ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

উৎপাদন ব্যয় যৌক্তিক হলে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি নয়, কমানো সম্ভব

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ৬ অক্টোবর ২০১৭

উৎপাদন ব্যয় যৌক্তিক হলে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি নয়, কমানো সম্ভব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়ই যৌক্তিক নয়। ভোক্তাদের পক্ষ থেকে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির শুনানিতে বৃহস্পতিবার এই অভিযোগ করে কনজ্যুমারস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় হিসেবে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) যা প্রচার করছে সেখানে অন্তত ৬৬ পয়সা অতিরিক্ত দেখানো হয়েছে। এর আগে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কারিগরি কমিটি বিদ্যুতের পাইকারি মূল্যহার ইউনিটপ্রতি ৫৭ পয়সা বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে। ভোক্তাদের দাবি উৎপাদন ব্যয় যৌক্তিক করা হলে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিত দূরের কথা আরও কমানো সম্ভব। ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, উৎপাদন ব্যয়হারে বিদ্যুত উন্নয়ন তহবিল বাবদ ২৬ পয়সা, ভর্তুকির সুদ বাবদ ২১ পয়সা, পাইকারি বিদ্যুতের মূল্যহার ঘাটতি ৫ পয়সা, মেঘনাঘাট আইপিপিতে ফার্নেস অয়েলের পরিবর্তে ডিজেল ব্যবহারে আরও অতিরিক্ত ১৪ পয়সা ব্যয় বেড়েছে। যা বিদ্যুতের মূল্যহারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। শুনানিতে বলা হয় দেশের বড় বিদ্যুত কেন্দ্রর যেগুলো দ্বৈত জ্বালানির তাতে ফার্নেস অয়েলের পরিবর্তে ডিজেল ব্যবহার করায় বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্চা দিতে হচ্ছে। শুনানিতে চুক্তি পরিবর্তন করে কিভাবে একটি কোম্পানি জ্বালানির ধরন পরিবর্তন করল তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এ সময় বলা হয় যে গ্রেডের ফার্নেস অয়েল সরবরাহের জন্য বিপিসির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে তা বিপিসি সরবরাহ করে না। এজন্যই বিদ্যুত কেন্দ্রটিকে ডিজেলে চালানোর অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু বেসরকারী কোম্পানিগুলো নিজেরাই ফার্নেস অয়েল আমদানি করে। কিন্তু একটি বিদ্যুত কেন্দ্রর জন্য কেন ফার্নেস অয়েল আমদানি করা সম্ভব হলো না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। সামিট পাওয়ারের এই কেন্দ্রটি দ্বৈত জ্বালানির যা গ্যাসের অভাবে ডিজেলে বিদ্যুত উৎপাদন করে। পিডিবি তার লোকসানের সিংহভাগই করে থাকে এই কেন্দ্রর বিদ্যুত কিনতে গিয়ে। মাত্র একটি বিদ্যুত কেন্দ্রর জন্যই পরিকল্পিত হলে দেশের গড় বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় অন্তত ১৪ পয়সা কমানো যেত। শুনানিতে অধ্যাপক শামসুল আলম দাবি করেন মেঘনাঘাট সামিট কেন্দ্রটি ৩০৫ মেগাওয়াটের। কেন্দ্রটির প্রতিইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় ২০ টাকা ২৪ পয়সা। এই কেন্দ্রটি ডিজেলের পরিবর্তে ফার্নেস অয়েল ব্যবহার করলে বিদ্যুতের দাম হতো ১১ টাকা ২ পয়সা। কেন্দ্রটি গত অর্থবছরে ১০১ দশমিক ৪৭ কোটি ইউনিট বিদ্যুত উৎপাদন করেছে। এতে তাদের দুই হাজার ৫৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। কিন্তু ফার্নেস অয়েলে উৎপাদন করলে ১ হাজার ১১৮ কোটি ২০ লাখ টাকা দিতে হতো। এক কেন্দ্র থেকেই ৯৩৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা সাশ্রয় হতো। একই ভাবে সরকারী কয়েকটি বিদ্যুত কেন্দ্রেও বাড়তি দরের ফার্নেস অয়েল ব্যবহার করায় ৬৩৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা অতিরিক্ত গচ্চা দিতে হচ্ছে। এই কেন্দ্রগুলোর দামী বিদ্যুত কম উৎপাদন হলে এই পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হতো। এছাড়া ভাড়া এবং দ্রুত ভাড়ায় চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রর জ্বালানি বহির্ভূত ব্যয় যৌক্তিক পরিমাণে নামিয়ে আনলে প্রতিইউনিটে ১০ টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। এতে বছরে অন্তত ক্যাপাসিটি পেমেন্ট ২৯৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হতো। শুনানিতে গ্রাহকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, জ্বালানির দর যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা হলে উৎপাদন ব্যয় সাশ্রয় করা সম্ভব ২ হাজার ১১০ কোটি ৫১ লাখ টাকা। শুনানিতে পিডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, মেঘনাঘাটে গ্যাস দেয়ার কথা ছিল পেট্রোবাংলার কিন্তু তারা গ্যাস দিতে পারেনি। আর ফার্নেস অয়েল থেকে ডিজেলে চুক্তি সংশোধন করায় পিডিবির পক্ষে ডিজেল সরবরাহ করার কোন বিকল্প নেই। সার্বিক বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি পায়নি। এছাড়া গ্যাস ফিল্ডের কাছে হওয়ায় রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ হয়। আর গ্যাস গ্রিড থেকে দূরে হওয়ায় বিপরীতে এক হাজার ৮০০ মেগাওয়াট সরকারী বিদ্যুত কেন্দ্র আংশিক চালানো হয় অথবা বন্ধ রাখতে হয়। ভর্তুকির অর্থকে ঋণ হিসেবে উল্লেখ করে সেই ঋণের সুদও বিদ্যুতের দামে যোগ করার বিষয়ে শুনানিতে অভিযোগ করা হয়। এতে বলা হয় সরকার বলছে বিদ্যুতে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। উল্টো আবার ভর্তুকির অর্থ আদায় করার পাশাপাশি এর সুদও আদায় করা হচ্ছে। সরকারের এই নীতির সমালোচনা করে প্রকৌশলী মোবাশ্বের হোসেন বলেন, এ কেমন ভর্তুকি অন্য খানের ভর্তুকি যদি আদায় না করা হয় তাহলে বিদ্যুতেরটা কেন এভাবে আদায় করা হবে। পিডিবির পক্ষ থেকে বলা হয় বিদ্যুতের ভর্তুকির অর্থ সরকারের কাছ থেকে ঋণ চুক্তি করে আনতে হয়। সেখানে সরকার ছাড় না দিলে পিডিবির পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। বিইআরসি চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলামের সভাপতিত্বে কমিশন সদস্য মিজানুর রহমান, রহমান মুরশেদ, আব্দুুল আজিজ খান ও মাহমুদ উল হক ভূঁইয়া শুনানি গ্রহণ করেন।
×