ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আগামী মাসেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আগামী মাসেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। দেশের সর্ববৃহৎ শৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে এ বাহিনীর এক গৌরবময় ঐতিহ্য রয়েছে। কাজেই আমাদের বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গেও এ বাহিনী সম্পৃক্ত। আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আপনাদের প্রত্যেক সদস্যকে সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে। ভোটের অধিকার জনগণের মৌলিক অধিকার সেটা যেন তারা যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারে। আমরা চাই আমাদের দেশের জাতীয় নির্বাচন আরও সমৃদ্ধিশালী হোক, জনগণ তার সাংবিধানিক অধিকার যেন প্রয়োগ করতে পারে। সে বিষয়টা যথাযথভাবে আপনাদের দৃষ্টি দিতে হবে। আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে তুলে ধরা। তিনি সোমবার সকালে গাজীপুরে কালিয়াকৈরের সফিপুরে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩৮তম জাতীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফিপুর আনসার একাডেমিতে আসেন। পরে তিনি আনসার একাডেমির ইয়াদ আলী প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছান। প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন তাঁকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী একটি সবুজ রঙের খোলা জীপে করে প্যারেড পরিদর্শন করেন। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। একাডেমির ইয়াদ আলী প্যারেড গ্রাউন্ডে সমবেত আনসারদের কুচকাওয়াজে সালাম ও অভিবাদন গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী সাহসিকতা ও সেবামূলক কাজের জন্য ১২৭ জন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে পদক বিতরণ করেন। পরে তিনি বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর জাতীয় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আমরা পরমাণু যুগে পদার্পণ করছি। পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র আমরা স্থাপন করছি। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। আমরা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করব। আগামী মার্চ মাসেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে। অর্থাৎ জল-স্থল-আকাশ সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ বিরাজমান। আমরা সর্বদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছি। কারো কাছে হাত পেতে নয়, আমরা নিজেদের সম্পদ দিয়ে নিজেদের উন্নয়নের জন্য ব্যাপকভাবে কাজ করছি। ২০০৮ সালে আমরা মাত্র ৬১ হাজার কোটি টাকা বাজেট পেয়েছিলাম। আজ সেই বাজেট চার লক্ষ কোটি টাকায় উন্নীত করে আমরা ব্যাপকভাবে দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। যে উন্নয়ন গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছেছে। দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হচ্ছে। বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ গ্রাম পর্যায়ে যারা থাকে একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। সমাবেশে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আরও এগিয়ে যাবে। দেশের শিল্প কারখানা, সমুদ্রবন্দর ও বিমান বন্দরের নিরাপত্তায় প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক আনসার সদস্যের সর্বদা সতর্ক উপস্থিতি দেশের অর্থনীতির চাকাকে রেখেছে নিরাপদ ও গতিশীল। স্বাধীনতার পর থেকেই প্রতিটি ক্ষেত্রে এ বাহিনীর সদস্যরা সবসময়ই কর্মদক্ষতা ও সফলতার পরিচয় দিয়ে আসছে। বিশেষ করে জাতীয় সঙ্কটকালে এবং জরুরী মুহূর্তে তাদের কর্মতৎপরতা এ বাহিনীকে সরকারের এক নির্ভরযোগ্য অংশ হিসেবে পরিণত করেছে। বিভিন্ন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন ছাড়াও অপারেশন রেলরক্ষা, মহাসড়কে নাশকতারোধ এবং মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদ রুখতে এ বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রধানমন্ত্রী সমাবেশে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন এবং সেই ঘোষণা অনুসারে যখন প্রথম স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে যে সালাম দেয়া হয় সেখানে আনসার বাহিনীর বিরাট ভূমিকা ছিল। তাদের সেই গৌরবময় অধ্যায় আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। আজকে আমাদের আনসার বাহিনী সমগ্র বাংলাদেশে বিস্তৃত তৃণমূল পর্যন্ত এ বাহিনী আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছে এবং দেশের সর্ববৃহৎ শৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে এ বাহিনীর এক গৌরবময় ঐতিহ্য রয়েছে। কাজেই আমাদের বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গেও এ বাহিনী সম্পৃক্ত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, আমরা ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সরকারে ছিলাম। বলতে গেলে বাংলাদেশের জন্য ছিল স্বর্ণযুগ। এর পর সাত বছর আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দেয়। আমরা জয়ী হয়ে সরকার গঠন করি। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত সরকার পরিচালনা করে আজকে বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গেছি। আজ বাংলাদেশ বিশে^ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্ব শান্তি রক্ষায় আমরা অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। কিছু দিন আগে মিয়ানমার থেকে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে। আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। সবাইকে নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছি। যা বিশে^ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। বাংলাদেশকে আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করতে চাই। আমরা আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি। সকলের হাতে মোবাইল ফোন, আজকে ১৩ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহার হয় বাংলাদেশে। আট কোটি মানুষ ইন্টারনেট সার্ভিস পায়। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে ডিজিটাল সেন্টার গড়ে তুলে আমরা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রাম পর্যায়ে নিয়ে গেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে এদেশে মানুষ যখন মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে তখন এ আনসার বাহিনীর ৪০ হাজার থ্রি নট থ্রি রাইফেল ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম অস্ত্র। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এ বাহিনীর যে সকল শহীদ আত্মাহুতি দিয়ে গেছে এবং তাদের যে অবদান সে অবদান জাতি চিরদিন স্মরণ করবে। তিনি বলেন, আনসার বাহিনীর নিজস্ব পতাকা আগে ছিল না। ১৯৯৬ সালে আমি সরকারে এসে এ বাহিনীকে প্রথম পতাকা দিয়েছিলাম। এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই এ বাহিনী জাতীয় পতাকা পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের সুযোগ সুবিধার জন্য কখনও দাবি করতে হয়নি। আপনাদের কাজের প্রতি আন্তরিকতা ও দৃষ্টান্তমূলক দায়িত্বশীলতার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিবছর সেবা ও সাহসিকতা পদক প্রবর্তন এটা আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। তিনি পদকপ্রাপ্তদের ধন্যবাদ জানান। তিনি আরও বলেন, আপনারা একটি শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, কাজেই যেকোন মূল্যে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা আপনাদের রক্ষা করতে হবে। এটা আপনাদের পবিত্র দায়িত্ব। সেই সঙ্গে আপনারা সঠিকভাবে চেইন অব কমান্ড, দায়িত্ব ও কর্তব্যপালনে সচেষ্ট থাকবেন- সেটাই আমরা চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতিসম্প্রতি বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সার্কেল এ্যাডজুটেন্ট, কোম্পানী কমান্ডার, বিভিন্ন পদবির ব্যাটালিয়ন আনসার, কোয়াটার মাস্টার এবং অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বনিম্ন ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত আমরা ঝুঁকি ভাতা চালু করেছি। উপজেলা আনসার কোম্পানী কমান্ডার ও ইউনিয়ন আনসার কোম্পানী কমান্ডারদের যথাযথ ভাতা প্রদানের বিষয়টিও সরকার বিবেচনায় রেখেছে। সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহসিকতা ও সেবামূলক কাজে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বীরত্বপূর্র্ণ ও সেবামূলকসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আনসার ও ভিডিপি’র ১২৭ সদস্যকে বাংলাদেশ আনসার পদক, প্রেসিডেন্ট আনসার পদক, বাংলাদেশ গ্রাম প্রতিরক্ষা দল পদক প্রদান করেন। সমাবেশ চলাকালে প্যারেড গ্রাউন্ডের দক্ষিণ পশ্চিম পার্শ্বে আনসার ও ভিডিপি’র প্রায় ৬শ’ সদস্য-সদস্যা মনোজ্ঞ ডিসপ্লে প্রদর্শন করেন। সমাবেশ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনসার একাডেমির লেকের পাশে আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন ও কুটিরশিল্প পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি কেক কাটেন এবং আনসার সদস্যদের অংশগ্রহণে সচেতনতামূলক নাটিকা দেখেন ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- নিয়ে রচিত গান শোনেন। প্রধানমন্ত্রী আনসার সদস্যদের নির্মিত ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের স্টলও পরিদর্শন করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সামসুল হক টুকু, সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, স্বরাষ্ট্র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, পুলিশের আইজি ড. জাবেদ পাটোয়ারী, গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তারউজ্জামান, জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ প্রমুখ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে তিন বাহিনীর প্রধানগণ সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌ-বাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাবের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ বিভিন্ন বাহিনী ও প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন।
×