ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শ্রমবাজার সঙ্কুচিত ॥ হাজার হাজার কর্মী বিপাকে

সৌদিতে বাংলাদেশীদের দ্বিগুণ ফি দিয়ে ইকামা নিতে হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সৌদিতে বাংলাদেশীদের দ্বিগুণ ফি দিয়ে ইকামা নিতে হচ্ছে

ফিরোজ মান্না ॥ সৌদি আরবে অবস্থানরত প্রবাসীদের দ্বিগুণ ফি দিয়ে ইকামা নিতে হচ্ছে। চলতি বছর থেকে সৌদি সরকার কর্মীদের ওপর নতুন নিয়ম আরোপ করেছে। এতে কর্মীদের বেতনের অর্ধেকের বেশি টাকা ইকামা ফি দিতে হচ্ছে। কর্মীরা বর্তমানে সৌদিতে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন। সূত্র জানিয়েছে, সৌদি আরবে প্রবাসী কর্মীদের কাজের ক্ষেত্র সঙ্কুচিত করা হয়েছে। দেশটিতে প্রবাসী কর্মীদের ১২ ধরনের কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সৌদি সরকার। সম্প্রতি সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয় এমন ঘোষণা দিয়েছে। এ ঘোষণার পর কর্মীদের মধ্যে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। সৌদি নাগরিকদের কাজের ক্ষেত্র তৈরি করতেই প্রবাসী কর্মীদের ১২ ধরনের কাজ থেকে বিরত রাখা হবে। এ ঘোষণায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশী কর্মীরা। ইতোমধ্যে সৌদিতে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে বাংলাদেশী নাগরিকদের অনেক সঙ্কুচিত করা হয়েছে। বাংলাদেশী কর্মীরা মনে করছেন, তাদের অনেককেই কাজ হারাতে হতে পারে। বর্তমানে হাজার হাজার কর্মী ১২ ধরনের কাজের বাইরে নতুন করে কাজ খুঁজছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বলেছে, সৌদি আরব গত কয়েক বছর ধরেই তাদের বাজেট ঘাটতিতে চলছে। বিদেশী কর্মীদের কয়েক ধরনের কাজ থেকে সরিয়ে তাদের নাগরিকদের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। বেকার সমস্যা দূর করার জন্যই তারা মূলত এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এতে বাংলাদেশের শ্রমবাজারে কোন প্রভাব পড়বে না। কারণ দেশটিতে নানা ধরনের কাজ রয়েছে। ওই সব কাজে বাংলাদেশ থেকে তাদের বিপুল সংখ্যক কর্মী প্রতি বছরই নিতে হবে। সূত্র জানিয়েছে, নারী-পুরুষ, শিশুদের রেডিমেড সব কাপড়ের দোকান, ক্রোকারিজ সামগ্রীর দোকান, গাড়ির শোরুম, গাড়ির পার্টসের দোকান, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির দোকান, হাসপাতাল, যন্ত্রপাতির দোকান, চকলেট বা মিষ্টান্নের দোকান, গৃহনির্মাণ সামগ্রীর দোকান, চশমার দোকান, ঘড়ির দোকান, কার্পেট পাপোষ ও ফার্নিচারের দোকানে লাখ লাখ বাংলাদেশী কর্মরত রয়েছেন। এসব পেশায় বাংলাদেশী কর্মীদের চাকরির সীমাবদ্ধতা তৈরি করা হয়েছে। আগে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ব্যবসা করতে পারতেন। এখন এই জায়গাটিও সঙ্কুচিত করা হয়েছে। সৌদি নাগরিকদের বেকারত্ব দূর করতে সৌদি কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এ ঘোষণা দেয়ার পর হাজার হাজার বাংলাদেশী নতুন করে কাজ খোঁজার চেষ্টা করছেন। এক কাজ হারানোর আগেই যাতে তারা কাজ পেয়ে যান এমন এক চিন্তা তাদের মাথায় কাজ করছে। বেকার হয়ে পড়লে বসে খাওয়ার মতো কোন অবস্থা বাংলাদেশী কর্মীদের নেই। বেশি দিন বেকার থাকলে খালি হাতে তাদের দেশে ফিরে আসতে হবে। দেশে ঋণ ধার করে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি গিয়ে যদি খরচের টাকাও তুলতে না পারেন তাহলে তারা দেশে ফিরে বিপদে পড়বেন। যাদের চাকরি হারানোর ভয় রয়েছে তারা নতুন চাকরি খুঁজতে মরিয়া হয়ে ছুটছেন। অস্থির সৌদি প্রশাসনের কারণেও শ্রমবাজারে এমনিতেই প্রভাব পড়েছে। গত বছরের শেষ দিকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি জানান, বিদেশে গত বছর রেকর্ড সংখ্যক কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। ১০ লাখ ৮ হাজার কর্মী বিভিন্ন দেশে চাকরি পেয়েছেন। দেশের ইতিহাসে প্রথম এত বেশি সংখ্যক কর্মী চাকরি নিয়ে গেছেন। এ হিসাব ২০১৬ সালের তুলনায় শতকরা ২৮ শতাংশ বেশি। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কর্মী নিয়োগ পেয়েছেন সৌদি আরবে। এরপরেই জর্দান ও ওমানের স্থান।
×