ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাম্প্রদায়িক প্রশ্নে রাবির চারুকলা অনুষদের ভর্তি পরীক্ষা ॥ সমালোচনার ঝড়

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৭ অক্টোবর ২০১৭

সাম্প্রদায়িক প্রশ্নে রাবির চারুকলা অনুষদের ভর্তি পরীক্ষা ॥ সমালোচনার ঝড়

কায়কোবাদ খান, রাবি ॥ ‘পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থের নাম কি? (ক) পবিত্র কুরআন শরীফ (খ) পবিত্র বাইবেল (গ) পবিত্র ইঞ্জিল (ঘ) গীতা। মুসলমান রোহিঙ্গাদের উপর মায়েনমারের সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সশস্ত্র হামলা চালায় কত তারিখে? (ক) ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ (খ) ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ (গ) ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ (ঘ) ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭।’ কোন ধর্মীয় পরীক্ষায় নয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তির চারুকলা অনুষদেও সার্বজনীন প্রশ্নপত্রে এসেছে চরম সাম্প্রদায়িক ও বিদ্বেষমূলক এসব প্রশ্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জামায়াত-বিএনপিপন্থী কতিপয় শিক্ষকের প্রণয়ন করা এই প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প উগড়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। একটি ধর্মকে প্রাধান্য দিয়ে অসম্মান করা হয়েছে অন্য ধর্মাবলম্বীদের। এই ঘটনা জানাজানির পর থেকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে সর্বত্র। খোদ চারুকলা অনুষদের অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থী বলছেন, যুগ যুগ ধরে অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করা চারুকলা অনুষদে সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত করা বাঙালীর হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র। জানা যায়, বুধবার দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত রাবিতে চারুকলা অনুষদের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষার সেট-২ এর ৭৬ নম্বর প্রশ্নে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থের নাম জানতে চাওয়া হয়। প্রশ্নে তিনটি ধর্মগ্রন্থের সামনে ‘পবিত্র’ শব্দটি উল্লেখ করা হলেও হিন্দু ধর্মের গ্রন্থ গীতার আগে ‘পবিত্র’ শব্দটি লেখা হয়নি। সব ধর্মের ভর্তিচ্ছুরা পরীক্ষায় অংশ নেয়ায় এই প্রশ্ন নিয়ে পরীক্ষার হলেই আপত্তি তোলেন পরীক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। আবার ৪১ নম্বর প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়, ‘মুসলমান রোহিঙ্গাদের উপর মায়েনমারের সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সশস্ত্র হামলা চালায় কত তারিখে?’ এই প্রশ্নের মাধ্যমেও সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোহিঙ্গাদের একটি নির্দিষ্ট ধর্ম উল্লেখ করে মানুষ পরিচয়টিকেই অস্বীকার করার অভিযোগ উঠেছে। চারুকলা অনুষদের সাবেক শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান রাসেল বলেন, নির্যাতিত রোহিঙ্গা জাতির সবাই মানুষ, তাদের নির্দিষ্ট ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসেবে হাইলাইট করে হামলাকারী হিসেবে অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়কে দাঁড় করানো হয়েছে। এটা সাম্প্রদায়িকতা। মিয়ানমার যদি এই ভুল করেও থাকে, আমরা কেন এরকমটা শেখাব যে মুসলিম আর বৌদ্ধ শত্রু?
×