ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব

খুব শীঘ্রই কোটা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৯ মে ২০১৮

খুব শীঘ্রই কোটা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ খুব শীঘ্রই কোটা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মোজাম্মেল হক খান বলেছেন, কোটা নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়টি সরকারের চূড়ান্ত বিবেচনাধীন। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। শিক্ষার্থীরা ৭ মে’র মধ্যে কোটা নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির সময় বেঁধে দিয়ে ওই পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচী স্থগিত করেছিলেন। এর মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় ফের আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তারা। আজ বুধবার (৯ মে) দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে মানববন্ধন কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দিয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এমন পরিস্থিতিতে কোটার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক খান বলেন, কোটা বাতিলের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী যে মন্তব্য বা অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন বা নির্দেশ দিয়েছেন সেটা চূড়ান্ত রূপ। প্রজ্ঞাপন বা সার্কুলার জারির কাজটা একটু বাকি আছে। সেটা কোন পর্যায়ে আসবে সেজন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে এটা কি বলা যায় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের চূড়ান্ত বিবেচনাধীন আছে। কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সোমবার (৭ মে) পর্যন্ত স্থগিত ছিল- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিনিয়র সচিব বলেন, যখন ছাত্ররা আন্দোলন করছিল, তখন সরকারের প্রতিনিধি গেলে তাদের বলা হয় ৭ মে পর্যন্ত এক মাস আন্দোলন স্থগিত করা হবে। দেখা গেল সেই কথা বলার পরও আন্দোলন থামেনি। তা হলে আমার বিবেচনায় ৭ তারিখ তো আর থাকল না। তারা যদি সেদিন আন্দোলন বন্ধ করত তাহলে আজকে বলা যেত ৭ তারিখে কেন হলো না। তিনি বলেন, এ বিষয়টা সরকারের মাথার মধ্যে আছে। সরকারের বিবেচনায় আছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলেই সেটা বাস্তবায়ন করা হবে। কোটার বিষয়টি দেখার জন্য কমিটি গঠনের কোন নির্দেশনা এসেছে কি নাÑ জানতে চাইলে সিনিয়র সচিব বলেন, এ বিষয়ে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। কমিটি লাগলে করব, আমাদের মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হলেও করব। সরকারপ্রধান যেভাবে বলবেন সেভাবে আমরা ব্যবস্থা নেব। পুরো প্রক্রিয়াটি কী হবে জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক খান বলেন, এত তো খোঁচানো যাবে না। আমি এখন একটা বললাম, সেটা থেকে কালকে একটু ব্যত্যয় হলো, পরে বলবেন, গতকাল এটা বলেছিল আজকে আবার এটা হচ্ছে। এত এ্যাডভান্স কথা বলার সুযোগ নেই। কোটা বাতিল হলেও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হচ্ছে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন বাতিলের কথা বলেছেন তার মুখ থেকেই আমরা শুনেছি তিনি সংসদে বলেছেন, যারা নৃগোষ্ঠী ও যারা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। ব্যবস্থার রূপরেখা আমরা এখনও সেভাবে প্রকাশ করিনি। সেটি আমাদের মাথায় আছে। প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই সেটা চিন্তা করছেন। কোটা নিয়ে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি হবে এটা কি বলা যায়- এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, আমরা তো আশাবাদী, দ্রুত হবে। দ্রুত হওয়াই ভাল। তিনি বলেন, আমরা প্রতিদিনই এটা নিয়ে কাজ করি। বর্তমানে সরকারী চাকরিতে সংরক্ষিত কোটা ৫৬ শতাংশ। বাকি ৪৪ শতাংশ নেয়া হয় মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে। বিসিএসে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০, জেলা কোটায় ১০, নারী কোটায় ১০ ও উপজাতি কোটায় ৫ শতাংশ চাকরি সংরক্ষণ করা আছে। এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সে ক্ষেত্রে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে। এই কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরেই আন্দোলন করছিলেন শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করছিলেন তারা। ৯ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেন কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনকারীরা। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কোটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ৭ মে পর্যন্ত সময় নেন ওবায়দুল কাদের। কিন্তু এরপরের দিনও আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল বুধবার জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের কথা বলেন। তিনি বলেন, কোটা নিয়ে যখন এতকিছু, তখন কোটাই থাকবে না। কোন কোটারই দরকার নেই। যারা প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তাদের আমরা অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দেব। কিন্তু এরপর প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী কোটা নিয়ে কোন প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে ফের সোচ্চার হন শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় গত ২৭ এপ্রিল কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানকের সঙ্গে বৈঠক করেন। অস্ট্রেলিয়া সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে- এই আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বৈঠকে এক মাস কোটাবিরোধী আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
×