ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিয়ায় উদ্বাস্তু সমস্যায় জনপরিসংখ্যানে পরিবর্তন

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ২৬ মে ২০১৮

সিরিয়ায় উদ্বাস্তু সমস্যায় জনপরিসংখ্যানে পরিবর্তন

সিরিয়ার সাত বছরের যুদ্ধ এবং মানুষের ব্যাপক হারে স্থানচ্যুতির কারণে দেশের জনসংখ্যা বিষয়ক মানচিত্রের পরিবর্তন হয়ে গেছে। জাতিগত, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি দেয়াল তৈরি হয়েছে যা মুছে ফেলা কঠিন। খবর এএফপির। স্থানচ্যুত সিরিয়ান, বিশ্লেষক ও মানবাধিকার আন্দোলনকারীরা এএফপিকে বলেছেন একটি বিভক্ত দেশের, যেখানে শাসন কর্তৃপক্ষের বিরোধীদের উচ্ছেদ করা হয়েছে, সংখ্যালঘুরা আরও ঘনিষ্ঠভাবে পরস্পরের কাছাকাছি এসেছে এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সাধারণভাবে আরও সমজাতীয় হয়ে ওঠেছে। তারা বলেন, এ জনসংখ্যাতাত্ত্বি¡ক পুনর্বিন্যাস সম্ভবত টিকে যাবে। প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ সিরীয় উদ্বাস্তু হয়ে দেশের বাইরে চলে গেছে বা দেশেই অন্যত্র অবস্থান করছে। এরা নিজেদের বাসস্থানে পৌঁছাতে পারবে কিনা তা নিশ্চিত নয়। ২৫ বছর বয়স্ক বিদ্রোহী যোদ্ধা আবু মুসাব আল-মুকাসার তার জন্মস্থান হমস শহরে কখনও ফিরবেন কিনা এ বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। শহরটি এখন পুরোপুরি সিরীয় সৈন্যদের দখলে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সমর্থিত ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উল্লেখ করে মুকাসার বলেন, এ প্রশাসনের অঞ্চলে আমি কখনও ফিরে যেতে বা আলাউইটদের সঙ্গে পাশাপাশি অবস্থান করতে সমর্থ হব না। সংখ্যালঘু সমর্থিত এ সরকার সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীকে শাসন করে আসছে কয়েক দশক ধরে। কিন্তু বিভেদ এখন আগের যে কোন সময়ের চেয়ে আরও বেড়েছে। এ যোদ্ধা বলেন, অবশ্য এ সবকিছুই আমি আমার ছেলেকে বলব। যে তাদের প্রতি ঘৃণাপোষণ করবে যেমনটা আমাদের প্রতি করা হয়। আবু মুসাব একজন সুন্নি। তিনি ২০১৪ সালে উচ্ছেদ চুক্তি অনুসারে পার্শ্ববর্তী বিদ্রোহীদের গ্রামাঞ্চলের উদ্দেশে প্রথম হমস ত্যাগ করেন। গত সপ্তাহে বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে আরও একবার স্থান ত্যাগ করতে স্ত্রী, তিন বছর বয়সের ছেলে ও শিশু মেয়েকে নিয়ে তারা বাসে করে ইদলিব প্রদেশে চলে যান। হাজার হাজার সুন্নি বিদ্রোহী ও তাদের পরিবার প্রশাসন-পুনর্দখল এলাকা ত্যাগ করে ইদলিব চলে গেছে। ইদলিব এখন এ উদ্বাস্তুদের এক জঞ্জাল স্থানে পরিণত হয়েছে। জনগোষ্ঠীর সংখ্যাতাত্ত্বিক পরিবর্তন হয়ে গেছে এমনকি আমাদের অজ্ঞাতেই। এ যোদ্ধা বলেন, সিরিয়ায় নতুন গোষ্ঠীগত মানচিত্রের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। দেশ বিভক্ত হয়ে গেছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে এখন সুন্নিদের বাস, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রয়েছে কুর্দীরা এবং উপকূলীয় লাতাকিয়া, টারতুস ও হমসে রয়েছে আলাউইট ও শিয়া মুসলমানরা। সিরিয়ার জনসংখ্যা ও রাজনীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ফ্যাবরিস ব্যালাশে বলেন, সিরীয় বিদ্রোহীরা সংখ্যালঘু আলাউইট ও খ্রীস্টানদের অন্যত্র সরিয়ে দিয়েছে। এর কারণ, মনে করা হয় যে, তারা আমাদের সমর্থক। ২০১১ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে দেশটিতে মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ ছিল সুন্নি আরব। কুর্দী ছিল ১৫ শতাংশ এবং ধর্মীয় সকল সংখ্যালঘুদের সংখ্যা ছিল প্রায় ২০ শতাংশ। ব্যালাশে বলেন, প্রশাসন বিস্তৃত অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। কিন্তু আলাউইট, শিয়া ও খ্রীস্টানদের মধ্যে গড়ে ওঠা সংহতির কারণে আরও শক্তিশালী ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে সিরীয় জনসংখ্যার ৭০ শতাংশের বাস হচ্ছে প্রশাসন অঞ্চলে এবং তাদের এক-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যালঘু। ২০১৫ সালের পর হাজার হাজার লোক ফুয়া ও কাফরায়া থেকে দামেস্কে চলে গেছে। এরা স্থান ত্যাগ করেছে মাদায়া ও জাবাদালি ত্যাগ করে যারা সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে গেছে তাদের সঙ্গে বিনিময় ভিত্তিতে। আসাদ ২০১৭ তে এএফপির সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে স্বীকার করেছেন যে, স্থানত্যাগ বাধ্যতামূলক কিন্তু অস্থায়ী। কিন্তু সংখ্যালঘুরা বলছে, তারা ফিরে যাওয়ার কথা কল্পনা করতে পারে না। আব্বাস (৩৬) কয়েক বছর আগে দামেস্কের কাছে সাইয়িদা জয়নাবে চলে যান। কাফরায়ার অধিকাংশ লোক ফিরে যেতে চায় না। এ বছর তুরস্ক নেতৃত্বাধীন হামলা অভিযান কুর্দী সংখ্যাগরিষ্ঠের বাস আফ্রিন থেকে পার্শ্ববর্তী প্রশাসন জোনে চলে গেছে ১ লাখ ৩৭ হাজারের বেশি মানুষ। তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস বা দখল হয়ে গেছে। আফ্রিনে মূল বাসিন্দারা মনে করে ফিরে যাওয়া একটা সুদূরের স্বপ্ন। এক সাম্প্রতিক মন্তব্যে বলা হয়, সিরিয়ায় যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য দায়ী শিয়া ও সুন্নি হিসেবে বিভক্ত দেশটির জনগণ।
×