ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গোটা রাজধানীর ফুটপাথ এখন শীতের পোশাকের দখলে

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৯ নভেম্বর ২০১৭

গোটা রাজধানীর ফুটপাথ এখন শীতের পোশাকের দখলে

ওয়াজেদ হীরা ॥ ‘দেইখা লন, বাইছা লন দুই শ’, একদাম দুই শ’ বার বার ডেকে ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যস্ত গুলিস্তানের ফুটপাথে শীতের পোশাক বিক্রি করা মৌসুমি ব্যবসায়ী আব্দুল রজব মিয়া। ক্রেতারাও তার হাঁকডাকে দোকানে এসে নেড়ে চেড়ে দেখছেন আর পছন্দ হলে কিনেও নিচ্ছেন। শুধু গুলিস্তানই নয়, মিরপুর, ফার্মগেট, নিউমার্কেট, মতিঝিল, পল্টন গোটা রাজধানীর ফুটপাথ এখন শীতের পোশাকের দখলে। বিপণিবিতানগুলো চেয়ে ফুটপাথের বিক্রিটাই জমজমাট। আবহাওয়াকে কেন্দ্র করে ফুটপাথের মৌসুমি ব্যবসায়ীরা পাল্টেছে তাদের ব্যবসার ধরন। শীত-গরম কিংবা বর্ষায় ভিন্ন ভিন্ন ব্যবসা পরিচালনা করেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা। আর নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত ক্রেতারা একটু অল্পতে পছন্দের পোশাক পেয়ে সন্তুষ্টই বটে। অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি সময় এখন। পৌষ মাঘের শীত এখনও বহুদূর। গ্রামে ভোরের সকালে দেখা যায় প্রচ- কুয়াশা আর রাতে তীব্র শীত। তবে শীত রাজধানীতে এখনও জাঁকিয়ে বসেনি। গ্রামের মানুষ যেখানে লেপ-কম্বল দিয়ে জড়িয়ে ঘুমায় সেখানে রাজধানীবাসীর এখনও রাতে প্রয়োজন পরে বৈদ্যুতিক পাখার। তবে সকালে এবং সন্ধ্যার পর ঘরের বাহিরে বের হলে নগরের বাসিন্দারাও বেশ ঠা-া অনুভব করে। আর এতেই অনেকেই শীতের পোশাকের প্রয়োজন বলে মনে করছেন। শীতে নিজেকে একটু উষ্ণ রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষ। তাতেই বেশ জমে উঠেছে শীতের কাপড় বেচা কেনা। বিভিন্ন মার্কেটসহ ফুটপাথগুলোতে বেড়েছে গরম কাপড়ের কদর এবং তার সঙ্গে বেড়েছে শীতের কাপড় কিনতে আসা ক্রেতাদের ভিড়ও। পুরোপুরি শীত না পড়লেও বিক্রি ভালই হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফুটপাথের একাধিক ব্যবসায়ীরা। সেই সঙ্গে আরও জানা গেছে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি চাহিদা বা বিক্রি হচ্ছে হালকা পাতলা ধরনে শীতের কাপড়। রাজধানীর নিউ মার্কেট, ফার্মগেট, বঙ্গবাজার, গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম, পল্টন, মতিঝিল, মিরপুর, ঢাকা কলেজের বিপরীতের মার্কেট বিপণিবিতানগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে থরে থরে সাজানো রয়েছে বাহারি রং বেরঙের শীতের কাপড়। আর ক্রেতারা দামাদামি করে কিনে নিচ্ছেন। পল্টনের ব্যবসায়ী মোঃ আজিজ (৪০) বলেন, ‘বিক্রি খুব বেশি তা নয় তবে কমও নয়। শীত সেভাবে পরে নাই তবে বিক্রি সে হিসেবে ভালই। নারী ও বাচ্চাদের কাপড়ের চাহিদা একটু বেশি’ বলেও জানান তিনি। বায়তুল মোকাররমের সামনে ফুটপাথের ব্যবসায়ী আকরাম বলেন, ‘এখানে এক দামে বিক্রি হয় না, দাম একটু ক্রেতাদের পছন্দ হয় তাই সবাই আমাদের কাছে আসে। আমাদের খরচও কম লাভও কম তবে বিক্রি ভালই হয়।’ বঙ্গবাজার থেকে ফুলহাতা হালকা শীতের কাপড় এবং জ্যাকেট কিনেছেন আবরাম আদিল (২৪)। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী জানান, ‘রাতে হালকা ঠা-া লাগে আর সামনে আরও বেশি ঠা-া হবে তাই দুই ধরনের পোশাকই কিনে নিলাম। একই জিনিস মার্কেটের চেয়ে দাম সাশ্রয়ী হয় তাই ফুটপাথই ভাল আমাদের জন্য।’ তবে নিজেদের জন্য শীতের কোন পোশাক আপাতত না কিনলেও বাচ্চার জন্য মিস করেনি তানিয়া হাসান। বিকেলে অফিস থেকে ফেরার পথে পছন্দসই বাচ্চার পোশাক কিনে বলেন, চলতি পথে অল্প দামে ভাল জিনিস পাওয়া যায় তাই কিনে নিলাম। বাচ্চাদের ঠা-া লাগলে সহজে ভাল হয় না। রাজধানীর বিভিন্ন ফুটপাথের দোকান ঘুরে জানা গেছে, তুলনামূলক পাতলা শীতের কাপড় একটু বেশি বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ছেলেদের, হালকা ফুলহাতা জ্যাকেট, ফুলহাতা গেঞ্জি, হাতাকাটা সোয়েটার এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। মেয়েদের শীতের কাপড় বিক্রি বেশি হচ্ছে পাতলা শাল। চায়না বা ইন্ডিয়ান শালের বিক্রি বেশি। এছাড়াও পাতলা ফোলকোর্ট ও সোয়োটারও বিক্রি হচ্ছে বেশ। বাচ্চাদের সব ধরনের শীতের কাপড়ের প্রতিই ক্রেতাদের আগ্রহ আছে। তরুণ-তরুণীদের যা আগ্রহ ॥ ছেলেদের শীতের পোশাকের মধ্যে আছে নানা ধরনের সোয়েটার। গোল গলা, ভি গলা, চিকন কলারের এসব সোয়েটারে থাকছে বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন। সামনের দিকে চেইন বা বোতাম আছে কিছু পোশাকে। নানা রঙের জ্যাকেটে খুঁজে পাওয়া যাবে বৈচিত্র। এছাড়াও কটির পাশাপাশি এবার হাতাকাটা সোয়েটারের প্রতিও বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে তরুণদের। আর তরুণীদের শালের পাশাপাশি পোশাকে আরও বৈচিত্র আনতে চাহিদা আছে লম্বা ঝুলের পাতলা সোয়েটারের। এছাড়া ফুল ও কোয়ার্টার হাতার ক্যাজুয়াল ব্লেজার, সোয়েটার, ট্রাউজার, কোটসহ নানা ধরনের পোশাক কিনছেন তরুণীরা। কম বয়সী মেয়েরা কোমরে বেল্ট রয়েছে এমন লম্বা কোট বা সোয়েটারের প্রতিও বেশ আগ্রহী। মিষ্টি ইয়েলো, লাল, খাকি, কনিয়্যাক ব্রাউন, মিষ্টি, অরকিডের মতো রঙগুলোর বাহারি পোশাক সোভা পাচ্ছে বিভিন্ন শো রুমে। সাগর নামের এক তরুণ বলেন, আসলে পছন্দটা নিজের কাছে আর যুগের সঙ্গে তাল মেলানোর বিষয়টা তো থাকেই। তাই নতুন নতুন কালেকশন খুঁজি। দামেও তারতম্য ॥ রাজধানীর বিভিন্ন ফুটপাথে বিভিন্ন রকম দাম লক্ষ্য করা গেছে। পল্টন, বায়তুল মোকাররম মার্কেটের সামনে দেখা গেছে, পাতলা শাল বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৫০ টাকায়। ফুলহাতা গেঞ্জি ২০০-৩৫০, হাতাকাটা সোয়েটার ৩০০-৫৫০ এর মধ্যে। এছাড়াও বাচ্চাদের বিভিন্ন শীতের পোশাক পাওয়া যায় ১০০-৪০০ টাকার মধ্যেই। অথচ একই পোশাক নিউমার্কেট এলাকার গেলে ৫০ টাকা কমে যাচ্ছে। আবার বঙ্গবাজার গেলে হয় তো বেড়ে যাচ্ছে।
×