ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা দিবস

স্বাস্থ্যসেবায় দেশ-বিদেশে অনন্য নজির গড়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৬ এপ্রিল ২০১৮

স্বাস্থ্যসেবায় দেশ-বিদেশে অনন্য নজির গড়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক

নিখিল মানখিন ॥ দেশের স্বাস্থ্যসেবার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে নজির গড়েছে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’। কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংসিত। বিশ্বের অনেক দেশ কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম রোল মডেল বিবেচনায় নিয়ে নিজ দেশে তা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে প্রতি ছয় হাজার জনের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা হিসেবে বর্তমানে সারাদেশে ১৩ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। গত ৯ বছরে (২০০৯-১৭) সারাদেশে প্রায় ৬৫ কোটির বেশি নারী, পুরুষ ও শিশু কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শন ও চিকিৎসা সেবা নিয়েছে। একই সময়ে দেড় কোটির বেশি রোগীকে জরুরী ও জটিল রোগীকে উন্নত ব্যবস্থাপনার জন্য উচ্চতর পর্যায়ের হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে গড়ে ৩৮ সেবাগ্রহীতা যাচ্ছেন। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি অনেক কমিউনিটি ক্লিনিকে গর্ভবতী মায়েদের স্বাভাবিক ডেলিভারি হচ্ছে। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে জাতীয় কমিউনিটি ক্লিনিক দিবস। ২০০০ সালের এই দিনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী ইউনিয়নের গিমাডাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিক সেবা কার্যক্রমের সূচনা করেন। স্বাস্থ্য বিভাগ ২০০৯ সাল হতে ২৬ এপ্রিলকে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে আজ রাজধানীসহ সারাদেশে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবাগ্রহীতা ও সেবার মান বেড়েই চলেছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বিশ্বের মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রকল্প। ক্লিনিকের সুফল ভোগ করছে দেশের সাধারণ মানুষ। বাড়ির পাশেই বিনামূল্যে মিলছে স্বাস্থ্যসেবা। কমিউনিটি ক্লিনিকের বিভিন্ন কার্যক্রম, অগ্রগতি ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় কমিউনিটি বেজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) অপারেশন প্ল্যানের লাইন ডিরেক্টর ডাঃ আবুল হাশেম খান জনকণ্ঠকে জানান, কমিউনিটি ক্লিনিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত একটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কার্যক্রম যা বর্তমান সরকারের সাফল্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, দেশে-বিদেশে নন্দিত। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ জনগণ কাছাকাছি কমিউনিটি ক্লিনিক হতে সমন্বিত স্বাস্থ্য, পরিবার-পরিকল্পনা ও পুষ্টি সেবা পাচ্ছেন। এটি জনগণ ও সরকারের যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়িত একটি কার্যক্রম। বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচীতে কমিউনিটি বেজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) অপারেশনাল প্ল্যান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ডাঃ আবুল হাশেম খান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগকে আরও বেগবান করতে কমিউনিটি ক্লিনিককে ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ‘শেখ হাসিনার অবদান, কমিউনিটি ক্লিনিক বাঁচায় প্রাণ’ স্লোগানটি কমিউনিটি ক্লিনিকের ব্র্যান্ডিং কার্যক্রমে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বিদ্যমান কিছু সমস্যা সমাধানে চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় সিবিএইচসি অপারেশন প্ল্যানে কমিউনিটি ক্লিনিক কেন্দ্রিক বিভিন্ন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। লাইন ডিরেক্টর ডাঃ আবুল হাশেম খান আরও বলেন, জনমুখী এ কার্যক্রম ১৯৯৬ সালে গৃহীত হয়, বাস্তবায়ন শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দেশে ১০ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মিত ও অধিকাংশই চালু করা হয় এবং জনগণ সেবা পেতে শুরু করে। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকার ক্ষমতায় এলে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থা ২০০৮ সাল পর্যন্ত চলমান থাকে। এ দীর্ঘ সময়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় এবং নদীভাঙ্গন ও অন্যান্য কারণে ৯৯ কমিউনিটি ক্লিনিক ধ্বংস হয়ে যায়। টিকে থাকে ১০ হাজার ৬২৪টি ক্লিনিক। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে রিভাইটালাইজেশন অব কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ইনিশিয়েটিভস ইন বাংলাদেশ (আরসিএইচসিআইবি) শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিক পুনরুজ্জীবিতকরণ কার্যক্রম শুরু হয়। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সময়ে নির্মিত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর প্রয়োজনীয় মেরামত, জনবল পদায়ন, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ এবং নতুন নির্মিত কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যায়ক্রমে চালু করা হয়। এটি ২০১৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে জুলাই ২০১৫ হতে সিবিএইচসি অপারেশনাল প্ল্যানের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিকের সব কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়ে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়। বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচীতে কমিউনিটি বেজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) অপারেশনাল প্ল্যান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ডাঃ আবুল হাশেম খান আরও বলেন, অনেক সফলতা থাকার পর কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম বাস্তবায়নে কিছু সমস্যা ও দুর্বলতা রয়েছে। জনবল রাজস্বকরণ না হওয়াতে অনেক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সিএইচসিপি চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে অন্যত্র যোগদান করছেন।
×