ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে হলো এসএসসি পরীক্ষা, দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে হলো এসএসসি পরীক্ষা, দুর্ভোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার রায়কে ঘিরে নাশকতার আশঙ্কায় উদ্বেগের মধ্যেই বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হলো এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে বিশেষত রাজধানী জুড়ে নিরাপত্তার কড়াকড়ির মধ্যে পরিবহন সঙ্কটের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। এদিন ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। তবে বিভিন্ন জেলায় প্রশ্ন ফাঁস ও ফাঁসের চেষ্টায় জড়িত অন্তত ১৪ অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলাও হয়েছে কয়েকজনের বিরুদ্ধে। জামালপুরে আটক ১০ জনকে প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলাকে ঘিরে নানা কর্মকা-ে কদিন ধরেই উৎকণ্ঠা ছিল জনমনে। তবে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগে ছিলেন চলমান এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয়া ২০ লাখ পরীক্ষার্থী। উৎকণ্ঠায় ছিলেন তাদের অভিভাবকরা। পরীক্ষা হবে কি না হবে তা নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও নির্দিষ্ট সময়েই পরীক্ষা নেয়া হয়। স্কুল-কলেজ অধিকাংশই শিক্ষার্থী না আসায় ক্লাস হয়নি। কিছু ইংরেজী মাধ্যম স্কুল অবশ্য আগেই ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে সকাল থেকেই নিরাপত্তার কড়াকড়ির মধ্যে পরিবহন সঙ্কটের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলেছেন, পরীক্ষা কেন্দ্রে ঠিক সময়ে পৌঁছালেও সড়কে রিক্সা ও সিএনজি চালিত অটোরিক্সা করে দ্বিগুণ খরচে তারা কেন্দ্রে পৌঁছান। অনেকে বাস না থাকায় হেঁটে কেন্দ্রে আসেন। তেজগাঁও গার্লস হাই স্কুলের পরীক্ষার্থী বিথি বলছিল, সকালে একটু আগেই বের হয়েছিলাম। তবু গাড়ি পাচ্ছিলাম না। খুব ভয়ও লাগছিল, পরীক্ষার হলে পৌঁছাতে পারি কিনা। সাড়ে ৯টার পরে কেন্দ্রে ঢুকলে তো আবার সমস্যা। তার মা বলছিলেন, কিছু তো করারও ছিল না। বাধ্য হয়েই চলে আসি হেঁটে হেঁটে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে মেয়েকে নিয়ে টেটে হেঁটে এসেছেন রুবি রহমান। সকালে মতিঝিল এলাকা থেকে কিছু পাচ্ছিলাম না। রিক্সাও কম। অনেক দূর হেঁটে আসার পর একটা রিক্সা নিয়ে আসি। আসতে ৯টা ৪০ বেজে যায়। তবে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দিয়েছেন শিক্ষকরা। এ অভিভাবক বলছিলেন, সকলেই সমস্যা হয়েছে। স্কুল-কলেজে না গেলেও হয়। কিন্তু এভাবে পরীক্ষাটা একদিন পিছিয়ে দিলে তো কোন সমস্যা ছিল না। এদিকে এ দিনও পরীক্ষা শেষে দেখা গেল প্রশ্ন ফাঁসের একই সঙ্কট। বাংলা ও ইংরেজীর পর এ দিন ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁসের তথ্য মিলেছে। রহস্যজনক হলেও গত বছর যে নামের আইডি থেকে দফায় দফায় প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। ফাঁসের পর সেই নামে একজন গ্রেফতারও হয়। বৃহস্পতিবার সেই নামের একটি আইডি থেকেই ফাঁস হয় প্রশ্ন। পরে অন্যান্য মাধ্যমেও তা চলে আসে। সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে হোয়াটস এ্যাপের একটি গ্রুপে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার বহুনির্বাচনী অভীক্ষার ‘খ’ সেটের চাঁপা প্রশ্নপত্রটি পাওয়া যায়। যা অনুষ্ঠিত প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে। সকাল ১০টায় পরীক্ষাটি শুরু হয়, শেষ হয় দুপুর ১টায়। এর আগে সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে হোয়াটস এ্যাপের ‘ইসলাম শিক্ষা ঝঝঈ ২ক ১৮’ নামের একটি গ্রুপ ইমলাম ও নৈতিক শিক্ষার খ’ সেটের চাঁপা প্রশ্নপত্রটি পাওয়া যায়। এর সঙ্গে ছিল হাতে লেখা উত্তরপত্র। এই গ্রুপে প্রথম প্রশ্নপত্র ছাড়েন ‘আহমেদ নিলয়’ নামের একটি হোয়াটস এ্যাপ আইডি থেকে। তিনি একের পর এক প্রশ্ন ও প্রশ্নের সঙ্গে হাতে লেখা উত্তরপত্রও ছাড়তে থাকেন। এ সময় আহমেদ নিলয় পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘কেউ সাড়ে ৯টার আগে হলে ঢুকবে না। !! বেস্ট অব লাক প্রশ্নের পিক ক্লিয়ার আউট না হওয়ার জন্য এনসার দিতে এত লেট হইলো...না হলে অনেক ৯:০৫ এর মধ্য এনসার দিয়া দিতাম...সবাই ১০০% যেইটা পারবা অইটা এইখান থেকে ফেল করব না।’ পরীক্ষার্থীদের এক প্রশ্নের জবাবে আহমেদ নিলয় বলেন, প্রশ্ন আর উত্তর লিখে দেয়া হইছে কিন্তু সিরিয়াল নাই শুধু দেখ। এরপর থেকে ফেসবুকসহ অন্যান্য সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নপত্রটি ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। গত বছর এই আহমেদ নিলয় ছিল বেশ আলোচিত। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিলয় নামে অপরাধীকে আটক করে। এরপর কিছুদিন বন্ধ থাকলেও বৃহস্পতিবার আবার সেই নামের আইডি থেকেই প্রশ্ন আসে। কয়েকজন গ্রেফতার ॥ এদিকে জামালপুর থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানিয়েছেন, জেলা পুলিশের অভিযানে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার দেওয়ানগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের ১০ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে বৃহস্পতিবার আদালতে সোপর্দ করে পুলিশী হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। জামালপুরের পুলিশ সুপার দাবি করেছেন, প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত মূলহোতাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। জানা গেছে, জামালপুর জেলা পুলিশের একটি দল ইংরেজী দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষা শুরু হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে তারেকুল ইসলাম নামের এক পরীক্ষার্থীকে মুঠোফোন সেটসহ আটক করে। বুধবার সকাল ১০টায় শুরু হওয়া ইংরেজী দ্বিতীয়পত্রের খ-সেটের প্রশ্নের সঙ্গে তার ফোন সেটে সংরক্ষিত প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া যায়। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাৎক্ষণিক ওই কেন্দ্রের আরও নয়জন পরীক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের ফোন সেটেও ওই প্রশ্নের হুবহু প্রশ্ন পাওয়া যায়। গ্রেফতার পরীক্ষর্থীরা হলেন- তারেকুল ইসলাম (১৫), ইশতিয়াক মাহমুদ নিলয় (১৫), এহসানুল হক শান্ত (১৬), মোফাখারুল ইসলাম মনির (১৬), মাহমুদুল হাসান ওয়াস্তি (১৭), সুনিল বাবু (১৭), আনোয়ার হোসেন আবীর (১৫), কে এম নওশীন দুর্জয় (১৬), ফয়সাল আহম্মেদ (১৬) ও মোবারক আকন্দ (১৬)। তারা সবাই দেওয়ানগঞ্জ জিলবাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। তাদের বাড়িও দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায়। তাদের বিরুদ্ধে ১৯৮০ সালের পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইনের ৪(খ)১৩ ধারায় পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও প্রকাশের সহায়তা করার অপরাধের অভিযোগে দেওয়ানগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার বাদী দেওয়ানগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব রায়হানা আক্তার বেগম। ফরিদপুর থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানিয়েছেন, সদরপুরে ইসলাম ধর্ম প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অভিযোগে দুই পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সদরপুর থানায় একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। বৃহস্পতিবার ধর্ম পরীক্ষার দিন এ ঘটনা ঘটে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল সরকারী বিদ্যালয় কেন্দ্রে। প্রশ্ন ফাঁস করার অভিযোগে আটক হওয়া ওই দুই পরীক্ষার্থী হলো সুমন শিকদার (১৭) ও সজীব প্রামাণিক (১৭)। উপজেলার চরবিষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী তবে তাদের কেন্দ্র ছিল বিশ্ব জাকের মঞ্জিল সরকারী বিদ্যালয়। গলাচিপায় আড়াই ঘণ্টা পরে পরীক্ষা ॥ পটুয়াখালীর গলাচিপা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানিয়েছেন, কে. আলী কলেজ ভেন্যুতে আড়াই ঘণ্টা পরে দাখিল বাংলা দ্বিতীয় পত্রের নৈর্ব্যক্তিক (এমসিকিউ) পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। আর রচনামূলক পরীক্ষা নেয়া হয়েছে আধা ঘণ্টা আগে। থানা পুলিশের নিরাপত্তা হেফাজত থেকে প্রশ্নপত্র যথাসময়ে নিতে ভুলে যাওয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছেন। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আগে-পরে হয়ে যাওয়ায় পরীক্ষার্থীরাও বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধ্য হয়েছে।
×