ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁয় আমের বাজারে দরপতন ॥ বিপাকে চাষী

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ২৭ জুন ২০১৮

নওগাঁয় আমের বাজারে দরপতন ॥ বিপাকে চাষী

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ নওগাঁ অঞ্চলে এবার আমের বাজারে দরপতন ঘটেছে। গত বছরে আমের মূল্য ভাল পাওয়ায় এ বছর জেলায় আম চাষ বেশি হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে আমের বাজারের যে অবস্থা লাভ তো দূরের কথা দোকানের বাকি ও ঋণ পরিশোধও হবে না বলে আমচাষীদের অভিমত। আমের মূল্য বৃদ্ধি ও বিদেশে রফতানির পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি আমচাষীদের। আমের দ্বিতীয় রাজধানী হলো, নওগাঁর বরেন্দ্র অঞ্চল। এই অঞ্চলের পতœীতলা, সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুরে রয়েছে দিগন্তজোড়া আমের বাগান। এই অঞ্চলে চলতি মৌসুমে আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। কয়েকটি প্রজাতির আম এক সঙ্গে নামার কারণে গত বছরের তুলনায় এই বছর আমের মূল্য অর্ধেকে নেমে এসেছে। মূল্য না পাওয়ায় দিশেহারা আমচাষীরা। তাই লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। আবার অনেকে বাগান কিনে ব্যাপক দরপতনের ফলে বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কায় ঋণের টাকা পরিশোধের ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন এলাকা ছেড়ে। বাগান মালিকদের দাবি, গত বছরের চেয়ে এবার আমের দাম অর্ধেক। আর ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা বলছেন, এক সঙ্গে সব আম নামার কারণে বাজারে আমের দামে ধস নেমেছে। সাপাহার উপজেলায় প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে আম বিক্রি করার জন্য চাষীদের দীর্ঘ লাইন। এটি সাপাহারের আমের বাজার। সকালে গাছ থেকে নামানো আম আনা হয়েছে সাপাহারে আমের হাটে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ হাটে আমের সরবরাহ বাড়লেও মিলছে না ক্রেতা ও পাইকারদের। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাইকারি ব্যবসায়ী না আসায় আমের দাম কম পাচ্ছেন চাষীরা। সাপাহার বাজারের আমের আড়তদার রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, গত বছর ল্যাংড়া বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ২০০০-২২০০ টাকা, আর এ বছর ৮০০-১২০০ টাকা। খিরসাপাতী গত বছর বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ২৪০০-২৫০০ টাকা আর এবার ১২০০-১৪০০ টাকা এবং গুটি জাতের আম গত বছর বিক্রি হয়েছে ১০০০-১২০০ টাকা আর এবার ৪০০-৫০০ টাকা মণ। আমরাও চাষীদের কাছ থেকে আম কিনে বিপাকে পড়ে যাচ্ছি। সামান্য লাভ দিয়েই আমগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান করতে বাধ্য হচ্ছি। বাজারে বিক্রি করতে আসা আমচাষী মোঃ হামিদুল হক বলেন, বর্তমান বাজার অনুযায়ী এক মণ আমের দাম দিয়ে একজন শ্রমিকের বেতনও দেয়া সম্ভব নয়। অনেকেই ঋণ ও দোকানে সার, কীটনাশকের বাকিগুলো কীভাবে পরিশোধ করবেন এ চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। আরেক আমচাষী রফিকুল ইসলাম বলেন, অনেক আম ব্যবসায়ী ব্যাংক ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। তারা কীভাবে সেই টাকা পরিশোধ করবেন এ ভয়ে এলাকা ছেড়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে যাচ্ছেন। এবার জেলার সকল স্থানে একই সময়ে বেশ কয়েক জাতের আম নেমেছে। তাই আমের দরপতন বলে মনে করছেন আমের আড়তদাররা। এবার আমচাষী ও ব্যবসায়ী উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনোজিত কুমার মল্লিক বলেন, রোজার সময় আমের দাম কম ছিল। এখন একটু আমের দাম বাড়লেও কৃষকরা আমের দাম সে অনুপাতে পাচ্ছেন না। এতে করে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবে সামনের দিনে যদি ব্যাপকভাবে পাইকার আসে তাহলে কিছুটা হলেও লাভবান হবেন বলে জানালেন কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেন চলতি বছর নওগাঁ জেলায় ১৪ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে আর ফলনের আশা রয়েছে প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ গাছে গাছে আম ঝুললেও বাজারে খদ্দের নেই। তাই গাছে আম পেকে মাটিতে পড়ার পরেও আম চাষীরা সাহস করছে না আম ভাঙতে। এই ভাবে প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন আম নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম চাষীরা বেকায়দায় পড়েছে। তারা এবার কয়েক হাজার কোটি টাকার লোকসান দিবে আমের গ্রাহক না থাকায়। এ বছর এমনিতেই মৌসুম পেরিয়ে যাবার পর মুকুল আসে। তাই আম পরিপক্ব হতেও বেশকিছু সময় নিয়েছে। এই ফাঁকে দেশের বিভিন্ন স্থানের আম বাজারে আসায় পিছিয়ে পড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম। এক কথায় চাঁপাইয়ের পাকা আম আসার আগেই বাজার দখলে চলে যায় দেশের বিভিন্ন স্থানের আম। ফলে এবার মৌসুম শুরুর পরেও কোন ব্যাপারী ও পাইকার ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসেনি এখানে। ফলে প্রতিদিন যেখানে চাঁপাই থেকে দুই হাজারেরও বেশি ট্রাক আম বহন করতো এখন সেখানে প্রতিদিন পাঁচ শ’র বেশি ট্রাক আম বহন করে না। ফলে দেশের বৃহত্তম আম বাজার কানসাটসহ জেলার প্রায় ৩৫টি আমবাজার গ্রাহকের অভাবে খাঁ খাঁ করছে। ক্রেতা শূন্য। অথচ প্রচ- গরমে গাছ আম ধরে রাখতে পারছে না। শিয়ালমারীর আম ব্যবসায়ী খাইরুল জানান, এবার শুধু ক্ষিরসা আমে সাড়ে চার কোটি টাকার লোকসান দিয়েছে। একই অবস্থার মধ্যে পড়েছে বম্বাই ক্ষিরসা ও ল্যাংড়া নিয়ে জেলার প্রায় পাঁচ হাজার আম চাষী। তারা এই দুটি মুখ্য নামকরা জাতেও লোকসান গোনার জন্য তৈরি হয়ে গেছে। এক কথায় এবারের চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের আমচাষীরা যে হারে লোকসান গুনছে তাতে জেলার অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা পাবে। কারণ পুরো দেশের চাহিদার তুলনায় এবার এখানে আমের ফলন সবচেয়ে বেশি। একদিকে বিদেশে যে আম রফতানি হতো তা এবার বন্ধ করে দিয়েছে বিদেশী কর্তৃপক্ষ।
×