ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপির মানব বন্ধন কর্মসূচী

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বিএনপির মানব বন্ধন কর্মসূচী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদ জিয়ার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে দলটি। পূর্ব ঘোষিত এই কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামন্যে এই কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়। এতে দলটির বিভিন্ন স্তরের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করে। এক ঘণ্টার এই শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচীতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া আগামী নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আগামী জাতীয় নির্বাচন দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়েই হবে উল্লেখ করেন। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচি স্থায়ী হয়। দলটির শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী অংশ নেন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মোতায়েন করা হয় বিপুলসংখ্যক পুলিশ। এক পর্যায়ে মানববন্ধন কর্মসূচী গণজমায়েতে রূপ নেয়। প্রেসক্লাব, পল্টন, হাইকোর্ট, কদম ফোয়ারা ও শান্তিনগর এলাকায় এ সময় যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। হাতে হাত রেখে নেতাকর্মীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন কর্মসূচীতে অংশ নেয়। নির্ধারিত সময়ের আগেই হাইকোর্টের মোড় থেকে তোপখানা রোডের সচিবালয়ের গেট পর্যন্ত রাস্তায় নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। কর্মসূচীকে ঘিরে শুরু থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিলেও তারা বিএনপির এই কর্মসূচীতে কোনও বাধা দেয়নি। কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয় মানববন্ধন কর্মসূচী। মানববন্ধন কর্মসূচী উপলক্ষে সকাল থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশ জলকামানের গাড়িসহ কয়েকটি মাইক্রোবাস এনে প্রেসক্লাবের পাশে রাখে। এ সময় গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন কর্মসূচীতে বিএনপির ছাড়াও ২০ দলীয় জোটের নেতারা অংশ নেয়। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি দুই দিন বিক্ষোভ কর্মসূচীর পর শনিবার ঢাকাসহ সারা দেশে তিন দিনের টানা কর্মসূচী ঘোষণা করে। যার প্রথম দিনের কর্মসূচী হিসেবে সোমবার এই মানববন্ধন করা হয়। আজ মঙ্গলবারও পূর্ব-ঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে জেলা, মহানগর, থানা ও উপজেলায় অবস্থান কর্মসূচী পালন করবে বিএনপি। পরদিন বুধবার অনশন কর্মসূচী পালন করবে বিএনপি। মানবন্ধন কর্মসূচীতে বিএনপির কেন্দ্রীয়সহ বিভিন্ন পর্যায়ে নেতারা বক্তব্য রাখেন। সমাপনী বক্তব্য দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। বলেন, শত প্রতিকূলতার মধ্যে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এই কারাবাসের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ, যে হতাশা এবং বেগম জিয়ার প্রতি আপনাদের যে ভালবাসা সেটা প্রকাশ করেছেন। মানববন্ধনের মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণিত হয়েছে বেগম জিয়া দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। তাকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দিয়েছে। স্পষ্টভাষায় বলে দিতে চাই, দেশনেত্রীর মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলবে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে হবে। ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া রায়ের আগে নেতা-কর্মীদের ধৈর্য ধরতে ও শান্ত থাকতে এবং শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচী চালিয়ে যেতে বলেছেন। এ কর্মসূচী তাকে মুক্ত করার জন্য, দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য। আজ সারা দেশের একটিই আওয়াজ, অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তাকে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটকে রেখে জনগণের গণতন্ত্রের যে আন্দোলন, তা দমিয়ে রাখা যাবে না। তিনি বলেন, তাকে ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। আমরা চাই, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে। আমরা সহায়ক সরকার চাই, একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন চাই। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন করে দেশের জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার বাস্তবায়ন করতে চাই। এ সময় তিনি দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার বন্ধ করতে করতে সরকারের প্রতি আহ্বানও জানান। মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে সাজা দেয়া হয়েছে। এটা দেশের মানুষ গ্রহণ করেনি। অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিতে হবে, বিএনপির সকল নেতার সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। চার দিন ধরে ডিভিশন না দিয়ে সরকার নেত্রীকে একজন সাধারণ বন্দী হিসেবে কষ্ট দিয়েছে। এতে করে সরকার জেলকোড ভঙ্গ করেছে। সরকারের এহেন কর্মকা-ের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই উল্লেখ করেন। দলের স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, যত ষড়যন্ত্র হোক, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, দেশে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়েই হবে। তাকে ছাড়া কেউ নির্বাচন চিন্তা করলে সেটা হবে দুঃস্বপ্ন। মানববন্ধন কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, শওকত মাহমুদ, মিজানুর রহমান মিনু, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জয়নুল আবদিন ফারুক, গোলাম আকবর খন্দকার, হাবিবুর রহমান হাবিব, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শহীদউদ্দিন চৌধুরী, শিরিন সুলতানা, হেলেন জেরিন খান, শাম্মী আখতার, বেবী নাজনীন, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস প্রমুখ। প্রতিদিন আওয়ামী লীগের ১০ লাখ ভোট কমছে- মওদুদ ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোয় প্রতিদিন আওয়ামী লীগের ১০ লাখ ভোট কমছে বলে দাবি করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, সরকার মনে করছেন খালেদা জিয়াকে যত বেশি দিন জেলে রাখা যাবে বিএনপি ততই দুর্বল হয়ে পড়বে। এই ধারণা ভুল। বিএনপি এখন আগের চেয়ে আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ। খালেদা জিয়াকে জেলে রাখলে তার জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে। যারা তাকে জেলখানায় পাঠিয়েছে তাদের জনপ্রিয়তা কমছে। তিনি যতদিন জেলে থাকবেন ততদিন আওয়ামী লীগের ভোট প্রতিদিন ১০ লাখ করে কমতে থাকবে উল্লেখ করেন। সোমবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে এক প্রতিবাদ সভায় তিনি এ কথা বলেন। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নামে ষড়যন্ত্রমূলক রায়ের প্রতিবাদে এ সভার আয়োজন করে নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরাম। তিনি বলেন, জেলখানায় খালেদা জিয়ার মনোবল বিন্দুমাত্র ভাঙেনি;বরং মনোবল আরও বেড়েছে। বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা হয়েছে। বিচারক ৬৩২ পৃষ্ঠার রায়ের সারাংশ শুধু পড়েছেন। এর মানে কি তাহলে? রায় তৈরি করাই আছে, শুধু বিচারক স্বাক্ষর করে দিবেন। তাহলে রায়ের কপি দিতে এতো গড়িমসি কেন? একদিন দেরি হলে খালেদা জিয়া আরও বেশি কষ্ট পাবেন এজন্যই এমন আচরণ করছে সরকার। তিনি বলেন, ‘রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর স্টাডি করব রায়ের কোন কোন জায়গায় দুর্বলতা আছে। এটা করতে দু’দিন সময় লাগতে পারে। এরপর রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করব। বিশ্বাস করি এই রায় উচ্চ আদালতে টিকবে না কারণ তার বিরুদ্ধে কোন সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির করা যায়নি উল্লেখ করেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে অবস্থান কর্মসূচীর স্থান পরিবর্তন ॥ খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে অবস্থান কর্মসূচীর স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রথমে জাতীয় প্রেসক্লাব নির্ধারণ করলেও পরে তা পরিবর্তন করেছে বিএনপি। মঙ্গলবারের এই কর্মসূচী রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে হবে বলে সোমবার রাতে জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রিজভী বলেন, মহানগর পুলিশ বিএনপিকে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অবস্থান কর্মসূচী করার অনুমতি দিয়েছে। এ কারণে আমরা জাতীয় প্রেসক্লাবের পরিবর্তে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান কর্মসূচী করব। ধারাবাহিক কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সোমবার দুপুরে মানববন্ধনের পর বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেছিলেন, মানববন্ধনে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনেই আমাদের অবস্থান কর্মসূচী হবে। সারাদেশের জন্যই এই কর্মসূচী দিয়েছে বিএনপি। জেলায় অবস্থান কর্মসূচীর স্থান জেলা বিএনপির নেতারাই ঠিক করবেন।
×