ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকল্প বাস্তবায়নে বাজেট ছাড় দ্রুত করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২২ জুন ২০১৮

 প্রকল্প বাস্তবায়নে বাজেট ছাড় দ্রুত করা  হচ্ছে

এম শাহজাহান ॥ সরকারী প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থছাড় প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। এবার বাজেট পাসের পরই সরকারী প্রকল্প পরিচালকগণ ১ জুলাই থেকে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যবহার করতে পারবেন। আগামী ৩০ জুন প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট মহান সংসদে পাস হচ্ছে। বর্তমানে সরকারী তহবিলের অর্থ চার কিস্তিতে ছাড় করা হয়। এখন থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে ছাড়ের কোন বিষয় থাকবে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এদিকে, প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আকার দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া, বর্তমান সময়ে এডিপির আওতায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৃহৎ ও মেগা প্রকল্প। আমাদের বিভিন্ন আর্থিক সংস্কারের প্রভাবে ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়-বিভাগসমূহের বাজেট বাস্তবায়ন সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মুহিত বলেন, উন্নয়ন কর্মসূচীর সঠিক ও সময়মত বাস্তবায়নে আরও উৎকর্ষ আনার জন্য আমরা এখন এডিপি’র অর্থ ছাড় প্রক্রিয়ায় আমূল সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। এর অংশ হিসেবে সরকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বাস্তবায়িত প্রকল্পের জিওবি অংশের প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের কোন প্রয়োজন হবে না মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে, এখন থেকে বাজেট অনুমোদনের পর প্রকল্প পরিচালকগণ জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকেই প্রকল্পের অর্থ ব্যবহার করতে পারবেন। সূত্র জানায়, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেসব বাধা চিহ্নিত করেছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সময়মতো অর্থছাড় না হওয়া। তাছাড়া বিভিন্ন সময় প্রকল্প বাস্তবায়ন গতি না থাকারও অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা যায় এটি। এ প্রেক্ষাপটেই অর্থমন্ত্রীর এ ঘোষণা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি ফিরিয়ে আনবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম সম্প্রতি বলেন, এটি প্রকল্পের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় একটি অন্যতম সংস্কার এবং বড় উদ্যোগ বলা যায়। কেননা, প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া শেষ করতেই জুলাই মাসের শেষ দিকে অথবা আগস্ট মাসে গিয়ে অর্থ ছাড় হয়। এক্ষেত্রে অর্থবছরের শুরুর দিন থেকে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। কিন্তু আগামী অর্থবছর থেকে অর্থছাড় সহজ হওয়ায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাড়বে। সূত্রমতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে এডিপির আওতায় মোট ব্যয় হয়েছে ৮২ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে ৪৮ দশমিক ২৫ শতাংশ অর্থ। গত কয়েক অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে সরকারী তহবিলের টাকা খরচের চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সরকারী তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে ৫৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ অর্থ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে ৪৮ শতাংশ অর্থ, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে ৫৩ শতাংশ অর্থ এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫৪ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, প্রত্যেক অর্থবছরের অর্থ ব্যয়ের চিত্র প্রায় একই। ১০ মাসে প্রায় অর্ধেক অর্থ ব্যয় করা হয় আর বাকি অর্ধেক অর্থ ব্যয় হয় বাকি দুই মাসে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থ ছাড়ের জটিলতাও এর জন্য দায়ী। তাই নতুন সংস্কারের ফলে অর্থবছরের শুরু থেকেই টাকা খরচ করা গেলে ভাল হবে। এ প্রসঙ্গে সাবেক অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ সংশ্লিষ্ট অনেক প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো ব্যয় করতে পারে না। ফলে জাতীয় উন্নয়নে নেয়া প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হয় ধীরগতিতে। তাই ব্যয় সক্ষমতা বাড়ানো খুবই জরুরী। এ বিষষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দক্ষ করে তোলার জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে সরকার। এছাড়া সময়মতো অর্থছাড়ের বিষয়টির উপরও প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি জড়িত। প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থছাড়ের ব্যাপারে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আশা করছি, এর ফলে সরকারী প্রকল্প সময়মতো বাস্তবায়িত হবে। জানা গেছে, এডিপি বাস্তবায়নে গতি আনতে কাঠামোগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে করা হচ্ছে নীতিমালা। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবনা তৈরি করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। সেখানে প্রস্তুতিমূলক কাজের সময় কমিয়ে আনার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নতুন প্রস্তাবে গুরুত্ব পেয়েছে বাস্তবায়ন সংক্রান্ত নানা দিক।
×