ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কে হচ্ছেন ঢাকা উত্তরের মেয়রপ্রার্থী- নানা জল্পনা

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭

কে হচ্ছেন ঢাকা উত্তরের মেয়রপ্রার্থী- নানা জল্পনা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ এখনও উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়নি। আইনী জটিলতা কাটিয়ে নির্ধারিত সময়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব কি না-তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে শূন্য ঘোষিত ডিএনসিসিতে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মেয়র পদে উপ-নির্বাচন করতে হবে। তাই আনিসুল হকের মৃত্যুতে শূন্য মেয়র পদে উপ-নির্বাচন নিয়ে এরইমধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। কে হচ্ছেন নতুন মেয়র, কে শেষ করবেন অকাল মেয়র আনিসুল হকের অসমাপ্ত কাজ, সে সব নিয়ে আলোচনা এখন গলির মোড়ে চায়ের দোকান থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত না হলেও বসে নেই দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এক্ষেত্রে বিএনপি কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও যতই দিন গড়াচ্ছে ক্ষমতাসীন দলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকা ততই দীর্ঘ হচ্ছে। সর্বশেষ এই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠনের (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম। ইতোমধ্যে তিনি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এখন মেয়র আনিসুল হকের মতো কোন ব্যবসায়ী নেতাকেই মেয়র পদে আওয়ামী লীগ বেছে নেবে, নাকি রাজনীতির মাঠে পরীক্ষিত কাউকে মনোনয়ন দেবে- এ নিয়ে দলটির ভিতর-বাইরে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। দলীয় প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও চলছে নানা হিসাব-নিকাশ; নানামুখী তদবির। এ নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ এখনি মন্তব্য না করলেও ঘুরে ফিরেই আসছে কয়েকটি নাম। রংপুরের নির্বাচনে ভরাডুবি ঘটলেও আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে গত নির্বাচনের প্রার্থী তাবিথ আউয়ালকেই ট্রাম্পকার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে চায় বিএনপি। বিষয়টি নিয়ে দলটির শীর্ষ পর্যায়ে এরইমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু না হলেও শনিবার রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের সভাপতিম-লীর সভায় ডিএনসিসি নির্বাচনের বিষয়টিও আলোচনায় স্থান পায়। আলোচনাকালে মেয়র পদে কাদের নাম আসছে জানতে চাইলে সভাপতিম-লীর সদস্যরা ধারাবাহিকভাবে আলোচনায় শীর্ষে থাকা কয়েকজনের নাম উত্থাপন করেন। এ তালিকায় মেয়র আনিসুল হকের সহধর্মিনী রুবানা হক, তার ছেলে নাভিদুল হক ছাড়াও ছিলেন- ঢাকা-৯ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী, ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য একেএম রহমতুল্লাহ, সাবেক সংসদ সদস্য এইচ বি এম ইকবাল, চিত্রনায়িকা সারাহ বেগম কবরী, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের ছেলে তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ এবং বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলামের নাম উঠে আসে। সূত্র জানায়, বৈঠকে এসব মনোনয়ন প্রত্যাশীর কার কেমন অবস্থান প্রধানমন্ত্রী জানতে চাইলে সভাপতিম-লীর সদস্যরা এ ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলামের অবস্থা কেমন জানতে চাইলে বৈঠক উপস্থিত এক নেতা বলেন, এই ব্যবসায়ী নেতার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ কিংবা অপপ্রচার নেই। এরপর আরও কয়েক নেতা তার বিষয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এ সময় জানানো হয়, দলের মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করার বিষয়ে জরিপ চালানো হচ্ছে। জরিপ শেষ হলেই দলের প্রার্থিতা ঘোষণা করা হবে। এ বিষয়ে হঠাৎ করেই সামনে চলে আসা ব্যবসায়ী নেতা আতিকুল ইসলাম সোমবার সাংবাদিকদের কাছে তার ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, মেয়র আনিসুল ইসলামের জায়গায় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দিলে আমার প্রথম কাজই হবে মেয়রের অসমাপ্ত কাজ সম্পূর্ণ করা। তার দেখা স্বপ্নের ঢাকা বাস্তবায়ন করা। আর তা করতে পারলেই আনিসুল হকের আত্মা শান্তি পাবে। ঢাকাবাসীও স্বস্তি পাবে। সবার দোয়া থাকলে অবশ্যই আমি জয়ী হব। স্বপ্নের ও প্রত্যাশার ঢাকা বিনির্মাণে আমি কাজ করে যাব। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল মেয়র নির্বাচনের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে বিজয়ী হয়ে নগরবাসীর সেবার দায়িত্ব নেন ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হক। দুই বছরের বেশি সময়ে সবার মন জয় করে মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তবে লন্ডনে প্রায় ৪ মাস গুরুত্ব অসুস্থ থাকার পর গত ৩০ নবেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ঢাকার এই জনপ্রিয় মেয়র। এদিকে ৪ ডিসেম্বর আনিসুল হকের মৃত্যুতে মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা করে গেজেট জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। উপ-সচিব মোঃ মাহমুদুল আলম স্বাক্ষরিত গেজেটে ১ ডিসেম্বর থেকেই মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। এ কারণে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ সিটির মেয়র পদে উপ-নির্বাচনের বাধ্যবাদকতা রয়েছে। এ কারণেই নির্বাচন কমিশন এবং প্রধান দুই রাজনৈতিক দল মেয়র নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিশাল ব্যবধানে পরাজয়ের কারণে সরকারের শেষ সময়ে ডিএনসিসি’র মেয়র পদে উপনির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটি এমন কাউকে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করাতে চাইছেন যিনি ব্যক্তি হিসেবে সবার কাছে পরিচ্ছন্ন এবং মেয়র আনিসুল হকের মতো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও জনপ্রিয়। সেক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন ও স্বচ্ছ ইমেজের দিক থেকে ঘুরে ফিরেই দল ও দলের বাইরে বেশ কয়েকজনের নামই বেশ জোরেশোরেই উঠে আসছে। সেক্ষেত্রে মনোনয়ন দৌঁড়ে এখন স্পষ্টতই এগিয়ে রয়েছেন সাবেক বিজিএমই’র সভাপতি আতিকুল ইসলাম। তবে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডিএনসিসি নির্বাচন সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা এখনও কাটেনি। আদালতের মাধ্যমে নির্বাচন আটকে যাবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতা জানান, আইনী জটিলতা থাকায় শেষ পর্যন্ত ঠিক কী হবে, তা স্পষ্ট না হলেও আমাদের প্রস্তুতি বসে থাকবে না। আমরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রার্থী চূড়ান্ত করার পাশাপাশি বিজয়ের ব্যাপারে যথাসম্ভব সব ধরণেই প্রস্তুতি আমরা এগিয়ে নেব।
×