ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রাজীবের মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২১ এপ্রিল ২০১৮

 রাজীবের মৃত্যু

শেষ পর্যন্ত না ফেরার দেশে চলে গেলেন রাজীব। টানা ১৩ দিনের বেঁচে থাকার লড়াইয়ে হার মানল ২২ বছর বয়সের এই তরুণ। সেই সঙ্গে অবসান ঘটল একটি সংগ্রামী জীবন আর অদম্য স্বপ্নের। বাবা-মা হারানো এই তরুণ একরাশ স্বপ্ন নিয়ে রাজধানীতে এসেছিলেন। যন্ত্রদানবের পেরোয়া প্রতিযোগিতায় অকালে চলে যেতে হলো তাকে। গোটা পরিবারে এখন হাহাকার। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন কত মানুষই তো মারা যায়, কিন্তু রাজধানীর মহাখালীর সরকারী তিতুমীর কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীবের মৃত্যু ছিল একেবারেই অন্য রকম। পিতৃমাতৃহীন দরিদ্র পরিবারের এই অসহায় তরুণ একাই দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন। সেই সঙ্গে স্বপ্ন দেখছিলেন ছোট দুই ভাইকে নিয়ে। এই মৃত্যু তার সেই স্বপ্নকে নিঃশেষ করে দিল। তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় মা ও অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় বাবাকে হারিয়েছিলেন তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেন। এরপর ছোট দুই ভাই মেহেদি ও আবদুল্লাহকে নিয়ে জীবনযুদ্ধে নেমেছিলেন একুশ বছরের এই এতিম। কখনও খালার বাসায় থেকে, কখনও টিউশনি করে ও কাজ করে নিজে পড়াশোনা করেছেন এবং ভাইদের পড়িয়েছেন। রাজীবের স্বপ্ন ছিল- বিসিএস দিয়ে শিক্ষা ক্যাডারে যোগ দিয়ে নামকরা শিক্ষক হবেন। ছোট দুই ভাইকে পড়াশোনা করিয়ে বড় করবেন। থাকবেন তিন ভাই মিলে। অন্যান্য আত্মীয়স্বজন- যাদের জীবন অন্ধকারের মুখে, আলোকিত করবেন তাদেরও। কিন্তু সেই স্বপ্নদ্রষ্টা রাজীব দুই বাস চালকের নিষ্ঠুর খেয়ালখুশির শিকার হয়ে প্রথমে হাত হারিয়েছেন, তারপর জীবন। রাজীবের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামে। উল্লেখ্য, গত ৩ এপ্রিল বিআরটিসির একটি দোতলা বাসের পেছনের গেটে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন তিনি। ওই সময় তার হাতটি সামান্য বাইরে বেরিয়ে ছিল। হঠাৎই পেছন থেকে একটি বাস বিআরটিসির বাসটিকে পেরিয়ে যাওয়ার বা ওভারটেক করার জন্য বাঁ দিকে গা ঘেঁষে পড়ে। দুই বাসের প্রচণ্ড চাপে রাজীবের হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দু’-তিনজন পথচারী দ্রুত তাকে পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু চিকিৎসকরা চেষ্টা করেও বিচ্ছিন্ন সেই হাতটি রাজীবের শরীরে আর জুড়ে দিতে পারেননি। সড়কে অহরহ প্রাণ হরণ হচ্ছে এ দেশে। কত সহজে ও তুচ্ছ কারণে মানুষকে মেরে ফেলা হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনার নামে। শুধু দুই বাসের প্রতিযোগিতায় প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীতে মানুষ আহত বা নিহত হচ্ছে। মহাসড়কগুলোতে এমন ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। রাজীবের নির্মম প্রাণহানি সড়কের অন্যান্য দুর্ঘটনার চেয়ে মর্মান্তিক। যানবাহন চালকদের বেপরোয়া পাল্লা দেয়া বন্ধ না হলে এবং কর্তৃপক্ষ কঠোরভাবে এ ব্যাপারে দায়িত্ব পালন না করলে রাজীবের মতো আরও বহু সম্ভাবনাময় জীবন এভাবে হারাতে হবে। তার এই ক্ষতিপূরণের দায় বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ এবং আরেকটি পরিবহন মালিককে বহন করতে হবে। এর আগে আদালত এ ধরনের ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে। এ ব্যাপারে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। একই সঙ্গে তার মৃত্যুর জন্য দায়ী চালকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
×