ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে আশাবাদী বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৮ মার্চ ২০১৮

সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে আশাবাদী বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী বিএনপি। মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সঙ্গে সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আসাদুজ্জামান খান কামালের আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এই আশাবাদের কথা জানান। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে অনুমতি দেয়ার বিষয়টি ডিএমপি কমিশনারের এখতিয়ার। নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা এর আগেও সমাবেশের অনুমতি চাইতে বিভিন্ন সময় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এর সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু তারা অনুমতি দেননি। এবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে এসেছি, আশা করি আমাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমেতি দেবেন। বেলা ১১টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে যান বিএনপির তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে এ প্রতিনিধি দলে ছিলেন, ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পানি সম্পদমন্ত্রী মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এবং বিএনপির আরেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী। বৈঠকে বসেন বিএনপির তিন নেতা। তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সমাবেশের অনুমতির জন্য একটি চিঠি দেন। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বের হয়ে আসেন তারা। নজরুল ইসলাম খান বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২৯ মার্চ সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখেছেন। জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন। আমরা আশা করছি এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি পাব। সে অনুযায়ীই এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা বারবার ডিএমপির কাছে দরখাস্ত করেছি। কিন্তু, অনুমতি পাইনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডিএমপির সর্বোচ্চ প্রশাসন। সেজন্যই আমরা এখানে একটি আবেদন দিলাম। তারপরেও যদি না হয়, তাহলে আর কি করা যাবে? আমরাতো রক্ত দিয়ে একটি স্বাধীন করা দেশে গণতন্ত্রের অনুশীলন করতে চাই, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালন করতে চাই। গণতন্ত্র অনুশীলনে সরকারের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না, এটা যাতে ভবিষ্যতে না হয়, সে চেষ্টার জন্য আমরা আসলাম। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সভা করার বিষয়ে সাধারণত কোন আপত্তি নাই। এ বিষয়ে যারা সংশ্লিষ্ট তাদের সঙ্গে উনি কথা বলে আমাদের জানাবেন। উল্লেখ্য, এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি, ১২ মার্চ ও ১৯ মার্চ খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে কর্মসূচী ঘোষণা করেছিল বিএনপি। তবে তিনবারই দলটিকে অনুমতি দেয়নি পুলিশ। তাই এবার অনুমতি পাওয়ার জন্য লিখিত চিঠি নিয়ে সরাসরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যায় বিএনপি প্রতিনিধি দল। নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা প্রাসঙ্গিক অনেক বিষয়ে আলাপ করেছি। দলের নেতাকর্মীদের বিশেষ করে নারী কর্মীদের গ্রেফতার না করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি। সারাদেশে অনেক নেতাকর্মী গ্রেফতার হচ্ছে, নানা রকমের নিপীড়ন হচ্ছে। দীর্ঘদিন অনেকে কারাগারে ছিলেন, কেউ কেউ এখনও আছেন। আর অতি সাধারণ কর্মী যারা গরিব তারাও গ্রেফতার হচ্ছেন, কষ্ট পাচ্ছেন। আমরা মন্ত্রীকে বলেছি- প্রয়োজনে আমাদের গ্রেফতার করুন। কিন্তু, সাধারণ কর্মীদের গ্রেফতার বন্ধ করুন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের অনুরোধ খুব সিরিয়াসলি নিয়েছেন। বলেছেন, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবেন। এদিকে প্রায় ১৪ বছর পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) আলতাফ হোসেন চৌধুরী। বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে সাক্ষাত করতে গেলেও এ নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়। তাই তারা এ বিষয়ে আলতাফ হোসেন চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া জানতে চান। তবে আলতাফ হোসেন চৌধুরী কিছুই বলেননি। উল্লেখ্য, চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০১ সালের ১১ অক্টোবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন আলতাফ হোসেন চৌধুরী। ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিএনপির সমাবেশ করার বিষয়ে সরকারের কোন আপত্তি নেই। তবে এর অনুমতির দায়িত্ব পুলিশ কমিশনারের। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে অনুমতি দেয়ার বিষয়টি ডিএমপি কমিশনারের এখতিয়ার। এখানে আমার কোনও হাত নেই। জনসভার নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্বও তার। কাজেই তিনি যখন মনে করেন যে, এখানে আশঙ্কা থেকে যায় কোন কিছুর, তখনই তিনি স্থান পরিবর্তন কিংবা তারিখ পরিবর্তনের কথা বলেন। আমাদের পুলিশ কমিশনার যদি মনে করেন যে ২৯ তারিখ কোন অসুবিধা নাই তাদের সভাটি করার জন্য, তখন তিনি সেই ব্যবস্থা নেবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাকে বিএনপি নেতারা অনুরোধ করেছেন একটু ভেবে দেখার জন্য। আমি নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তাদের সঙ্গে আলাপ এ বিষয়ে জানতে চাইব- অসুবিধাটা কোথায় এবং অসুবিধা আছে কিনা। অনুমতি না দিলে বিএনপি যদি সমাবেশ করতে চায় তবে কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেটা তাদের নিজস্ব বিষয়। যদি নিরাপত্তাবাহিনী মনে করে তাদের এখানে কোন অসুবিধা নেই, তারা অনুমতি দেবেন। কিন্তু এটা উপেক্ষা করে তারা যদি সভা করেন এটা তাদের বিষয়। বিএনপিকে কেন বারবার আবেদন করার পরও ঢাকায় জনসভা করতে দেয়া হচ্ছে না- এমন অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জনসভাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে, গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে এমন আভাস পেয়েই হয়ত ডিএমপি অনুমতি দিচ্ছে না বা দেয় না। এছাড়া তো আমি আর কোনও কারণ দেখি না। তারা সারাদেশেই তো সমাবেশ করছে। কোথাও তো কোনও সমস্যা হচ্ছে না। তাহলে ঢাকায় কেন হচ্ছে। বিএনপি সভা একদম করছে না সেটা নয়। কোন সময় স্থান পরিবর্তন হচ্ছে কিংবা সময় একটু পরিবর্তন হচ্ছে। সভা তারা করছেন তো। এখানে যে দেয়া হচ্ছে না সেটা কথা নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতাদের বক্তব্য ছিল, আমরা তাদের নেতাকর্মীদের অযথা গ্রেফতার করছি। আমরা বলেছি, ভিডিওর মাধ্যমে যাদের সম্পৃক্ততা পেয়েছি কিংবা যাদের তাৎক্ষণিক কোন অবস্থায় পেয়েছি, তাদের পুলিশ ধরেছে। কোন অভিযোগ নেই কিংবা অপরাধ করে নাই এমন কাউকে সাধারণত আমরা গ্রেফতার করিনি। তারা কিছু নারী গ্রেফতারের কথা বলেছেন, আমরা বলেছি, এরইমধ্যে যারা গ্রেফতার হয়েছে তারা তো বিচারের অধীনে চলে গেছে। সেক্ষেত্রে সরকারের বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু করার নেই। বিচারের প্রক্রিয়ার বিষয়টি সমাধান হবে। বৈঠকে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিষয়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে কিনা তা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা বলেছেন, কারাগারে যে সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে, তাতে উনারা সন্তুষ্ট। খালেদা জিয়া যেভাবে আছেন আমরা সব কিছুর ব্যবস্থা করেছি। আমরা বলেছি, জেলকোড অনুযায়ী যেসব ব্যবস্থা থাকার দরকার আমরা তা করেছি সবগুলো যাতে তিনি পান।
×