ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভোর রাতের ছেলে দুপুরে হয়ে গেছে মেয়ে!

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৩ মে ২০১৮

 ভোর রাতের ছেলে দুপুরে হয়ে গেছে মেয়ে!

আজাদ সুলায়মান ॥ বার বার ভুল। বার বার মাশুল। তবুও থামছে না ভুল ত্রুটির কা-। ঘটনাস্থল ঢাকা মেডিক্যাল। এবার যেটি ঘটেছে সেটি শুধু ভুল নয়- তুঘলকি কা-। বিষয়টি এক গর্ভবতীর বাচ্চা প্রসবের পর বলা হলো তার ছেলে হয়েছে। কাগজপত্রে লেখাও হয়েছে ছেলেই। পরে যখন ডাক্তারের কাছে নেয়া হলো তখন দেখা গেল শিশুটি ছেলে নয় মেয়ে। এটি শুনে আসমান থেকে পড়ার অবস্থা শিশুটির মা-বাবা ও স্বজনদের। এ ঘটনায় চলছে তোলপাড়। এখন হাসপাতাল বলছে এটা শুধু ভুলই নয়- কা-জ্ঞানহীন মহাভুল। কিন্তু শিশুটির বাবা-মা এখন এটা মানতে নারাজ। তাদের দাবি শিশুটি ছেলেই। বেশি টাকার লোভে এখন তাদের মেয়ে গছানোর চেষ্টা চলছে। এই ভুলের যখন কোন সমাধানই মিলছে না তখন সিদ্ধান্ত হলো শিশুটির ডিএনএ টেস্টের। আপাতত এভাবেই মিটমাট করা হয়েছে এই অবিশ্বাস্য কা-ের। ঘটনাটি ঘটেছে মে দিবসে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের শিশু বিভাগের ২১২ নম্বর ওয়ার্ডে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখনও জোরেশোরেই দাবি করছে এটা ¯্রফে একটা ভুল। হাসপাতাল প্রশাসন শাখা সূত্রে জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে খুকি নামে এই গর্ভবতীকে ভর্তি করা হয়। তাকে সিট দেয়া হয় ১৯ নম্বর বেডে। রাত তখন তিনটা ২৭। তিনি জন্ম দেন একটি সন্তান। তাৎক্ষণিক তাকে জানানো হয় নবজাতকটি ছেলে। ধাত্রী নিজে শিশুটিকে কোলে নিয়ে তার বাবার কাছে যান। ছেলে সন্তানের বাবা হওয়ার খুশিতে টগবগ হয়ে ৫শ’ টাকা বখশিশও দেন শরীফ। যদিও ধাত্রীর সাফ দাবি ছিল- একটা ছেলে হয়েছে মাত্র দুশ’ কেন পাঁচ শ’ টাকা দেবেন। তাতেই রাজি শরীফ। আনন্দের আতিশয্যে শরীফ ছেলেটাকে কোলে নিয়ে যান ২১৪ নম্বর রুমে- অবজারভেশন করাতে। তিনি একটি নোটও দেন ডাক্তারের হাতে। তাতেও লেখা শিশুটির লিঙ্গ পুরুষ। কিন্তু এই নোট পেয়ে ডাক্তার অবাক। বললেন আপনার কোলে তো দেখছি মেয়ে-আর নোটে লেখা ছেলে! এমন গরমিল করলেন কিভাবে? এমনটি শুনে শরীফের হাতপা কাঁপা শুরু। তিনিও বিশ্বাস করতে চাননি কেন এমন হলো। ডাক্তারের আদেশ-যান আপনার বাচ্চা নিয়ে আসেন। এই মেয়ে যার- তাকে দিয়ে আসেন। এটা কোথা থেকে এনেছেন। এমন ভুল করলেন কিভাবে? হন্তদন্ত হয়ে শরীফ ছুটে যান ২১২ নম্বর রুমে। নার্সদের কাছে জানতে চান তাদের বাচ্চা কোথায়? কোলের শিশুটি তাদের বাচ্চা নয়। এ কথা শুনে নার্সরাও বিস্মিত। তারা না পারছিলেন জবাব দিতে না পারছিলেন সমাধান দিতে। পেরেশান হয়ে শরীফ আবার দৌড়ান ডাক্তারের কাছে। তখন তাকে বলা হলো, ছেলে নয়-এই মেয়েই তার। চিকিৎসকরা ভুল করে ছেলে লিখে ফেলেছে। এ জন্য কিছু করার নেই। ডাক্তারের এ কথা মেনে নিতে পারেননি শরীফ। এ নিয়ে শুরু হয় বচসা-তর্কাতর্কি। তিনি যথেষ্ট তথ্য প্রমাণাদি দিয়ে ডাক্তারকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। বললেন, আমি আমার স্ত্রীকে এই হাসপাতালে আনার আগে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়েছিলাম। সেখানকার ডাক্তাররা আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে দেখেন পেটের বাচ্চার অবস্থা ক্রিটিক্যাল। সেজন্য তারা সেখানে প্রসব করানোর সাহস করেনি। এ জন্য তারা ঢামেকে রেফার করেন। এখানে ওই হাসপাতালের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজগুলোও ঢাকা মেডিক্যালে দেখানোর পর রহস্যজনক কারণে নার্সরা টানাটানি করে ছিঁড়ে ফেলেছে। ওই কাগজপত্র আমাকে ফেরত দেয়া হয়নি। ছেঁড়ার পর সেগুলোও লুকিয়ে ফেলে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে- যদি আমার ছেলে সন্তান না হয় তবে কেন তারা কাগজপত্র আমাকে দেয়নি। কেন ছিঁড়ে ফেলা হলো? প্রথমে কাগজে ছেলে লিখে এক ঘণ্টা পরে ওই কাগজে কেন ছেলের নাম কেটে মেয়ে লেখা হলো? এটা ভুল না জালিয়াতি ? শরীফের এসব প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি ডাক্তাররা। এ নিয়ে তর্কবিতর্ক চলে ভোর থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত। কিন্তু তিনি দমার পাত্র নন। এর শেষ দেখতে চান। ডাক্তারের সঙ্গে তর্কে পেরে না উঠলেও নিজের থেকে দাবি জানালেন- ঠিক আছে। এই বাচ্চার ডিএনএ টেস্ট করানো হোক। তখন বোঝা যাবে এটা আমাদের নাকি অন্য কারো বাচ্চা। এমন অকাট্য যুক্তিতে ডাক্তাররা কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। যদিও হাসপাতালের উপ-পরিচালক শাহ আলম তালুকদার বলেন, শরীফের বাচ্চা বদলের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। তার অভিযোগ পেয়ে সকাল থেকেই বিভিন্নভাবে তদন্ত করলাম। কোনভাবেই অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়নি। কারণ গত ২৯ এপ্রিল দুপুর বারোটা থেকে পরের দিন অর্থাৎ ৩০ এপ্রিল দুপুর বারোটা পর্যন্ত হাসপাতালের নারী ও নবজাতক ওয়ার্ডে মোট ২৫ রোগী ভর্তি হয়েছিল। তাদের মধ্যে ১৭ জন নরমাল ডেলিভারি এবং ৬ জনের বিভিন্ন অপারেশন করা হয়েছে। বাকি একজনকে ডিএনসি করা হয়েছে। এছাড়া ৩০ এপ্রিল রাত বারোটা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত হাসপাতালে মাত্র দুইজন রোগীর ডেলিভারি হয়েছে। একজন নরমাল ডেলভারি অপরজন সিজারিয়ান। নরমাল ডেলিভারি রোগীটাই হলেন খুকি। তার যে সময় ডেলিভারি হয় সে সময় অন্য কারও ডেলিভারি হয়নি। কারণ তার ডেলিভারির তিনঘণ্টা পর সিজারিয়ান রোগী দুটি যমজ সন্তান জন্ম দেয়। এতে স্পষ্ট যে ওই মেয়ে বাচ্চাটি তাদেরই। তবে চিকিৎকরা হয়তো ভুল করে মেয়ের জায়গায় ছেলে লিখে ফেলেছেন। এদিকে এ বিষয়ে অপর এক ভুক্তভোগী হাসমত হাসপাতাল গেটে সাংবাদিকদের জানান, এখানে শরীফ ও ডাক্তার উভয়েরই অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ আমলে নেয়ার মতো। এটা ধাত্রীরও ভুল হতে পারে। আবার টাকার বিনিময়ে ছেলেকে অন্যত্র দিয়ে মেয়ে গছিয়ে দেয়া হতে পারে। ঢাকা মেডিক্যালে দুটোই ঘটছে অহরহ।
×