ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জয় অপহরণ ও হত্যাচেষ্টা মামলার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

জয় অপহরণ ও হত্যাচেষ্টা মামলার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় অপহরণ ও হত্যাচেষ্টা ষড়যন্ত্রের মামলার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ৪ আগস্ট ডিবির পরিদর্শক ফজলুর রহমান পল্টন থানায় একটি জিডি করেন। যা পরে মামলায় রূপান্তরিত হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়, জাসাসের সহ-সভাপতি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন এবং দেশে ও দেশের বাইরে অবস্থানরত বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ জয়কে অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্র করে। মামলাটির তদন্ত শেষে গত মঙ্গলবার আদালতে চার্জশীট দাখিল করে ডিবি পুলিশ। হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলায় শফিক রেহমান, মাহমুদুর রহমানসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। আদালত সূত্র বলছে, পর্বেক্ষণের জন্য নথিপত্র এতদিন মুখ্য মহানগর হাকিমের খাস কামরায় রাখা ছিল। বৃহস্পতিবার বিচারকের দফতর থেকে সেগুলো আদালত পুলিশের কাছে পাঠানো হয়। আগামী ৬ মার্চ অভিযোগপত্রটি বিচারকের স্বাক্ষর গ্রহণের জন্য দিনক্ষণ ধার্য রয়েছে। মামলার অপর তিন আসামি হচ্ছেন, জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন, তার ছেলে রিজভী আহাম্মেদ ওরফে সিজার ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়া। আসামিদের মধ্যে মামুন ও মিজানুরকে অভিযোগপত্রে পলাতক দেখানো হয়েছে। সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের নির্দেশদাতা হিসেবে শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। আর আসামি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের বিরুদ্ধে এমন অপকর্মের পরামর্শদাতা হিসেবে ষড়যন্ত্রে সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়েছে আদালতে দাখিলকৃত চার্জশীটে। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, মামুনের ছেলে রিজভী আহাম্মেদ যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের কাছ থেকে সজীব ওয়াজেদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করেন। পরে সেই তথ্য অন্য আসামির কাছে অসৎ উদ্দেশ্যে সরবরাহ করেন।আর প্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান এই ষড়যন্ত্রে অর্থ যোগানদাতা এবং পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মামুন বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাসাসের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এবং যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। পরিবার নিয়ে কানেটিকাটের ফেয়ারফিল্ড কাউন্টিতে বসবাস করেন তিনি। জয় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় বসবাস করেন। জয়ের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সংরক্ষিত গোপন তথ্য পেতে এফবিআইয়ের এক কর্মকর্তাকে ঘুষ দেয়ার অপরাধে ২০১৫ সালের ৪ মার্চ মামুনের ছেলে রিজভী আহাম্মেদ সিজারকে সাড়ে তিন বছরের কারাদ- দেয় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটি আদালত। সিজার আদালতের রায়ে কারাগারে যাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদেও ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়। এরপর জয় ফেসবুকে এক পোস্টে লেখেন, আমাকে যখন কেউ হত্যার চেষ্টা করছে, সেটিও তখন আমি খুবই ব্যক্তিগত ব্যাপার হিসেবে নিচ্ছি। যারা এর জন্য দায়ী, তারা বিএনপির যত উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বই হোক না কেন, আমি তাদের হদিস বের করে বিচারের মুখোমুখি করব। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের নথিতে দেখা যায়, শেখ হাসিনার ছেলে জয়ের ক্ষতি করার জন্য তার ব্যক্তিগত তথ্য পেতে সিজার এফবিআইয়ের এক এজেন্টকে ঘুষ দিয়েছিলেন। ঘুষ দিয়ে তথ্য পাওয়ার পর সিজার তা বাংলাদেশী এক সাংবাদিককে সরবরাহ করেছিলেন এবং বিনিময়ে প্রায় ৩০ হাজার ডলার পেয়েছিলেন বলেও নথিতে উল্লেখ করা হয়। ওই রায়ের পর জয়কে অপহরণের চক্রান্তের অভিযোগে ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান ফৌজদারি দ-বিধির ৩০৭ ও ১২০ (বি) ধারায় ঢাকার পল্টন থানায় প্রথমে একটি জিডি পরে তা মামলা হিসেবে দায়ের করেন। মামলায় বলা হয়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে আগে মামুনসহ বিএনপি ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্যান্য দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা রাজধানীর পল্টনের জাসাস কার্যালয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার একত্রিত হয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন। ওই মামলায় ২০১৬ সালের এপ্রিলে শফিক রেহমানকে তার ইস্কাটনের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। দুই দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বিএনপিঘনিষ্ঠ শফিক রেহমানকে। ইস্কাটনে তার বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ জয় অপহরণ সংক্রান্ত নানা নথিপত্র জব্দ করে।
×