ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এ্যাপভিত্তিক নীতিমালা চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে সরকার

অনলাইন সেবায় অটোচালকদের মাথায় হাত!

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৭ নভেম্বর ২০১৭

অনলাইন সেবায় অটোচালকদের মাথায় হাত!

রাজন ভট্টাচার্য ॥ অটোরিক্সা চালকদের মাথায় হাত! ১৬ বছরের বেশি সময়ে এই পরিবহনটিকে নিয়মের মধ্যে আনা সম্ভব হয়নি। নিয়ন্ত্রণের জন্য যত কঠোর নিয়ম নীতি করা হয়েছে তত বেড়েছে অরাজকতা। সুবিধা দেয়া হয়েছে অনেক। তবুও যাত্রীদের অভিযোগ কোন দিনই বন্ধ হয়নি। অর্থাৎ সবসময়ই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল পরিবহনটির সেবা। সময়ের পরিবর্তনে এবার ধাক্কা লেগেছে স্বেচ্ছাচারিতায়। রাজধানীর এ্যাপনির্ভর পরিবহন সেবা এখন জনপ্রিয়। পাঠাও, উবার, হ্যালোসহ আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এখন নতুন করে অটোরিক্সাও যুক্ত হচ্ছে এ্যাপভিক্তিক পরিবহন সেবায়। তাই অটোরিক্সার সঙ্গে যুক্তদের এখন নানামুখী সঙ্কট মোকাবেলা করে চলতে হচ্ছে। তারা বলছেন, এ্যাপনির্ভর পরিবহন সেবা জনপ্রিয় হওয়ায় অটোরিক্সার কদর কমেছে। ফলে আগের মত এখন ভাড়া হয় না। অনেক অটোরিক্সা যুক্ত হচ্ছে এ্যাপ সেবার সঙ্গে। তাছাড়া বাড়তি ভাড়ায় উবারের পরিবর্তে অটোরিক্সায় যেতে নারাজ অনেক যাত্রী। ফলে আয়ও কমেছে। গাড়ির জমা নিয়ে মালিক শ্রমিকদের মধ্যে বাড়ছে দূরত্ব। এই প্রেক্ষাপটে এ্যাপনির্ভর পরিবহন সেবা বন্ধের জন্য আন্দোলনের হুমকি দেয়া হয়েছে মালিক-শ্রমিক উভয় পক্ষ থেকেই। বাস্তবতা হলো সঙ্কটের মুখে অটোরিক্সাচালকদের স্বেচ্ছাচারিতা তিল পরিমাণও কমেনি। মিটারে যাতায়াত করা ভুলে গেছেন নগরীর মানুষ। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মোবাইলে এ্যাপনির্ভর পরিবহন সেবা এখন জনপ্রিয়। সবাই এখন এ সেবায় সন্তুষ্ট। অটোরিক্সার চেয়ে কম ভাড়ায় যাত্রীরা আরামে যাতায়াত করতে পারছেন। এরই ধারাবাহিকতায় এ্যাপনির্ভর সেবা নিয়ে নীতিমালা প্রায় চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে সরকার। কিছু দিনের মধ্যেই নীতিমালা চূড়ান্ত হবার কথাও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। এ্যাপনির্ভর পরিবহন সেবা চালুর পর বিপাকে পড়া অটোরিক্সা চালকদেরও ডিজিটাল নেটওয়ার্কে আনতে ‘হ্যালো’ সিএনজি রাইড শেয়ারিং নামে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান নতুন একটি এ্যাপ তৈরি করছে। যার মাধ্যমে যাত্রীরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অটোরিক্সা ডাকতে পারবেন। স্যাম নামে আরেকটি রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানও তাদের এ্যাপে অটোরিক্সা ভাড়া করার সুযোগ রেখেছে। অল্প সময়ের মধ্যে দুটি কোম্পানির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরুর কথাও রয়েছে। যাত্রীদের চাহিদা মত গন্তব্যে না যাওয়া এবং বাড়তি ভাড়া নেয়ায় সমালোচিত অটোরিক্সা চালকরা সম্প্রতি পুরনো অটোরিক্সার পুরনো বদলে নতুন গাড়ি বরাদ্দসহ আট দফা দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করেন। ওই আট দফায় এ্যাপনির্ভর পরিবহন সেবা বন্ধের দাবিও আছে। কিন্তু অটোরিক্সা এ্যাপের আওতায় আসার সম্ভাবনা নিয়ে সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ঢাকা জেলা কমিটির সদস্য সচিব সাখাওয়াত হোসেন দুলাল এখন আগ্রহের কথা বলছেন। অটোরিক্সার জন্য এ্যাপ তৈরির কাজ প্রায় শেষ জানিয়ে হ্যালো সিএনজির প্রতিনিধি এএসএম জামাল বলেন, চালক ও যাত্রীদের জন্য যে এ্যাপ, সেটি চলে এসেছে। কিছুদিনের মধ্যেই আমরা গুগল প্লে স্টোরে দিব। ডিসেম্বরের শেষ দিকেই চলে আসবে। তিনি বলেন, এই এ্যাপ চালুর বিষয়ে তারা পর্যায়ক্রমে সবার সঙ্গে আলোচনায় বসছেন। ইতোমধ্যে অটোরিক্সা শ্রমিক ঐক্যপরিষদের নেতাদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে চালকদের ওপরও জরিপ করার কথা জানান তিনি। কাগজপত্রে রাজধানীতে লাইসেন্সকৃত অটোরিক্সার সংখ্যা ১৩ হাজার। যদিও পরিবহনটির সংগঠন নেতাদের দাবি সর্বোচ্চ এখন চলাচল করে ছয় থেকে সাত হাজার। বাকি গাড়িগুলো চলাচলের অযোগ্য। এর মধ্যে মিশুকের পরিবর্তে কিছু নতুন অটোরিক্সা রাস্তায় নেমেছে বলেও জানান তারা। তাছাড়া গণপবিহন সঙ্কট একটি দীর্ঘ দিনের সমস্যা। মধ্যবিত্তের প্রাইভেটকার হিসেবে খ্যাত ট্যাক্সি সার্ভিস তো এখন সোনার হরিণ। বাসও প্রয়োজনের তুলনায় কম। এর মধ্যে ভরসা খুঁজে নিয়েছিল অটোরিক্সা। কিন্তু এই সেবাটি শুরু থেকেই নানা কারণে সমালোচিত ও প্রশ্নবিদ্ধ। তবে রাইড শেয়ারিং সেবার স্রোতে অটোরিক্সা যেন হারিয়ে না যায়, সেজন্যই এ এ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন এএসএম জামাল। তিনি বলেন, অটোরিক্সায় যাত্রী অনেক কমে গেছে। একটি অটোরিক্সা এক থেকে দেড় ঘণ্টা বসে থাকছে। সারাদিন গাড়ি চালানোর পর যে পারিশ্রমিক পাওয়ার কথা তা তারা ঠিকমত পাচ্ছেন না। ফলে ঠিকমত জমাও দিতে পারছেন না। সব মিলিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। সিএনজি অটোরিক্সার সিস্টেম টিকিয়ে রাখতেই আমাদের এ উদ্যোগ। জামাল বলেন, হ্যালো সিএনজি এ্যাপ ব্যবহার করে সেবা নিলে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে খরচ কিছুটা বাড়বে। প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া ৪০ টাকাই থাকবে। তবে পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারে ১২ টাকার পরিবর্তে ১৩ টাকা করে গুণতে হবে যাত্রীদের। ফলে প্রতিটি রাইডে যাত্রীদের ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দিতে হবে। আমরা যে সুবিধাটা দেব এটার জন্য কিছুটা চার্জ তো করতেই হবে। কারণ ঘরে বসেই এখন অটোরিক্সা ডাকতে পারছে। অটোরিক্সা ঠিক করার জন্য রাস্তায় যেতে হচ্ছে না, অতিরিক্ত সময় লাগছে না। হ্যালো সিএনজি এ্যাপটি ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হলেও অটোরিক্সা চালকদের অনেকেই স্মার্টফোন ব্যবহারে দক্ষ না হওয়ায় কিছুট সমস্যা রয়েছে বলে জানান জামাল। ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিক্সা মালিক সমিতির সভাপতি বরকত উল্লাহ বুলু বলছেন, সরকারের ঠিক করে দেয়া বর্তমান নীতিমালাতেই তারা সেবা দিতে চান। তিনি বলেন, আমাদের তো নিজস্ব নীতিমালা আছে। এ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবার সঙ্গে তো আমাদের নীতিমালা মিলবে না। আমাদের তো নির্ধারিত ভাড়া আছে। ওই ভাড়া আর আমাদের ভাড়া তো এক হবে না। আমরা আপাতত সেটা নিয়ে ভাবছি না। তবে ভবিষ্যতে সে রকম পরিস্থিতি তৈরি হলে আমরা বিষয়টি ভেবে দেখব। এদিকে কোন অটোরিক্সা মোবাইল এ্যাপে চললেও বর্তমান নিয়মে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া তারা নিতে পারবে না বলে জানান বিআরটিএ সচিব শওকত আলী। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে সরকারী নীতিমালা মেনে চলতে হবে। রাজধানীর সবুজবাগ, কমলাপুর, মতিঝিল, শাহবাগ, বাংলামোটর, কাওরানবাজারসহ বেশ কিছু এলাকায় ঘুরে অটোরিক্সা চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবার কারণে তাদের কদর কমেছে। এ নিয়ে চালকদের মধ্যে উদ্বেগও লক্ষ্য করা গেছে। ১২ বছর ধরে অটোরিক্সা চালানোর অভিজ্ঞতা তুলে ধরে দিলশাদ বলেন, নানামুখী বাস্তবতার কারণে অটোরিক্সা নিয়ে সমালোচনা দূর করা সম্ভব হয়নি। এজন্য তিনি চালক-মালিকের দৌরাত্ম্যসহ চাঁদাবাজি সমস্যাকেই প্রধান হিসেবে উল্লেখ করেন।
×