ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রীষ্মের ফুল সোনালু

সোনারঙে মোড়ানো বড় উঁচু গাছ, চোখ জুড়ানো সুন্দর

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২৪ মে ২০১৮

সোনারঙে মোড়ানো বড় উঁচু গাছ, চোখ জুড়ানো সুন্দর

মোরসালিন মিজান ॥ রিক্সার চাকা ঘুরছিল না। হলিক্রস কলেজের সামনে কয়েকটা প্রাইভেটকার। রাস্তার ওপর ফেলে রাখা হয়েছে। দায়িত্ব জ্ঞানহীন কার পার্কিংয়ের ফলে তীব্র যানজট। বিশৃঙ্খল অবস্থা। অথচ রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে পা তুলে ঘুমোচ্ছিল এক চালক। ছোকড়াটাকে ধমক না দিলেই নয়। ওর কাছাকাছি যাওয়ার অপেক্ষা করছিলাম। ঠিক তখন উল্টো কা-টি ঘটলো। কলেজ গেটের পাশে একটি গাছ। নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে থাকা গাছের দিকে তাকাতেই আটকে গেল চোখ। কারণ আর কিছু নয়, ফুলের সৌন্দর্য। সোনালি রঙের ফুল। থোকা থোকা ফুল মৃদু বাতাসে কী সুন্দর দুলছিল! দেখে মন গুন গুন করে গেয়ে ওঠেÑ এ কী সোনার আলোয় জীবন ভরিয়ে দিলে...। জীবন সত্যি যেন ভরে ওঠেছিল। পূর্ণতা পেয়েছিল। এমন হঠাৎ জুড়িয়ে যাওয়া কোমল মন নিয়ে, না, যুদ্ধ হয় না;বরং আরও কিছু সময় এভাবেই বসে থাকতে ইচ্ছে করে। উপভোগ করতে ইচ্ছে করে ফুলের সৌন্দর্য। হ্যাঁ, গ্রীষ্মে ফোটা ফুলটির নাম সোনালু। বৈশাখে ফোটা শুরু হয়েছিল। এখন জ্যৈষ্ঠ। ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে দারুণভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে ফুলটি। বড় উঁচু গাছ। সোনারঙে যেন মোড়ানো। অনেক দূর থেকে নজর কাড়ছে। দারুণ উপভোগ করছেন ফুলপ্রেমীরা। সোনালু ফুলের গাছ আম জাম গাছের মতোই উঁচু। ডালপালা চারপাশে ছড়ানো থাকে। বিশেষভাবে চেনা যায় ফুল ফোটার মৌসুমে। কাছ থেকে দেখলে ফুলটির পাপড়ির রং প্রায়শই কাঁচা হলুদ দেখায়। ঘন ফুলে ভর্তি গাছ দেখে মনে হয় কেউ বুঝি হলুদ রঙের কৌটো উপুড় করে দিয়েছে! গ্রীষ্মের প্রখর রোদ ফুলের গায়ে পড়লে রংটি সোনালি মনে হয়। উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মার বর্ণনা থেকে জানা যায়, সোনালুর ইংরেজী নাম ‘গোল্ডেন শাওয়ার।’ গাছের ওপর থেকে নিচের দিকে নেমে আসা সোনালু ফুলের মঞ্জরিকে একসঙ্গে শাওয়ারের জলধারার মতোই দেখায়। এ কারণে গোল্ডেন শাওয়ার নাম। অবশ্য বৈজ্ঞানিক নামের বেলায় এর ফল প্রাধান্য পেয়েছে। সে অনুযায়ী নামটিÑ কেসায়্যা ফিস্টুলা। এটি গ্রিক ভাষা থেকে নেয়া। ফিস্টুলা শব্দের অর্থ বাঁশি। বাঁশির মতো লম্বা ফলের জন্য এমন নামকরণ। সোনালু গাছ ২০ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। বাকল পুরো এবং মসৃণ। ফাল্গুনে ব্যাপকহারে পাতা ঝরে। চৈত্রে পাতাহীন শুকনো কাঠির মতো গাছ হয়। প্রাণহীন দেখায়। সোনালু ফুলের পাঁচটি পাপড়ি। দশটি পুংকেশর। ভেতরে সবুজ রঙের তিনটি গর্ভকেশর দৃশ্যমান। এগুলো অর্ধচন্দ্র আকৃতির। সোনালু বাংলাদেশে এসেছে পূর্ব ভারত থেকে। একে ‘বানরলাঠি’ বলেও ডাকা হয়! সোনালুর ফল ও গাছের পাতা বানরের প্রিয় খাবার। এ কারণেও একে ‘বানরলাঠি’ বলা হয়ে থাকে। সোনালুর ফলগুলো এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। ব্যাস দেড় থেকে দুই ইঞ্চি। ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ দেখতে হয়। পাকলে কালচে লাল। সোনালুর কিছু ঔষধি গুণও বিদ্যমান। ছাল, পাতা ও ফলের মজ্জা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ক্যান্সার ও ভাইরাস প্রতিরোধে কাজে আসে। এছাড়া ডিপথেরিয়া গ-মালা, কুষ্ঠরোগের ক্ষত চিকিৎসায় কার্যকর। ফলের মজ্জা কোষ্ঠকাঠিন্য, হজমের সমস্যায় উপকারী। সোনালু নিয়ে আরও কথা হতে পারে। তবে, শেষ কথাটি সৌন্দর্য। অসহ্য গরম গ্রীষ্মের প্রকৃতিকে কিছুটা হলেও সহনীয় করে তুলে সোনালু।
×