ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাবি উপাচার্য ঘেরাও নিয়ে দুদল ছাত্রের সংঘর্ষ

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮

ঢাবি উপাচার্য ঘেরাও নিয়ে দুদল ছাত্রের সংঘর্ষ

বিশ^বিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতাদের বহিষ্কারসহ তিন দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় উভয়পক্ষের প্রায় অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। ছাত্রলীগের ১২ জনকে বিশ^বিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আবিদ আল হাসান। এদিকে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীদের ২১ জনকে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় মঙ্গলবার ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছিল উত্তপ্ত। নব্বইয়ের পর এমন ঘটনা প্রত্যক্ষ করেননি বলে জানান বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তারা বলেন, বিগত কয়েক যুগ ধরে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছিল। সম্প্রতি বিশ^বিদ্যালয় ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে বাম ছাত্রসংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তিন দফা দাবিতে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখে। তাদের দাবির মধ্যে ছিল- অধিভুক্ত ৭ কলেজ বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও যৌন নিপীড়নকারী ছাত্রলীগ নেতাদের বহিষ্কার, প্রশাসনের করা নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অজ্ঞাতনামা মামলা প্রত্যাহার ও প্রক্টরের পদত্যাগ। উপাচার্য অবরোধ গুরুতর পর্যায়ে উপনীত হলে এরপর বিকেল ৪টার দিকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসানসহ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে উপাচার্যকে মুক্ত করে তার কার্যালয়ে নিয়ে যান। এ সময় উপাচার্যের কক্ষের সামনের করিডোরে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের তাড়া করে কয়েকজনকে মারধর শুরু করে ছাত্রলীগ। ফলে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এরপর কিছুক্ষণের জন্য আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের দরজার সামনে থেকে সরে গেলেও বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিভিন্ন হল থেকে বিপুল সংখ্যক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী এসে রড ও লাঠিসোটা নিয়ে আন্দোলনকারীদের অবস্থানে হামলা চালায়। হামলার পর আন্দোলনকারীরা উপাচার্য কার্যালয় থেকে সিনেট ভবনের দিকে যাওয়ার ফটক দিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সেখানে আরেক দল ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর হামলার শিকার হয় আন্দোলনকারীরা। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া করলে প্রশাসনিক ভবনের ভেতর দিয়ে মূল ফটক হয়ে বেরিয়ে যেতে চায় আন্দোলনকারীরা। কিন্তু ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ধাওয়া করে আন্দোলনকারীদের মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র মাহাদী অপু, ছাত্র ফেডারেশন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের প্রগতি বর্মনও ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হয়েছেন। এদিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নিশিতা ইকবাল নদী, শামসুন্নাহার হলের সভাপতি নিপু ইসলাম তন্বী, কুয়েত মৈত্রী হলের সেক্রেটারি শ্রাবণী ইসলাম শায়লা ও সভাপতি ফরিদা পারভিন আহত হয়েছেন বলে জানান ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা। সংঘর্ষের ঘটনায় আবিদ আল হাসান বলেন, একটা গ্রুপ বিশ^বিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে অবরুদ্ধ ভিসি স্যারকে উদ্ধার করতে গিয়েছি। এ সময় অবস্থানরত বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর হামলা করলে আমরা মীমাংসা করার চেষ্টা করেছি। এ বিষয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট’র ঢাবি শাখা সভাপতি ইভা মজুমদার বলেন, ‘আমরা নিপীড়নের বিচার দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এসেছিলাম। কিন্তু ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমাদের অনেক বোনকে মেরেছে। এর আগে দুপুর ১২টায় উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে এসে তিনটি ফটক একে একে ভেঙ্গে ফেলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তিন ঘণ্টার বেশি অবরুদ্ধ থাকার পর বিকেল সোয়া ৩টার দিকে বোর্ড অব এডভান্সড স্টাডিজের একটি সভায় অংশ নিতে সিনেট ভবনে যেতে নিজের কার্যালয়ের পেছনের ফটক দিয়ে বের হন উপাচার্য; পথে উপাচার্যের চারপাশ ঘিরে অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র মাসুদ আল মাহাদী উপাচার্যের কাছে তাদের দাবিগুলো তুলে ধরে তা পূরণের দাবি জানান। জবাবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী নিয়মতান্ত্রিকভাবে একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জবাবে আন্দোলনকারীরা প্রক্টরের পদত্যাগ এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করা মামলা প্রত্যাহারের দুটি দাবি তৎক্ষণাৎ ঘোষণা দিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। এর মধ্যেই বেলা পৌনে ৪টার দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসানসহ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে উপাচার্যকে মুক্ত করেন। এর আগে গত রবিবার (২১ জানুয়ারি) তিন দফা দাবি আদায়ে আজ (মঙ্গলবার) পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়ায় আজ আবারও আন্দোলনে নামেন তারা।
×