ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খোদ সরকারের মধ্যেই স্বাধীনতা বিরোধী চক্র সক্রিয়- শর্ষেয় ভূত!

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৭ এপ্রিল ২০১৮

খোদ সরকারের মধ্যেই স্বাধীনতা বিরোধী চক্র সক্রিয়- শর্ষেয় ভূত!

শংকর কুমার দে ॥ শর্ষেয় ভূত! সরকারী কর্মকর্তাদের মধ্যেই জাতীয় চেতনাপরিপন্থী স্বাধীনতাবিরোধী চক্র সক্রিয়। পহেলা বৈশাখে এই ধরনের স্ট্যাটাস দেয়ার অভিযোগে এক কারা কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা পহেলা বৈশাখ, ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস, নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক ছবি পোস্ট ও কমেন্ট দিচ্ছে। বেশ কিছু আইডি থেকে রাষ্ট্রের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, শিক্ষাবিদ, লেখক, বুদ্ধিজীবীদের টার্গেট করে সাইবার জগতে চালানো হচ্ছে বি™ে^ষপূর্র্ণ প্রচার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এই ধরনের অপতৎপরতার ঘটনা ঘটিয়েছে গত পহেলা বৈশাখে, তাও আবার সরকারী কর্মকর্তার পদে থেকেই। সরকারী কর্মকর্তার পদে থেকে গেল পহেলা বৈশাখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জাতীয় চেতনাপরিপন্থী বিদ্বেষপূর্ণ স্ট্যাটাস দেয়ার বিষয়টি তদন্ত করছেন পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আবিদ আহমেদ লিটন নামে ডেপুটি জেলার হিসেবে কারা ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে দায়িত্বরত কর্মকর্তা গত ১৩ এপ্রিল দেয়া এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে পহেলা বৈশাখের লাল-সাদা রঙের সঙ্গে শাঁখা-সিঁদুরের তুলনা করেছেন। ছায়ানটের অনুষ্ঠানকে সূর্য-পূজারীদের কাজ বলে আখ্যায়িত করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘এসো হে বৈশাখ...’ আর মঙ্গল শোভাযাত্রাকে তুলনা করেছেন শিরকের সঙ্গে। তার এই ফেসবুক স্ট্যাটাস অসংখ্য শেয়ার ও কপি করে শেয়ার দিয়েছেন অনেকে। কারা গোয়েন্দা ইউনিটের কর্মকর্তা আবিদ গত ১৩ এপ্রিল ফেসবুকে এক স্ট্যাটাটে বর্ষবরণের উৎসবকে হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি এবং মঙ্গল শোভাযাত্রাকে শিরকের সঙ্গে তুলনা করে তাতে অংশ না নিতে সবাইকে আহ্বান জানানোয় তাকে বদলি করা হয়েছে। কারাগারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসার পর আবিদকে ইন্টেলিজেন্স থেকে সরিয়ে নারায়ণগঞ্জে ডেপুটি জেলার হিসেবে বদলি করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। কারাগারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচরে আসলে আবিদ তার স্ট্যাটাসটি মুছে দেয়। কারা সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, সরকারী চাকরিতে থাকা কোন কর্মকর্তা এমন বিদ্বেষমূলক স্ট্যাটাস দিতে পারেন না। আবিদ আহমেদ লিটন এই স্ট্যাটাসের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক চেতনার পহেলা বৈশাখের উৎসব নিয়ে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করেছেন। তার এই কর্মকা- কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কারা অধিদফতরের পক্ষ থেকে এ বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল-মামুনের সই করা একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে ‘নীতিমালা অনুসরণ’ শীর্ষক ওই নির্দেশনায় কারা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফেসবুকে পোস্ট ও ছবি আপলোডের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে ২০১৬ সালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের নির্দেশিকা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ-আল-মামুন গণমাধ্যমে বলেছেন, সরকারী কর্মকর্তা হয়ে বৈশাখ বিরোধী এমন কোন পোস্ট কেউ দিতে পারে না। তার ফেসবুক আমরা ঘেঁটে দেখে বিষয়টি নিয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ এপ্রিল দেয়া এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে পহেলা বৈশাখের লাল-সাদা রঙের সঙ্গে শাঁখা-সিঁদুরের তুলনা করেছেন এক কারা কর্মকর্তা। ডেপুটি জেলার হিসেবে কর্মরত ওই কারা কর্মকর্তা ছায়ানটের অনুষ্ঠানকে সূর্য-পূজারীদের কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘এসো হে বৈশাখ...’ আর মঙ্গল শোভাযাত্রাকে তুলনা করেছেন শিরকের সঙ্গে। তার এই ফেসবুক স্ট্যাটাস অসংখ্য শেয়ার ও কপি করে শেয়ার দিয়েছেন অনেকে। সরকারী চাকরিতে থাকা কোন কর্মকর্তা এমন বিদ্বেষমূলক স্ট্যাটাস দিতে পারেন না কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। এই বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডেপুটি জেলার পদ মর্যদার কারা কর্মকর্তা ফেসবুকে স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান সম্পর্কে সচেতন হোন... শিরোনামে লম্বা একটি পোস্ট দিয়েছেন। গত ১৩ এপ্রিল রাতে তিনি এই পোস্টটি আপলোড করেন। ওই পোস্টে তিনি পহেলা বৈশাখ বরণ করে নিতে লাল-সাদা রঙের ব্যবহারকে হিন্দুদের শাঁখা-সিঁদুরের রঙের সঙ্গে তুলনা করেছেন। রমনার বটমূলে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ছায়ানটের বর্ষবরণের অনুষ্ঠানকেও ইসলাম ধর্মের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘এসো হে বৈশাখ এসো...’ গান নিয়েও আপত্তি তুলেছেন তিনি। এই গানের ‘অগ্নিস্নানে সূচী হোক ধরা’ অংশটি নিয়ে লিখেছেন, আগুন পবিত্র করার ক্ষমতা রাখেন এ বিশ্বাস হিন্দুদের। মুসলমানদের পক্ষে এ ধরনের গান গাওয়াকে শিরক হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। এই মঙ্গল শোভাযাত্রায় মোটিফ হিসেবে পেঁচার ব্যবহারকে তিনি হিন্দু দেবী লক্ষ্মীর বাহনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, শয়তান কৌশলে বাঙালী চেতনা পালনের নামে ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের দিয়ে শিরক করাচ্ছে। যে কারণে তিনি সব মুসলিমকে তওবা করে সঠিক পথের পথিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সাইবার ক্রাইম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গীবাদ উস্কে দেয়ার ক্ষেত্রে এসব পোস্টই কার্যকর ভূমিকা রাখে। সরকার যেখানে জঙ্গীবাদ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দেশকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রসার ঘটানোর চেষ্টা করছে, সেখানে একজন সরকারী কর্মকর্তা, বিশেষ করে কারা অধিদফতরের গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত কেউ এভাবে বলতে পারেন না। কারাগারে যেসব জঙ্গী রয়েছে, তাদের বিশেষ সুবিধা দেয়াটা তো তার পক্ষে অস্বাভাবিক কিছু নয়। ডিবির এক এএসআইর বৈশাখবিরোধী পোস্ট ॥ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) বৈশাখবিরোধী পোস্ট দিয়েছিলেন। পহেলা বৈশাখের বেশ কয়েকটি ছবি আপলোড করে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান বর্জন করার আহ্বান জানানো হয়েছিল তার ওই পোস্টে। পরে বিষয়টি উর্ধতন কর্মকর্তাদের নজরে এলে খলিল তার পোস্টটি সরিয়ে নেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারী কর্মকর্তা হয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পহেলা বৈশাখবিরোধী পোস্ট দিয়েছেন। পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানান, তারা এসব পোস্টের স্ক্রিনশট রেখেছেন। সেগুলো দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। জঙ্গী তৎপরতা উস্কে দেয়ার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ধরনের স্ট্যাটাস দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে জামায়াত-শিবিরের ‘বাঁশের কেল্লা’সহ অনেক ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জঙ্গী সংগঠনগুলোরও অনেক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করা হলেও আবার নতুন করে একাউন্ট খুলে আবারও তারা জাতীয় চেতনাপরিপন্থী স্বাধীনতাবিরোধী ও মিথ্যা, বানোয়াট তথ্য দিয়ে ধর্মীয় উম্মাদনা সৃষ্টি করে সহিংস তৎপরতার সৃষ্টি করে আসছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই ধরনের অপতৎপরতা রোধে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট।
×