ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল

অর্থ হাতিয়ে নেয়ার তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়নি আজও

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ১২ মে ২০১৮

অর্থ হাতিয়ে নেয়ার তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়নি আজও

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের জমাদ্দার সরদার ইমরান হাসান টপির বিরুদ্ধে জখমি সনদ দেয়ার নামে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় নির্ধারিত সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়নি। বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ লিটু জানিয়েছেন, তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে কমিটিকে তাগিদ দেয়া হয়েছে। কমিটির সদস্য সচিব ও আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডাঃ ওয়াহিদুজ্জামান ডিটু জানান, তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয়েছে। আগামী ৩/৪ দিনের মধ্যে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। সূত্রে জানা গেছে, ১০ এপ্রিল চৌগাছা উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের আড়শিংড়ী গ্রামের বাসিন্দা আবু তাহের (৭৫) জমিজমার জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত হন। তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির সময় জরুরী বিভাগে দায়িত্বে ছিলেন ডাঃ কল্লোল কুমার সাহা। ১২ এপ্রিল হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। ওই দিনই জখমি সনদের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু তাদের সঙ্গে গোপন চুক্তি করেন জখমি সনদ সিন্ডিকেটের সদস্য হাসপাতালের জমাদ্দার সরদার ইমরান হোসেন টপি। তিনি সনদপত্রটি গ্রিভিয়াস করার নামে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন। জমাদ্দার সরদার টপি এ সময় তিনি নিজেকে হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার পরিচয় দেন। প্রথম কিস্তিতে রোগীর স্বজনদের কাছে থেকে টপি সাড়ে ১২ হাজার টাকাও হাতিয়ে নেন। দুই দফায় ঘুষের টাকা পরিশোধ করা হলেও প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে রোগীর স্বজনদের ঘোরানো হয় নানা অজুহাতে। ভুক্তভোগীরা ২১ এপ্রিল টাকা নিয়ে সনদ দিতে টালবাহানার বিষয়টি অবগত করেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ লিটুকে। এ সময় তত্ত্বাবধায়ক জখমি সনদ সিন্ডিকেটের ২ সদস্যকে ধরেন । এ ঘটনায় তত্ত্বাবধায়কের নির্দেশে ২৩ এপ্রিল সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডাঃ আব্দুর রহিম মোড়লকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুজন হলেন অর্থোপেডিক বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডাঃ শেখ মোহাম্মদ আলী ও আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডাঃ ওয়াহিদুজ্জামান ডিটু। ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। বিষয়টি নিয়ে ২৬ এপ্রিল কমিটি তদন্ত বোর্ডে হাজির হন ডাঃ কল্লোল কুমার সাহা, টেলিফোন অপারেটর হাসানুর রহমান আসলাম ও জমাদ্দার সর্দার ইমরান হাসান টপি ও রোগী আবু তাহেরসহ স্বজনরা। তদন্ত বোর্ডে ভুক্তভোগীরা সাক্ষ্য দেন ইমরান হাসান টপি নিজেকে ওয়ার্ড মাস্টার পরিচয়ে জখমি সনদ দেয়ার নামে প্রথম দফায় সাড়ে ১২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। তবে তদন্ত বোর্ডে ইমরান হাসান টপি ৮ হাজার টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তদন্ত কার্যক্রম শেষ হলেও অজ্ঞাত কারণে নির্ধারিত সময়ে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়নি কমিটি। যা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, ইমরান হাসান টপি খুবই ধুরন্ধর। তিনি কৌশলে কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করায় খুবই পটু। এর আগেও নানা অপরাধ করেও তিনি ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু জখমি সনদ দেয়ার নামে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় হাতেনাতে ধরা পড়ার পর তার প্রতারণা ফাঁস হয়ে গেছে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ লিটু জানান, তিনি দায়িত্বে থাকাকালীন হাসপাতালে কাউকে অনিয়ম করার সুযোগ দেবেন না। ইমরান হাসান টপির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে কমিটিকে জোরালো তাগিদ দেয়া হয়েছে।
×