ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রুমেল খান

জমে উঠেছে বিপিএল ফুটবল

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

জমে উঠেছে বিপিএল ফুটবল

ঘরোয়া ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর ‘সাইফ পাওয়ার ব্যাটারি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ’ ফুটবলের খেলা বেশ জমে উঠেছে। আর মাসখানেকের মধ্যেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা পেশাদার লীগের দশম আসরের। মোট খেলা হবে ২২ রাউন্ডের। ইতোমধ্যেই শেষ ১৬ রাউন্ডের খেলা। এই লীগে এবার কোন্ দল চ্যাম্পিয়ন হতে যাচ্ছে, সেটা জানা যাবে আর বাকি ছয় রাউন্ডের মধ্যেই। তবে ১২ দলের সবাই তো আর শিরোপাটা নিজের করে নিতে পারবে না। চ্যাম্পিয়ন কে হবে, সেটা অবশ্য এখনই বলা বেশ মুশকিল। তবে পয়েন্ট টেবিলের দিকে চোখ বোলালে মোটামুটি আন্দাজ করা যায়, মূলত চারটি দলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে লীগ-শিরোপা। এই চারটি দল হচ্ছে চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড, শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব লিমিটেড, ঢাকা আবাহনী লিমিটেড এবং সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। এদের মধ্যে এর আগে কখনও লীগ জেতেনি চট্টগ্রাম আবাহনী। গত লীগে রানার্সআপ হয়েছিল তারা। আর সাইফ এই প্রথমবারের মতো প্রিমিয়ার লীগে খেলছে। শেখ জামাল ধানম-ি এর আগে লীগ জিতেছে তিনবার। আর ঢাকা আবাহনীর তো জবাবই নেই, বাংলাদেশ যুগে তারাই সবচেয়ে বেশি লীগ শিরোপা জিতেছে, ১৬ বার। এই শিরোপার মধ্যে আছে পেশাদার লীগের ৫টি শিরোপাও। এটাও সবার চেয়ে বেশি। তাছাড়া সর্বশেষ গত লীগের চ্যাম্পিয়ন দলও তারাই। গত ২৮ জুলাই থেকে লীগ শুরু হয়। যদিও গত ১২ জুনেই মাঠে গড়ানোর কথা ছিল লীগ। লীগ পেছানোর কারণ ছিল সাত ক্লাবের চার আবদার। এগুলো হলো : প্রচ- গরম, সামনে ঈদ, চিকনগুনিয়া জ্বর এবং অনুর্ধ-২৩ দলের ক্যাম্প। এর পরের দফায় দ্বিতীয় রেজিস্ট্রেশন উইন্ডো, জেএফএ অ-১৬ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ, বাংলাদেশ অ-১৯ জাতীয় ফুটবল দলের আবাসিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্প এবং এএফসি অ-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্বের খেলার জন্য লীগ পেছায়। তারপর নবেম্বরে এশিয়ান আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপ উপলক্ষে এক সপ্তাহের বিরতি দেয়া হয় লীগের। এবার পেছাচ্ছে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের জন্য দু’দিন। সামনে আরও তিন দিন পেছাবে জাতীয় এ্যাথলেটিক্সের জন্য। ১৬ রাউন্ড পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে ১২ দলের মধ্যে মূলত চারটি দলই শিরোপা-লড়াইয়ে আছে। এরা হচ্ছে চট্টগ্রাম আবাহনী, শেখ জামাল ধানম-ি, ঢাকা আবাহনী এবং সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। এদের পয়েন্ট হচ্ছে যথাক্রমে ৩৯, ৩৭, ৩৬ এবং ৩০। এদিকে রেলিগেশনের লড়াইয়েও আপাতত আছে সাত ক্লাব। এরা হলো বিজেএমসি (১৬), আরামবাগ (১৫), ব্রাদার্স (১৪), রহমতগঞ্জ (১৩), মুক্তিযোদ্ধা (১১) এবং এবং ফরাশগঞ্জ (১০)। পয়েন্ট টেবিলের তলানীতে আছে ‘লালকুঠি’খ্যাত ফরাশগঞ্জ। অথচ মজার ব্যাপার হচ্ছে, তাদের দুটি জয়ের একটি হচ্ছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনীর বিরুদ্ধে (১-০)! ব্যক্তিগত গোলদাতার লড়াইটাও হচ্ছে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। শেখ জামালের নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড রাফায়েল ওদোভিন আছেন এক নম্বরে। তার গোল ১১। ১০ গোল করে দ্বিতীয় স্থানে তার সতীর্থ গাম্বিয়ান ফরোয়ার্ড সলোমন কিং কানফর্ম। মোহামেডানের নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড কিংসলে চিগোজি ৯ গোল করে আছেন তৃতীয় স্থানে। আর দেশী ফরোয়ার্ডদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোল চট্টগ্রাম আবাহনীর ফরোয়ার্ড তৌহিদুল আলম সুবজের, ৭টি। এ পর্যন্ত চলতি লীগে হ্যাটট্রিক হয়েছে তিনটি। যার দুটিই করেছেন শেখ জামালের নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড রাফায়েল ওদোভিন। প্রথমটি করেন ফরাশগঞ্জের বিপক্ষে (গত ১৩ অক্টোবর, ফল জামাল ৫-০ গোলে জয়ী)। রাফায়েলের কৃতিত্ব হচ্ছে ওই ম্যাচে তিনি করেন চার গোল, যা এক ম্যাচে ব্যক্তিগত সর্বাধিক গোলের কৃতিত্ব। দ্বিতীয়টি করেন ১১ ডিসেম্বর, আরামবাগের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া সাইফের কলম্বিয়ান ফরোয়ার্ড হেম্বার ভ্যালেন্সিয়া করেন লীগের প্রথম হ্যাটট্রিকটি (২৬ আগস্ট, বিপক্ষ ব্রাদার্স, ফল সাইফ ৫-০ গোলে জয়ী)। সবচেয়ে বেশি গোলের যোগানদাতাদের তালিকায় আছেন ওয়ালী ফয়সাল। ঢাকা আবাহনীর এই লেফট ব্যাক এ পর্যন্ত ৭টি গোলের এসিস্ট করেছেন। এ পর্যন্ত ৯৬ ম্যাচে লাল কার্ড দেখানো হয়েছে ১৬ বার। সবচেয়ে বেশি লাল কার্ড দেখেছেন ব্রাদার্সের আরিফ খান জয় ২টি। সবচেয়ে বেশি হলুদ কার্ড দেখেছেন ফরাশগঞ্জের গাম্বিয়ান ডিফেন্ডার মালিক ম্যান্ডি, ৭ বার। এক বিরল ও শ^াসরুদ্ধকর ঘটনা ঘটেছে সোমবার, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে (দ্বিতীয় ও রাতের খেলায়)। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব ৬-৪ গোলে হারিয়েছে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘকে। না, এটা টাইব্রেকারের স্কোরলাইন নয়। দুই-দুইবার এগিয়ে গিয়েও হেরেছে আরামবাগ। প্রথম লেগেও তাদের ৩-১ গোলে হারিয়েছিল শেখ জামাল। মজার ব্যাপারÑ ওই ম্যাচেও আগে লিড নিয়ে হেরেছিল আরামবাগ! জামাল-আরামবাগ ম্যাচে মোট গোল হয়েছে ১০টি। চলতি লীগ তো বটেই, পেশাদার লীগের ইতিহাসেই এক ম্যাচে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। তবে রেকর্ডটি শেখ জামালের একার নয়। অংশীদার আছে। মজার ব্যাপার- সে অংশীদারের নামও শেখ জামাল ধানম-ি! হ্যাঁ, তারাই এ রেকর্ডটি আগেও একবার গড়েছিল। সেটা ২০১৫ সালের লীগে (২৮ জুন, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে)। দ্বাদশ রাউন্ডের ওই ম্যাচে শেখ জামাল ৯-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল ফরাশগঞ্জকে। ওই ম্যাচে হ্যাটট্রিকসহ ৪ গোল করেছিলেন হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড ওয়েডসন এ্যানসেলমে। এ ছাড়া হ্যাটট্রিক করেছিলেন মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলাম। ১টি করে গোল করেছিলেন গাম্বিয়ান মিডফিল্ডার ল্যান্ডিং ডার্বোয়ে এবং ফরোয়ার্ড তকলিস আহমেদ। মজার ব্যাপার- এই চার গোলদাতাই এখন খেলছেন ভিন্ন ভিন্ন ক্লাবে! এখন দেখার বিষয়, এবারের লীগে কোন দল অবনমিত হয় এবং কোন দল শিরোপা জেতে।
×