ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি ৪০ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৪:১০, ৩১ মে ২০১৮

নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি ৪০ হাজার কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সবধরনের সঞ্চয়পত্রসহ জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে নিট ঋণ এসেছে ৪০ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে কেবল এপ্রিল মাসে এসেছে ৩ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তথ্য বিশেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে মোট বিনিয়োগ এসেছে ৬৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। এর মধ্যে থেকে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের মূল ও মুনাফা পরিশোধে সরকারের ব্যয় হয়েছে ২৬ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে কেবল মুনাফা পরিশোধেই ব্যয় হয়েছে ১৬ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা। মূল ও মুনাফা বাদ দিয়ে এ খাত থেকে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। যা চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার ৯১.০৫ শতাংশ। সংশোধিত বাজেটে সঞ্চয় স্কিমগুলো থেকে ৪৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। মূল বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। গত এপ্রিলে জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে মোট বিনিয়োগ আসে ৬ হাজার ৫৩৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে থেকে মূল ও মুনাফা বাবদ সরকারের ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ১৮৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। ফলে নিট ঋণ দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩৫৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা। গত মার্চে এ খাত থেকে নিট ঋণ এসেছিল ৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। গত ফেব্রুয়ারিতে নিট ঋণ ছিল ৪ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। আগের মাস জানুয়ারিতে নিট ঋণ ছিল ৫ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। এরও আগে গত ডিসেম্বরে এ খাত থেকে নিট ঋণ হয়েছিল ২ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা। গত নবেম্বরে সঞ্চয় স্কিমগুলো থেকে ৩ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা, অক্টোবরে ৪ হাজার ৬২০ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরে ৩ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা, আগস্টে ৩ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা এবং অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৫ হাজার ৫৩ কোটি টাকা নিট ঋণ হয়েছিল সরকারের। প্রসঙ্গত; জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে বিনিয়োগকৃত অর্থের ওপর একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর মুনাফা প্রদান করে সরকার। মেয়াদপূর্তির পরে বিনিয়োগকৃত অর্থও ফেরত প্রদান করা হয়। প্রতিমাসে বিক্রি হওয়া সঞ্চয় স্কিমগুলো থেকে প্রাপ্ত বিনিয়োগের হিসাব থেকে আগে বিক্রি হওয়া স্কিমগুলোর মূল ও মুনাফা বাদ দিয়ে নিট ঋণ হিসাব করা হয়। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেটে নির্ধারিত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়। পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায়, আলোচ্য ১০ মাসে সঞ্চয় স্কিমগুলোর মধ্যে বরাবরের মতো সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে পরিবার সঞ্চয়পত্র থেকে। এ খাতে গত ১০ মাসে নিট ঋণ এসেছে ১৪ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা। এর পরে রয়েছে তিন-মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, নিট ঋণ ১০ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। পেনশনার সঞ্চয়পত্রে নিট ঋণ এসেছে ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। পাঁচ-বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে নিট ঋণ এসেছে ২ হাজার ৯১২ কোটি টাকা। তাছাড়া মেয়াদি হিসাবে জমাকৃত অর্থ রয়েছে ৬ হাজার ২৪১ কোটি টাকা। ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে নিট ঋণ আছে ১ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা। আসন্ন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা কমাতে পারে। এ কারণে এ খাতের সঞ্চয় স্কিমগুলোর মুনাফার হার কমারও আশঙ্কা করছেন অনেকে। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য থেকেও এর ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। যে কারণে অর্থবছরের শেষ দিকে এসে সঞ্চয়পত্র কেনার হিড়িক পড়েছে ব্যাংকে। গত সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন কর্মদিবসে বিপুল সংখ্যক গ্রাহককে সারি ধরে দাঁড়িয়ে সঞ্চয়পত্র কিনতে দেখা গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে। বর্তমানে সঞ্চয়পত্রগুলোর মধ্যে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে ১১.৫২ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়। পেনশন সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১.৭৬ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১.২৮ শতাংশ। তিন মাস-অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১.২৮ শতাংশ।
×