ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আশ্রয় শিবিরে উত্তেজনা

ক্যাম্প ছেড়ে ঝাউবাগানে বসতি তৈরি করছে রোহিঙ্গারা

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ক্যাম্প ছেড়ে ঝাউবাগানে বসতি তৈরি করছে রোহিঙ্গারা

মোয়াজ্জেমূল হক/ এইচএম এরশাদ ॥ কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে লাখ লাখ রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ও শিশু নিয়ে আশ্রয় শিবিরগুলো ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। একদিকে রাখাইনে ফিরে না যাওয়ার তৎপরতা, অপরদিকে আশ্রয় শিবির থেকে পালিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়া। অর্থাৎ, এদের অধিকাংশ বাংলাদেশে থেকে যাওয়ার লক্ষ্যে এখন তৎপর। কিন্তু এ সমস্যা বাংলাদেশের জন্য ভবিষ্যতে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের হুঁশিয়ারি রয়েছে। সরকার যতই এ নিয়ে তৎপর, বিদেশী অনেক সংস্থা এই মুহূর্তে এদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে না দেয়ার পক্ষে তৎপর। সঙ্গত কারণে, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী পুরুষের মাঝে দিন দিন প্রত্যাবাসনবিরোধী মনোভাব কঠোর হচ্ছে। প্রত্যাবাসনের সময় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফিরে গেলে সেখানেও আশ্রয় শিবিরে এক ধরনের বন্দী জীবনে থাকতে হবে তা বুঝতে পারে বহু রোহিঙ্গা পরিবার আশ্রয় ক্যাম্প ত্যাগ করে চলেছে। ক্যাম্প ছেড়ে তারা নানা উপায়ে সৈকতের ঝাউ বাগান ও খুনিয়াপালং এলাকার পাহাড়ে আশ্রয় নিচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন পথে দেশের বিভিন্ন স্থানেও চলে যাচ্ছে। তবে তা এখনও সীমিত আকারে রয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামীতে দলে দলে এরা উখিয়া টেকনাফ এলাকা ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যেতে পারে। মিয়ানমারে ফিরতে অনাগ্রহী রোহিঙ্গারা সৈকতের পরিবেশ নষ্ট করে ঝাউগাছ কেটে গড়ে তুলছে বসতি। এতে সৈকতের সৌন্দর্যহানির পাশাপাশি পর্যটন খাতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে পরিবেশবিদদের পক্ষে দাবি উঠেছে। ঝাউবনে অভিযানের মাধ্যমে রোহিঙ্গা বসতি ভেঙ্গে এদের ক্যাম্পে ফেরত পাঠানোর তৎপরতা শুরু করেছে প্রশাসন। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের ডায়াবেটিক হাসপাতাল সংলগ্ন পয়েন্ট ঝাউবাগানের ভেতরে ঝুপড়ি তৈরি করে বসবাসকারীদের বেশিরভাগই রোহিঙ্গা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রত্যাবাসনের খবরের পর থেকেই ব্যাপকহারে ক্যাম্প ছেড়ে এখানে এসে বসতি করতে শুরু করেছে রোহিঙ্গারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু এই পয়েন্টটিতে নয়, ১২০ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতের অন্তত ১০টি পয়েন্টের ঝাউবাগানে বসতি তৈরি করেছে রোহিঙ্গারা। কিছু দালাল চক্রের সাহায্য নিয়ে ঝাউগাছ নিধন করে বসতি নির্মাণের পাশাপাশি ঝাউকাঠ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করছে। জেলার বনবিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ঝাউবাগানে বসতি উচ্ছেদ করে কিছু রোহিঙ্গাকে ক্যাম্পে পাঠানো হলেও স্বল্প জনবলের কারণে তা পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না। ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গারা যাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যেতে না পারে সেজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে স্থাপন করা হয়েছে ১১টি তল্লাশি চৌকি। এসব তল্লাশি চৌকি থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫০ হাজার রোহিঙ্গাকে আটক করে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও পুরনো রোহিঙ্গা যারা ইতোপূর্বে বাসাবাড়ি নিয়ে শহর ও শহরতলীতে বসবাস করছে, তাদের স্বজনদেরও ক্যাম্প ত্যাগ করিয়ে নিয়ে আসছে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে। সড়ক পথে চেকপোস্টে ধরা পড়ার ভয়ে পায়ে হেঁটে বিভিন্ন গ্রামীণ জনপথ দিয়ে পালাচ্ছে রোহিঙ্গারা। ক্যাম্পে নিবন্ধনকৃত রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দেয়ার সময় গণনা না করে রেশন সামগ্রী প্রদান করা হয়ে থাকে। তাই রেশন ভোগ করতে একজন করে পুরুষ সদস্য রেখে প্রত্যাবাসনে ফাঁকি দিতে অন্যদের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখা হচ্ছে। ক্যাম্পে থাকা পুরুষ (রোহিঙ্গা) রেশন তুলে বিক্রি করে টাকা কামাই করছে বলে জানা গেছে। প্রত্যেহ বিকেল ৫টার মধ্যে স্থানীয় বা যে কোন ব্যক্তিদের ক্যাম্প ত্যাগ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও রোহিঙ্গাদের বেলায় ক্যাম্প ত্যাগে বা বাইরে যাওয়া-আসার ওপর কোন ধরনের নিয়ম নেই। রোহিঙ্গারা যখন ইচ্ছে-তখনই ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন বাজারে, এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে, গ্রামে ও সীমান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নারী পাচারকারী দালালের জেল ॥ নারী পাচারকারী দালাল মিনু আরাকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করেছেন উখিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) একরামুল ছিদ্দিক। গৃহকর্মীসহ বিভিন্ন চাকরি দেয়ার প্রলোভনে ফেলে রোহিঙ্গা যুবতীদের কৌশলে পাচার করা হচ্ছে। উখিয়ার কুতুপালং, নারপাড়া, কক্সবাজার শহরের বিজিবি ক্যাম্পসহ কয়েকটি এলাকাকেন্দ্রিক গড়ে উঠেছে রোহিঙ্গা পাচারকারী সিন্ডিকেট। পাচার কাজে বেশিরভাগ পুরনো রোহিঙ্গাদের স্ত্রী ও বাংলাদেশী নারীদের ব্যবহার করা হয়। পুরনো রোহিঙ্গা পুরুষরা থাকে পাচারের অন্তরালে। তবে সড়ক পথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশি বেড়ে যাওয়ায় পায়ে হেঁটে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে চট্টগ্রাম শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
×