ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রসিক নির্বাচন

আচরণবিধি লঙ্ঘন না করতে সতর্ক করা হলো প্রতিমন্ত্রী রাঙ্গাকে

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭

আচরণবিধি লঙ্ঘন না করতে সতর্ক করা হলো প্রতিমন্ত্রী রাঙ্গাকে

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর, ১৬ ডিসেম্বর ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর অভিযোগের ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করেছেন রংপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার। শুক্রবার রাতে ফোন করে প্রতিমন্ত্রীকে সতর্ক করেন তিনি। রিটার্নিং কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার জানান, নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘন না করার জন্য প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে । শুক্রবার বিকেলে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা নগরীর জাহাজ কোম্পানি মোড় অবরোধ করে প্রতিমন্ত্রী রাঙ্গাকে রংপুর ত্যাগের আল্টিমেটাম দেন। তবে প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ জাপা নেতা আব্দুর রাজ্জাক জানান, মন্ত্রী সরকারী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য ১৫ থেকে ২২ ডিসেম্বর শনিবার দুপুর পর্যন্ত রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলা সফর করবেন। প্রতিমন্ত্রী রংপুরে অবস্থান করায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রতিমন্ত্রীর সফরসূচীতে ২১ তারিখ রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনের কথা রয়েছে। রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি ম-ল জানান, প্রতিমন্ত্রী রংপুর সদরে থেকে নির্বাচন কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন বলে জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দিয়েছেন। সেটা কেন রিটার্নিং কর্মকর্তা আমলে নিচ্ছেন না আমরা তা বুঝতে পারছি না। তিনি বলেন, একজন প্রতিমন্ত্রী হয়ে নির্বাচনের কোন বিধিতে তিনি এলাকায় থেকে যাবেন সেটা নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্তাব্যক্তিরা দেখেও দেখছেন না। এতে করে সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করবে। কাউন্সিল প্রার্থীর নির্বাচনী অফিসে আগুন ॥ শনিবার সকালে নগরীর ১৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিল প্রার্থী আবেদ আলীর নির্বাচনী অফিসে আগুন দেয়ায় অফিসের সামিয়ানা, পোস্টার ভস্মীভূত হয়েছে। আবেদ আলী জানান, শনিবার সকালে ডারারপাড় এলাকায় তার নির্বাচনী অফিসে কে বা কারা আগুন লাগিয়ে দেয়। তিনি ঘটনাটি তার সমর্থকদের মাধ্যমে জানার পরই রংপুরের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার সুভাষ চন্দ্র সরকার, পুলিশ সুপার ও কোতোয়ালি থানার ওসিকে জানান। তিনি বলেন, পরাজয়ের আশঙ্কায় প্রতিপক্ষরা আমার অফিসে আগুন দিয়েছে। রংপুর কোতোয়ালি থানার ওসি বাবুল মিয়া জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। কারা এর সঙ্গে জড়িত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আর মাত্র তিন দিন চলবে নির্বাচনী প্রচার। শেষ মুহূর্তের প্রচারে আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে প্রার্থী ও তার নির্বাচনী কর্মীরা। কাক ডাকা ভোর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত চলছে দলীয় নেতা-কর্মীদের বৈঠক, শলা-পরামর্শ, প্রেসব্রিফিং এবং তারপর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পাড়ায় মহল্লায় ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ক্লান্তিহীন ছুটে বেড়ানো। নির্বাচনকে ঘিরে পোস্টারের মালা পড়ে রংপুর মহানগর সেজেছে নতুন সাজে। নগর জুড়েই লাঙ্গল, নৌকা ও ধানের শীষের পোস্টারে সয়লাব। অন্য মেয়র প্রার্থীদের পোস্টারও রয়েছে উল্লেখ করার মতো। কাউন্সিল প্রার্থীদের পোস্টারও চোখে পড়ার মতো। শহরের প্রতিটি অলিগলি, পাড়া-মহল্লায় শুধুই পোস্টার আর পোস্টার। এ যেন পোস্টারের নগরী। শহরের এক প্রান্ত থেকে অপরপ্রান্ত পর্যন্ত সড়কের উপরে রশি দিয়ে ঝুলানো হয়েছে বিভিন্ন প্রার্থীর ছবি ও প্রতীক সংবলিত পোস্টার। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী পোস্টার কোন দেয়ালে সাঁটানো যাবে না। প্লাস্টিকের ভিতরে টানাতে বলা হয়েছে। ফলে সড়কের ওপরই দড়ি দিয়ে বেঁধে টানানো হচ্ছে পোস্টার। শুধু প্রধান সড়ক নয়, পাড়া-মহল্লায়ও ছেয়ে গেছে পোস্টারে। কোন কোন জায়গায় ফেস্টুনও চোখে পড়ছে। প্রার্থী ও তাদের কর্মীরা নানা প্রতিশ্রুতি সংবলিত লিফলেট বিতরণ করছেন। তারা ভোটারদের দিচ্ছেন নানা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। এ ছাড়া ভোটারদের মন জয় করতে গানে, কবিতায়, সুরে ছন্দে মাইকে বাজানো হচ্ছে প্রার্থীদের গুণকীর্তন। প্রার্থীরা এখন এক মসজিদে নামাজ পড়ছেন না। প্রতিদিনই ভিন্ন ভিন্ন মসজিদ নামাজ পড়ছেন। ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন । দোয়া নিচ্ছেন। সেই সঙ্গে নির্বাচিত হলে ওই এলাকার জন্য কি কি করবেন সেই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। নামাজ পড়ে বের হলেই মুসল্লিদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে লিফলেট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে রসিক নির্বাচন নিয়ে অনেক বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে নগরবাসীর মধ্যে। মহানগরের প্রতিটি অলিগলি, পাড়া-মহল্লায় বইছে নির্বাচনী উত্তাপ, উৎসবের আমেজ। চায়ের দোকান, অফিস-কাচারী সর্বত্রই আলোচনার প্রধান ইস্যু রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রসিক নির্বাচনকে নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের একটি সূচক হিসেবে বিবেচনা করছেন। প্রধান তিন দলই এ নির্বাচনকে নিয়েছে ‘এ্যাসিড টেস্ট’ হিসেবে। নির্বাচন কমিশনের জন্যও এটা অগ্নিপরীক্ষা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপির নীতিনির্ধারকরা ঢাকায় বসে রংপুর সিটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন। এমনকি কেন্দ্রীয় নেতারাও নিজ দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে রংপুরের নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়ায় এ নির্বাচনের গুরুত্বকে বাড়িয়ে দিয়েছে। রংপুর সিটি এলাকায় এখন রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের আনাগোনা। নির্বাচনের প্রচারণায় এসে কেন্দ্রীয় নেতারা ভোটারদের সামনে তুলে ধরছেন বিভিন্ন দিক। বিএনপি নেতারা বর্তমান সরকারের অনিয়ম, দুর্নীতি-দুঃশাসন, গণতন্ত্রহীনতাসহ নানা কার্যক্রম তুলে ধরে ভোটারদের কাছে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ বিগত ৯ বছরে এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন তুলে ধরে ও আগামী দিনের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। অপরদিকে জাতীয় পার্টি সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নানা উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরে ও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে লাঙল প্রতীকে ভোট চাচ্ছে। নগরীর পাড়া-মহল্লায় এখন জাতীয় প্রতীকের প্রচারণা। এতে জাতীয় নির্বাচনের আমেজ অনুভব করছেন নগরবাসী।
×