ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পাইকারদের ভিড়

কেরানীগঞ্জে ১০ সহস্রাধিক কারখানায় ঈদের হাওয়া

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ১২ মে ২০১৮

কেরানীগঞ্জে ১০ সহস্রাধিক  কারখানায় ঈদের হাওয়া

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেরানীগঞ্জ, ১১ মে ॥ ঈদ মৌসুমকে সামনে রেখে কেরানীগঞ্জ পাইকারি জিন্স, থ্রি পিস, পায়জামা-পাঞ্জাবি ও ফতুয়া ব্যবসায়ীরা সম্ভাব্য ৫শ’ কোটি টাকা লেনদেনের টার্গেট নির্ধারণ করেছেন। ইতোমধ্যে ওই মার্কেটের ১০ সহস্রাধিক দোকানে ঈদের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। কারখানাগুলোতে দিন-রাত জিন্স, থ্রি পিস, পাজামা, পাঞ্জাবি ও ফতুয়া তৈরির কাজ চলছে। তাছাড়া বিলাশী টেক্সটাইল মিল লিমিটেডের তৈরি বি+প্লাস শাড়ির রমরমা ব্যবসা করছে সারা দেশে। তারা ঈদ বাজার সামলাতে বাজারে ছেড়েছে অর্ধ শতাধিক ডিজাইনের প্রিন্ট শাড়ি। কাজের চাপে কর্মচারীদের চোখেমুখে ঘুম নেই। কেরানীগঞ্জের পোশাক ব্যবসায়ীরা বলেন, বছরে প্রায় ২০ কোটি জিন্স, থ্রি পিস, পাজামা-পাঞ্জাবি ও ফতুয়া তৈরি হয় এই মার্কেটে। ওই জিন্স, থ্রি পিস, পাজামা-পাঞ্জাবি ও ফতুয়া ৬০ শতাংশ তৈরি হয় ঈদ উপলক্ষে। ব্যবসায়ীরা জানান, সারাদেশের চাহিদা মেটাতে তাঁরা একটি বড় অবদান রাখছেন। এখানে উৎপাদিত জিন্স, থ্রি পিস, পাজামা-পাঞ্জাবি ও ফতুয়া মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে সারাদেশের মার্কেট জমজমাট হয়ে উঠেছে এখানকার তৈরি পোশাকে। ইতোমধ্যে এসব জিন্স, থ্রি পিস, পাজামা-পাঞ্জাবি ও ফতুয়া রাজধানী ঢাকাসহ দেশের নামী-দামী সুপার মার্কেট ও শপিংমলে দেদার বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন কয়েক হাজার জিন্স, থ্রি পিস, পাজামা-পাঞ্জাবি ও ফতুয়া খরিদ করে নিয়ে যাচ্ছে পাইকাররা তাদের পছন্দমতো। এখানে তৈরি জামা কাপড় দামে কম, দেখতে সুন্দর এবং টেকসই। যে কারণে কেরানীগঞ্জের তৈরি পোশাকের সুনাম রয়েছে দেশব্যাপী। এ ব্যাপারে পূর্ব আগানগরের বিক্রমপুর প্লাজার লাকী গার্মেন্টেসের স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান বলেন, এই মার্কেটে সকল প্রকার রুচিসম্মত এবং সুলভমূল্যে পাইকারি জিন্স প্যান্ট বিক্রি করা হয়। এবং চায়নার তৈরি রেডিমেট জিন্স প্যান্টের চাহিদা অনেক বেশি। যা আমরা সাপ্লাই করে কুলতে পারছি না। চায়নার আমদানিকৃত জিন্স প্যান্টগুলো প্রকারভেদে ছোট একটি প্যান্টের মূল্য ১২শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা, মাঝারি সাইজের ২ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫শ’ টাকা এবং বড় সাইজের মূল্য ৩ হাজার থেকে ৫হাজার টাকা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। নূর জেনারেল ট্রেডিংয়ের মালিক মোঃ সেলিম আহমেদ বলেন, আমার কারখানায় তৈরি দেশী একটি জিন্স প্যান্টের মূল্য প্রকারভেদে ৭শ’ টাকা থেকে ১৮শ’ টাকা পর্যন্ত। আশা করছি অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর ব্যবসা ভাল হবে। হাজী করিব মার্কেটের আল-রুমী গার্মেন্টসের মালিক রাজ্জাক খান বলেন, আমার গার্মেন্টসের তৈরি পাজামা, পাঞ্জাবি ও ফতুয়ার রং পাকা, টেকসই ও বাহারি ডিজাইনের হওয়ায় মফস্বলের পাইকারদের মন হরণ করেছে। শব-ই-বরাতের পরে মফস্বলের পাইকাররা আমার গার্মেন্টসের তৈরি পোশাক একাধিকবার খরিদ করে নিয়ে গেছে। আমার গার্মেন্টের তৈরি পাঞ্জাবির মূল্য প্রকারভেদে বড় ১ হাজার ৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। মাঝারি ৯শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা পর্যন্ত এবং ছোট সাইজের বিক্রি হচ্ছে ৫শ’ থেকে ৯শ’ টাকা পর্যন্ত। লাইলী গার্মেন্টসের মালিক মোঃ রিপন তালুকদার বলেন, ভারতীয় থ্রী পিসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে আমার কারখানায় তৈরি থ্রি পিস। এ বছর ঈদে আমার কারখানায় তৈরি ৯ ডিজাইনের থ্রি পিস তৈরি করেছি যা ইতোমধ্যেই মফস্বলের পাইকাররা খরিদ করে নিয়ে গেছে। মানে ভাল এবং দাম কম হওয়ায় প্রচুর বিক্রি হচ্ছে। আশা করি এ বছর ব্যবসায় টার্গেটমতো পৌঁছতে পারব। এ ব্যাপারে বিলাশী টেক্সটাইলের ম্যানেজার পারভেজ আহমেদ টুটুল বলেন, এ বছর রোজার ঈদে অর্ধশতাধিক নতুন ডিজাইনের শাড়ি মার্কেটে ছেড়েছি। এ ছাড়া আগের অর্ধশতাধিক হিট ডিজাইন ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করার জন্য পুনরায় মার্কেটে ছেড়েছি। দেশের সিংহভাগ সুতি প্রিন্ট শাড়ির চাহিদা কেরানীগঞ্জের মিলগুলো থেকে মেটানো হয়। তাছাড়া তাদের মিল থেকে উৎপাদিত বি+প্লাস শাড়ি দেশ ও বিদেশে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে। বি+প্লাস শাড়ি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশী মহিলাদের মনও জয় করে নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, তার মিলের তৈরি শাড়ি বর্তমানে আমেরিকা, লন্ডন, ইতালি, জার্মানি, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মধ্যপ্রাচ্য ও শ্রীলঙ্কায় যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। একটি শাড়ির মূল্য সর্বনিম্ন ৯শ’ টাকা এবং সব্বোর্চ ৩ হাজার ৫শ’ টাকা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। শাড়িগুলো প্রকারভেদে খুচরা বিক্রি করছে ১২শ’ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত।
×