ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এসএসসির প্রশ্নফাঁস রোধে আজ থেকে কোচিং সেন্টার বন্ধ

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৬ জানুয়ারি ২০১৮

এসএসসির প্রশ্নফাঁস রোধে আজ থেকে কোচিং সেন্টার বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আলাদা আলাদা প্রশ্নে নয়, সকল শিক্ষা বোর্ডে একই প্রশ্নে অনুষ্ঠিত হবে আসন্ন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া এ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস বন্ধে আজ থেকেই দেশের সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখতে হবে পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত। এবার পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস এমনকি পরীক্ষার পরও ফাঁসের প্রমাণ মিললে সে পরীক্ষা বাতিল করা হবে। এছাড়া পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর কেন্দ্রে প্রবেশও বাধ্যতামূলক। পরীক্ষা চলাকালীন ফেসবুকসহ সকল সামাজিক মাধ্যম সাময়িক বন্ধ রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে দু-একদিনের মধ্যেই। আসন্ন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষাকে নিবিঘœ করতে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে পরীক্ষা সংক্রান্ত আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ আলমগীর, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহানারা বানু, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম পরিচালক নাজমুল আলম ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। গত কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার আগের রাতে বা পরীক্ষার ঠিক আগ মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশ্নফাঁস হয়ে যাচ্ছে। পরীক্ষার দিন সকালে ফেসবুকে মিলছে প্রশ্ন। সরকারের কোন সংস্থা এমনকি বিটিআরসিও এ সঙ্কটের কূলকিনারা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিটিআরসি ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের দেয়া নানা সুপারিশের আলোকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নফাঁস বন্ধে কঠোর পদক্ষেপে যেতে চায় মন্ত্রণালয়। গত কয়েক বছর ধরে পরীক্ষার আগে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ মিললেও পরীক্ষা বাতিল করা হয়নি। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ পরীক্ষার বিষয়ে তাদের নতুন কিছু সিদ্ধান্তের কথা জানালেন। প্রথমেই বলেন, বাংলাদেশে আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে প্রতিটিই আলাদা প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেয়ায় কোন কোন বোর্ডের শিক্ষার্থীরা মাঝেমধ্যেই খারাপ ফল করেছে বা অন্য বোর্ডের শিক্ষার্থীর তুলনায় নম্বর কম পেয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়েছে শিক্ষার্থীরা। আসন্ন পরীক্ষায় অভিন্ন প্রশ্নে সকলেই পরীক্ষা দিতে পারবে। এবার একই প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ায় ফলাফলে তারতম্য থাকবে না বলে উচ্চশিক্ষায় ভর্তিচ্ছুদের সমসুযোগ সৃষ্টি হবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ১ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসএসসি ও সমমানের তত্ত্বীয় বিষয়ে পরীক্ষা হবে। কোচিং সেন্টারগুলো প্রশ্নফাঁস করার একটি ‘আখড়া’। তারা যদি প্রশ্নফাঁস করতে পারে তাহলে সেখানে ছাত্র বেশি যায়। আমরা শুক্রবার (আজ) থেকেই কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখব। পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ থাকবে। শুক্রবার থেকে দেশের সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ করতে সভায় উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের নির্দেশও দেন শিক্ষামন্ত্রী। এর আগে পরীক্ষা শুরুর তিন দিন আগে কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোচিং সেন্টার আজ থেকেই বন্ধ রাখতে হবে। প্রশ্নফাঁস বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে জড়িত থাকলে কোন অপরাধীর রক্ষা নেই। সে যেই হোক। কোচিং সেন্টারগুলোর সঙ্গে প্রশ্নফাঁস চক্রের সম্পৃক্তরা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। তাই এবার পরীক্ষার সময় কোন কোচিং খোলা রাখা যাবে না। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে শুধু কেন্দ্রে প্রবেশ নয়, অবশ্যই সিটে বসতে হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগেই প্রশ্নের প্যাকেট খোলা হবে। এর আগে কেউ প্রশ্নের প্যাকেট খুললে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব। ঠিক সময়ে কেন্দ্রে পৌঁছাতে যানজট কিংবা পরীক্ষা কেন্দ্র দূরে হলে তা আগে থেকেই বিবেচনায় নিয়ে বাসা থেকে রওনা হওয়ার পরামর্শ দেন শিক্ষামন্ত্রী। কেন্দ্রে মোবাইল ব্যবহারে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, কেবল কেন্দ্র সচিব একটি সাধারণ ফোন (স্মার্ট ফোন নয়) সঙ্গে রাখতে পারবেন। অন্য কেউ কোন ধরনের মোবাইল সঙ্গে রাখতে পারবেন না। আমরাও পরীক্ষা কেন্দ্রে গেলে মোবাইল বাইরে রেখে যাব। পরীক্ষা চলাকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার আগের দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ফেসবুক, ভাইভার, টুইটার, ইমু, হোয়াটস এ্যাপ, উইচ্যাটসহ সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধের বিষয়ে আমরা বিটিআরসি এবং আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। সামাজিক মাধ্যমগুলো কত ঘণ্টার জন্য বন্ধ থাকবে এটা দুই-একদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত হবে। মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা সবদিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি। আগে বিজি প্রেস থেকে প্রশ্নফাঁস হতো, সেটা বন্ধ করেছি। কিন্তু এখন শিক্ষকরাই প্রশ্নফাঁস করছেন। তবে সব শিক্ষক নন, কিছু শিক্ষক এসবের সঙ্গে জড়িত। কেউ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটালে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া কেন্দ্রে মোবাইল কোর্টও থাকবে, তবে দেশের সব কেন্দ্রে ভ্রাম্যমাণ আদালত দেয়া হয়ত সম্ভব হবে না। আমরা পরীক্ষার সময় প্রশ্নফাঁসের ব্যাপারে খুবই ডেসপারেট, খুবই এ্যাগ্রেসিভ। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এছাড়া আর উপায় নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস এমনকি পরীক্ষার পরও ফাঁসের প্রমাণ মিললে সে পরীক্ষা বাতিল করা হবে। সচিব সোহরাব হোসেইন বলেন, আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, যদি এ রকম ঘটনা (প্রশ্নফাঁস হয়) ঘটে, পরীক্ষার পরও যদি প্রমাণ পাওয়া যায় যে, পরীক্ষার আগে প্রশ্ন আউট হয়েছিল সেক্ষেত্রে সে পরীক্ষা বাতিল হবে। কোন অবস্থাতেই ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। পরীক্ষা হওয়ার পরও যদি প্রমাণ হয় যে, এই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে তাহলে সেই পরীক্ষাটি অবশ্যই বাতিল করব। কোন অবস্থাতেই কোন ধরনের আপস আমরা করতে রাজি নই।
×