ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গল্প ॥ শুভেচ্ছা

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৯ মে ২০১৮

গল্প ॥ শুভেচ্ছা

তন্বীদের বাড়ির সামনে সুন্দর এক ফুলের বাগান। দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়। গাঁদা, গোলাপ, সূর্যমুখীসহ নানা রকমের বাহারি ফুল। যেন রঙের এক স্বপ্নপুরী। বাড়ির পাশ দিয়ে গেলে যে কেউ তন্বীদের ফুলের বাগান দেখে একবার থমকে দাঁড়ায়। তন্বীর বাবার সখ ফুলের বাগান করা। তার সঙ্গে তন্বীর ফুলের প্রতি ভালবাসা তন্বীর বাবার বাগানকে আরও সৌন্দর্যমন্ডিত করেছে। তন্বী প্রতিদিন সকালে বিকেলে রোজ দুইবার বাগানে পানি দেয়। ফোটা ফুলের সঙ্গে তন্বীর যেন এক ধরনের সখ্যতা গড়ে উঠেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে পানি নিয়ে ছুটে যায় বাগানে, আর মনে মনে ফুলের সঙ্গে কথা বলে ওঠে। তন্বী ফুলকে বলে, ‘আচ্ছা ফুল তুমি ফুটে খুব দ্রুত ঝরে যাও কেন’? ফুলও যেন তন্বীর সঙ্গে কথায় কথায় মেতে ওঠে। -‘মানুষের মধ্যে আসা যাওয়ার রীতির মতো আমাদের ফুলের মধ্যেও আসা- যাওয়ার আছে। অন্য ফুলকে ফুটতে সাহায্য করতে আমরা কিছুদিন সৌন্দর্য বিলিয়ে ঝরে যাই।’ - ‘তোমাদের এত রূপ, সুবাস আহা!’ ফুল বলে, ‘তোমাদেরও রূপ আছে, সুবাস আছে, তোমরা পড়ালেখা করে তা অর্জন কর। তখন ফুলের মতো সুবাসিত হয়ে ওঠে তোমাদের জীবন।’ তন্বী ফুলের গাছে পানি ঢালে আপন মনে যেন ফুলের সঙ্গে কথা বলে। নিজের হাত দিয়ে স্পর্শ করে অনুভব করে ফুলের ভালবাসা। পাশের স্কুলে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে তন্বী। পাশের বাড়ির তন্ময়ও একই শ্রেণীতে পড়ে। একবার সে তন্বীদের বাড়িতে এসে বেশ কয়েকটি ফুল ছিঁড়ে ফেলে। এতে ভারি মনে কষ্ট পায় তন্বী। তন্বীর মা এ নিয়ে তন্ময় এর মাকে নালিশও করেছিলো। সেই থেকে তন্ময়ের মা তন্ময়কে সহজে তন্বীদের বাড়িতে পা বাড়াতে দেন না। তন্বী স্কুলে গেলে স্কুলের শিক্ষক রশিদ স্যার তন্বীদের কাছে তাদের ফুল বাগানের খোঁজ নেন। তন্বীর বাবার আমন্ত্রণে একবার রশিদ স্যার তন্বীদের বাড়িতে এসে বাগান দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, তন্বীকে দেখলেই তিনি বাগানের কথা জিজ্ঞেস করেন। গতকাল ক্লাসে তিনি বললেন, ‘ছাত্রছাত্রীরা শোন তন্বীদের বাড়িতে কী সুন্দর একটা ফুলের বাগান আছে সবাই চেষ্টা করবে নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় এ রকম একটি বাগ গড়ে তুলতে।’ তন্বী সত্যি মনে মনে খুব গর্ব অনুভব করে। আজ সকালে তন্বী পানি দিতে ফুল বাগানে গেলে দেখে বেশ কয়েকটি গাছে ফুল নেই। কে যেন ভোরেই ফুল ছিঁড়ে নিয়ে গেছে। সদ্য ছিঁড়েছে দেখাই যাচ্ছে। তন্বী দৌড়ে গিয়ে মাকে বলে। মা বলে এটা নিশ্চয়ই তন্ময়ের কাজ, সে ছাড়া আর কেউ ফুল ছিঁড়তে আসবে না। তন্বীর মা বলে, ‘স্কুলে যাওয়ার সময় তোমাকেসহ ওদের বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞেস করব।’ তন্বী যথারীতি স্কুলে যেতে তৈরি। যাবার পথেই তন্ময়দের বাড়ি। মাসহ একসঙ্গে বের হলো তন্বী। তন্ময়দের বাড়িতে গিয়ে তন্বীর মা তন্ময়ের মাকে ফুল ছেঁড়ার কথাটি বললেন। তন্ময়ের মা বলেন, ‘ঠিক আছে ও তো স্কুলে চলে গেলো, আসলে জিজ্ঞেস করব।’ তন্বীকে স্কুলের পথে বিদায় দিয়ে তন্বীর মা বাড়িতে আসেন। তন্বী স্কুলে গিয়ে ক্লাসে বসল, একটু দূরেই তন্ময়। তন্বীর বিষণ্ণ মন। তন্ময় তন্বীর দিকে তাকাচ্ছে না। এমন সময় রশিদ স্যার ক্লাসে উপস্থিত। চারদিকে পিনপতন নীরবতা। রশিদ স্যার এসেই বলেন, ‘তন্বী তোমার ফুলের বাগানে ফুল ফোটে? –‘ফোটে স্যার, কিন্তু আজ সকালে কে যেন বেশ ক’টা ফুল ছিঁড়ে নিয়ে গেছে স্যার।’ - ‘তোমার কাউকে সন্দেহ হয়?’ ‘জি স্যার’। ‘কাকে’? ‘তন্ময় কে স্যার’। তন্ময়ের কোন সাড়া শব্দ নেই। তন্বীর কথার প্রতিবাদও নেই। রসিদ স্যার বলে ‘তন্ময় দঁাঁড়াও, তুমি ফুল ছিঁড়েছ সত্যি?’ কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে বলে, ‘জি স্যার’। ‘কেন কী জানতে পারি’? - ‘জি স্যার’। রশিদ স্যারের মাথা গরম হয়ে উঠছে। তন্ময় বলে, ‘স্যার আজ সকালে ঘুম থেকে ওঠেই বাবা মোবাইল খুলে দেখে আজ নাকি স্যার আপনার জন্মদিন, আমাকে বাবা বলেছে আপনাকে বাবার পক্ষ হতে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে। তাই স্যার কোথাও ফুল না পেয়ে তন্বীদের বাড়ি থেকে আপনার জন্য দুটো ফুল নিয়ে এলাম।’ তন্ময় ব্যাগ থেকে ফুল বের করে। রশিদ স্যার ভাবে ঠিকই তো আজ তো তার জন্মদিন, মনেই ছিল না। তন্বীর মুখও হাসিতে ভরে উঠল। সবই সমস্বরে বলে উঠল ‘হ্যাপি বার্থ ডে টু রশিদ স্যার।’ রশিদ স্যার অবাক, মুখে কোন কথা নেই। সব সামলিয়ে রশিদ স্যারও অবশেষে সকলের সঙ্গে হাসি-খুশিতে মেতে উঠলেন। অলঙ্করণ : আইয়ুব আল আমিন
×