ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষতিপূরণ বিষয়েও বিটিআরসির মনিটরিং নেই

সীমাহীন কলড্রপে অতিষ্ঠ মোবাইল ফোন গ্রাহকরা

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১২ জানুয়ারি ২০১৮

সীমাহীন কলড্রপে অতিষ্ঠ মোবাইল ফোন গ্রাহকরা

ফিরোজ মান্না ॥ সীমাহীন কলড্রপে মোবাইল ফোন গ্রাহকরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। গ্রাহকরা কলড্রপের ক্ষতিপূরণ ফেরত পাচ্ছে কি-না এমন কোন মনিটরও বিটিআরসি করছে না। বিষয়টি নিয়ে গ্রাহকরা অন্ধকারেই রয়ে যাচ্ছে। একটি মাত্র অপারেটর গত বছর তাদের ৬০ লাখ মিনিট কলড্রপের হিসাব বিটিআরসিতে জমা দিয়েছে। বাকি তিনটি অপারেটর কোন হিসাব জমা দেয়নি। তারা মুখে বলছে, কলড্রপের ক্ষতিপূরণের টাকা ফেরত দেয়া হচ্ছে। বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন এক কোটি ৯০ লাখ মিনিট কলড্রপ হচ্ছে বিভিন্ন অপারেটরের। অপারেটরদের দিনে কলড্রপ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই টাকার কোন রাজস্ব সরকার পাচ্ছে না। বিটিআরসি জানিয়েছে, গ্রাহকদের কলড্রপের টাকা বা ‘টকটাইম’ ফেরত দেয়ার নির্দেশটি বাস্তবায়নের জন্য মোবাইল অপারেটরদের গত বছরের জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া দিয়েছিল। কিন্তু জুনের মধ্যে অপারেটররা এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করেনি। আরও পরে তারা বিটিআরসিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, কলড্রপের টাকা গ্রাহককে ফেরত দেয়া হচ্ছে। নিয়মানুযায়ী প্রতি মাসের কলড্রপের হিসাব বিটিআরসিতে জমা দেয়ার কথা থাকলেও একটি বাদে তিনটি অপারেটর এ হিসাব জমা দেয়নি। এই তিন মোবাইল অপারেটর টাকা ফেরত দিচ্ছে কি-না এটা বিটিআরসিও জানে না। এ বিষয়ে বিটিআরসির সচিব সারওয়ার আলম বলেন, কলড্রপের ক্ষতিপূরণ সব অপারেটর ফেরত দিয়েছে, এমন রিপোর্ট বিটিআরসিতে জমা হয়নি। একটি মাত্র অপারেটর গত বছরের হিসাব বিটিআরসিতে জমা দিয়েছে। এতে দেখা গেছে, ওই অপারেটর প্রায় ৬০ লাখ মিনিট কলড্রপের ক্ষতিপূরণ ফেরত দিয়েছে গ্রাহককে। এখন বলা মুশকিল অন্য অপারেটররা কলড্রপের ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে কি-না। যদি তারা কলড্রপের ক্ষতিপূরণ দেয়- তাহলে তারাও বিটিআরসিতে হিসাব জমা দিত। সূত্র মতে, বর্তমানে চারটি অপারেটরের দিনে মোট কলের সংখ্যা এক শ’ ৯০ কোটি মিনিট। এর মধ্যে গড় কলড্রপের হার এক শতাংশ। এই হিসেবে প্রতিদিন কলড্রপ হচ্ছে এক কোটি ৮০ লাখ মিনিট। বিটিআরসির হিসেব অনুযায়ী বর্তমানে দেশে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ১৪ কোটি। এতে গ্রাহক প্রতি কলড্রপের হার শূন্য দশমিক ১৪ শতাংশের বেশি। অপারেটররা বলছে, ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জের (আইসিএক্স) ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের দুর্বলতার কারণে কলড্রপ হচ্ছে। এর বাইরে ফাঁকা স্থানে হঠাৎ উঁচু ভবন নির্মাণ এবং থ্রিজি নেটওয়ার্ক কার্পেটিংয়ের কারণেও কলড্রপ হয়। কলড্রপ একদম হবে না এ কথা বলা যাবে না। নেটওয়ার্কের কারিগরি ত্রুটি কখন দেখা দেবে তা বলা যাবে না। যে কোন সময় এই ত্রুটি দেখা দিতে পারে। তখন কম বেশি কলড্রপ হবে। আইটিইউর বেঁধে দেয়া নিয়মেও কলড্রপ স্বীকৃত। বিটিআরসি বলছে, কলড্রপ হতে পারে। তবে তা হতে হবে সহনীয় মাত্রায়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে কলড্রপ হলে গ্রাহক টাকা বা সমপরিমাণ ‘টক টাইম’ ফেরত পান। বিশ্বের অনেক দেশেই এই নিয়ম চালু আছে। আমরা কলড্রপের টাকা গ্রাহকদের ফেরত দেয়ার জন্য কয়েক বছর ধরে অপারেটরদের বলে যাচ্ছি। কিন্তু তারা নানা কারণ দেখিয়ে এতদিন কলড্রপ ফেরত দেয়নি। এখন দিলেও তা কত দিচ্ছে এমন হিসাব বিটিআরসিকে জানাচ্ছে না। বিটিআরসি বলছে, অপারেটরদের দেয়া হিসেবের বাইরে অনেক বেশি কলড্রপ হচ্ছে।
×