্রসবজনিত জটিলতা ও মাতৃমৃত্যুর হার আরও কমে আসবে নিঃসন্দেহে। এর সঙ্গে যুক্ত করা যেতে পারে পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মসূচীকেও।
×