মোয়াজ্জেমুল হক/ এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের ঘটনা নিয়ে বিশ্বজুড়ে ঝড় উঠলেও পরিস্থিতি যেন দিন দিন জটিল আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। সর্বশেষ ক্যাথলিক খ্রীস্টানদের শীর্ষ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের গত তিনদিন মিয়ানমার সফরকালে সে দেশের সরকার ও সেনাবাহিনীর অনুরোধে তিনি ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করতে পারেননি। মিয়ানমারে ১৩৬ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে রোহিঙ্গা সম্প্রদায় অন্যতম এবং স্বীকৃত থাকলেও সে দেশের প্রণীত নীলনক্সার কারণে শুধুমাত্র রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। এছাড়া গত ২৫ আগস্ট রাতের পর থেকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর যে লোমহর্ষক আচরণ করা হয়েছে তাও অস্বীকার করে যাচ্ছে মিয়ানমার পক্ষ। নানামুখী বর্বরতার শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা রাখাইন থেকে দলে দলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে আশ্রয় নেয়ার পর জাতিসংঘসহ সারাবিশ্ব বিষয়টিকে বর্তমান সময়ের গণহারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও পোড়াও ও বিতাড়নের ঘটনা বলে স্বীকৃতি দিলেও মিয়ানমার এখনও পর্যন্ত তাদের নেতিবাচক মনোভাব পরিহার করেনি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের দ্বিপক্ষীক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার পরবর্তী পরিস্থিতিতে প্রত্যাবাসন এবং নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মাঝে ভয়ভীতি এবং উদ্বেগ উৎকণ্ঠা যেন আরও বেড়েই চলেছে।
বিষয়টি নিঃসন্দেহে সময় যে নেবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। ফলে সরকার নোয়াখালীর ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গার বসতি স্থাপনে মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে ভাসান চরকে বসবাসের অনুপযোগী ও বন্যাপ্রবণ এলাকা আখ্যায়িত করে সেখানে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিরোধিতা জানিয়েছে।
এদিকে, মিয়ানমারে তিনদিনের সফর শেষে পোপ ফ্রান্সিস আজ বৃহস্পতিবার থেকে তিনদিনের বাংলাদেশ সফরে আসছেন। বাংলাদেশে তিনি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ এবং খ্রীস্টান সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলবেন। এমনকি কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের থেকে ছোট আকারের সদস্যের দলকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হবে। ফ্রান্সিস তাদের সঙ্গে কথা বলবেন। পরবর্তীতে এ বিষয়ে তিনি বক্তব্য দেবেন কি দেবেন না তার কোন পূর্ব ঘোষণা নেই।
এমনি পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত আরও দেড় শতাধিক রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ও শিশু টেকনাফ সীমান্ত অঞ্চলের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, লম্বরিপাড়া, হাড়িখালির হাবিবপাড়া পয়েন্ট দিয়ে এরা অনুপ্রবেশ করেছে। এরা বিজিবির তত্ত্বাবধানে রয়েছে। নিবন্ধনের মাধ্যমে তাদের উখিয়ার আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়া হবে। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে বার বার বলা হচ্ছে, রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি এখনও কোনভাবে অনুকূলে নয়। সেখানকার সেনাবাহিনী ও উগ্র মগ সন্ত্রাসীরা রোহিঙ্গাদের ওপর নানামুখী নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। এসব নির্যাতনের ঘটনা যাতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় না আসে সে ব্যবস্থাও পাকাপোক্ত করে রেখেছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: