ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

১২শ’ মেও মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হলো

প্রকাশিত: ০৫:০১, ২৯ জানুয়ারি ২০১৮

১২শ’ মেও মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হলো

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা মতারবাড়ি এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রবিবার তিনি গণভবন থেকে এ বিদ্যুত কেন্দ্রের ভিত্তি স্থাপন করেন। জাপান সরকারের ঋণ সহায়তায় বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে কোল বাংলাদেশ পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে কাজ করতে আসা বিদেশী নাগরিকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সরকারের অগ্রাধিকারের ১০ প্রকল্পের মধ্যে মাতারবাড়ি বিদ্যুত প্রকল্পটি রয়েছে। খরচের দিক দিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের পরই রয়েছে মাতারবাড়ির প্রকল্পটি। ২০১৫ সালের আগস্টে মাতারবাড়িতে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে ৩৬ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করে সরকার। একনেকে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পের কার্যপত্রে বলা হয়, জাইকা এ প্রকল্পে ২৯ হাজার কোটি টাকা দেবে। বিদ্যুত কেন্দ্রর সঙ্গে একটি চ্যানেল ছাড়াও জেটি নির্মাণ করবে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। এর সঙ্গে মাতাবাড়িতে একটি কয়লা বন্দর নির্মাণ করা হবে। এ বন্দরটি সরকার গভীর সমুদ্র বন্দর হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। বন্দরটিসহ এ প্রকল্পের প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্র আমদানি করা কয়লানির্ভর হওয়ায় কয়লা আনার জন্যই এ বন্দর করা হচ্ছে। এছাড়াও মাতারবাড়িতে বৃহৎ বিদ্যুত হাব নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ইতোমধ্যে চীন, মালেশিয়া এবং সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে এমওইউ সই করা হয়েছে। এখানের বন্দরটি ১০ হাজার মেগাওয়াট এর কয়লা চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য জ¦ালানি যোগানের উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হচ্ছে। বন্দরটি ৫৯ ফুট ড্রাফট পাওয়া যাবে। বন্দরে ৮০ হাজার মেট্্িরক টন ধারণ ক্ষমতার জাহাজ ভিড়তে পারবে। দেশের আমদানি রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্দরটিকে গভীর সমুদ্র বন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে চায় সরকার। বন্দরটি নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা জরিপ চালাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোনী অনুষ্ঠানের বক্তব্যের শুরুতেই গুলশান ট্রাজেডিতে নিহন জাপানি নাগরিকদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন কাজ করতে এসে গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলায় কয়েকজন জাপানি মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনার পরও আমাদের সঙ্গে কাজ করার জন্য আমি তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমাদের তরফ থেকে যতটুকু সম্ভব তাদের নিরাপত্তা দেব। এ সময় তিনি মহেশখালীতে স্থানীয় প্রতিনিধি ও জনগণকে বিদেশীদের নিরাপত্তার বিষয়ে নজর রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তারা আমাদের মেহমান, তারা উন্নয়নে আমাদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। তাই তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের দেখতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, জমি অধিগ্রহণে যারা অর্থ পাননি তাদের জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি। সেখানে শুধু বিদ্যুতকেন্দ্র গড়ে উঠছে না, সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকায় পর্যটন শিল্প গড়ে উঠবে। তিনি আরও বলেন, যেকোনও কাজে বিদ্যুত অপরিহার্য। আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রত্যন্ত এলাকাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মহেশখালী এলাকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রকৃতির খেয়ালখুশিতে সেখানের মানুষের জীবন জীবিকা চলে। সেখানে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে উঠছে। এছাড়া আরও অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। ফলে ওই এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকা- গতিশীল হবে। তিনি বলেন, আমরা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধিশালী দেশ হিসেবে গড়তে চাই। আজ ৯০ ভাগ মানুষ বিদ্যুত সুবিধা পাচ্ছে। যার মধ্যে ৪৬ লাখ সোলার সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মানুষের অর্থনৈতিক সচ্ছলতার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। এসব বিষয় মাথায় রেখে আমরা কয়লা, পরমাণু, জলবিদ্যুত উৎপাদন এবং নেপাল-ভুটান-ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানির ব্যবস্থা করছি। কারণ আমরা দেখেছি বিদ্যুত দিলেই মানুষের অর্থনৈতিক সনচ্ছলতা আসছে। আজ দেশে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারছি। আমরা শুধু বিদ্যুত উৎপাদনই করছি না সেজন্য সঞ্চালন লাইনও নির্মাণ করছি। প্রতিটি ঘরে আলো জ্বালানো এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। বেসরকারী পর্যায়ে বিদ্যুত খাতকে উন্মুক্ত করায় আজ দেশের মানুষ সুফল পাচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরাই প্রথম বিদ্যুত খাতকে বেসরকারী পর্যায়ে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। নতুন কিছু করতে গেলে অনেকে বলে গেল গেল সব গেল। কিন্তু আমি আশাবাদী। আইন করে বেসরকারী পর্যায়ে বিদ্যুত উৎপাদন উন্মুক্ত করেছিলাম বলে মানুষ আজ সুফল পাচ্ছে। মহেশখালীর মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা ইউনিয়নের ১ হাজার ৪১৪ একর জমিতে এ বিদ্যুত প্রকল্পটির প্রাথমিক অবকাঠামোর ১৭ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এখন থেকে বিদ্যুত প্রকল্পর মূল কাজ শুরু হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এ নির্মাণ কাজ শুরু হলো। তিনি জানান, মাতারবাড়ি প্রকল্পের জন্য ইতোমধ্যে ৪০০ বিদেশী শ্রমিক এসেছে। পর্যায়ক্রমে এখানে প্রায় এক হাজার বিদেশী শ্রমিক কাজ করবেন। গুলশান হামলার ঘটনায় সাতজন জাপানি প্রকৌশলীর মৃত্যুর ঘটনায় মাতারবাড়ি প্রকল্পও পিছিয়ে যায়। সব সংশয়ের অবসান ঘটিয়ে গত বছরের জুলাইয়ে জাপানের তিনটি প্রতিষ্ঠানের একটি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। বলা হচ্ছে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এ বিদ্যুত প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে তাদের। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবনে জাইকার ভাইস প্রেসিডেন্ট, জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতসহ জাপানি প্রতিনিধিরা উপস্থিতি ছিলেন। অন্যদিকে মহেশখালীতে ছিলেন জাপানের রাষ্ট্রদূতসহ অন্য একটি প্রতিনিধি দল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
×