ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গুম-অপহরণ-খুন

প্রকাশিত: ০৪:০২, ৩০ নভেম্বর ২০১৭

গুম-অপহরণ-খুন

দেশজুড়ে গুম-অপহরণ-খুনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন এই তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। এটা উদ্বেগের বিষয়। এসব ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় দেশের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও বেড়ে গেছে। কারও লাশ মিলছে নদীনালা আর ডোবায়, কারও কোন হদিস নেই। যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর, তারাও এ রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারছে না। অনেক ক্ষেত্রে র‌্যাব-পুলিশের পরিচয়ে ধরে নেয়ার পর অপহরণকারীরা ধরা পড়েছে, এমন নজির নেই বললেই চলে। ফলে ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা থেকে যাচ্ছে আড়ালে; সন্ধান মিলছে না নেপথ্যের হোতাদের। হতভাগ্য স্বজনরা জানেন না- এর শেষ কোথায়; কবে শেষ হবে তাদের স্বজন ফেরার অপেক্ষার প্রহর। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, গত তিন মাসে ঢাকা থেকে নিখোঁজ হয়েছে ১২ জন। তাঁদের মধ্যে আছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান, পুস্তক প্রকাশক তানভীর ইয়াসিন করিম, সাংবাদিক উৎপল দাস, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমান, আইএফআইসি ব্যাংকের কর্মকর্তা শামীম আহমেদ, ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায়। অবশ্য শামীম আহমেদ ও সর্বশেষ অনিরুদ্ধ রায় ফিরে এসেছেন। নিখোঁজ এসব ব্যক্তির নাম এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস কমিশনের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংগঠনগুলোর গুম হওয়া মানুষের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। এসব ঘটনায় স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত আজও সম্ভব হয়নি। ঘটনার অনুসন্ধানে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া দরকার এই কারণে যে, ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে এর বিকল্প নেই। জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি বিভিন্নভাবে নিখোঁজ হয়েছেন। এত মানুষের ভাগ্যে কী ঘটেছে, কে-ই বা তাদের অপহরণ করেছে সেসব উদঘাটিত হওয়া দরকার। অন্যথায় গুম-অপহরণের ঘটনা আরও বাড়তে পারে। দেশে সক্রিয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকা সত্ত্বেও এভাবে মানুষের নিখোঁজ হয়ে যাওয়া খুবই দুর্ভাগ্যজনক। গুম-হত্যা নিয়ন্ত্রণে আইনশৃক্সক্ষলা বাহিনী আন্তরিকভাবে কাজ করছে বলা হলেও- এই দাবি মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই বিশেষ করে মানবাধিকার কর্মীরা। তারা বলছেন, অপহরণ-গুম-গুপ্তহত্যার মতো মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘনে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। যারাই এসব ঘটাক, সরকারকে এর দায় নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উচিত হবে তাঁদের উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া। নতুবা আইন এবং আইনের শাসনের প্রতি মানুষ আস্থা হারাবে। রাষ্ট্র এবং সরকারের দায়িত্ব হলো জনগণের নিরাপত্তা দেয়া। তা না পারলে সরকারের প্রতি দেশের মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি হবে। এই অপরাধ বন্ধে সরকারের উচিত একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করা। এতে স্বজন হারানো মানুষ কিছুটা হলেও সান্ত¡না পাবে এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ হবে।
×