ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের

নাজনীন সুলতানা বাংলাদেশে চাঁদপুর জেলায় জন্ম নেয়া এক মধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবী সন্তান। পিতা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের উর্ধতন কর্মকর্তা। দুর্ভোগ্যক্রমে তাকে অতি বাল্যকালে বাবাকে হারাতে হয়। তিন বোনের মধ্যে নাজনীন মেজ। মা সুলতানা বেগম পিতৃহীন তিন মেয়েকেই প্রতিদিনের জীবন লড়াইকে জয় করে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলেন। পৈত্রিক সহায় সম্পত্তি থেকে প্রায়ই বঞ্চিত এই পরিবারটি মায়ের অক্লান্ত শ্রম আর নিরন্তর প্রেরণাই ছিল তিন কন্যার সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি আর অবলম্বন। শুধু তাই নয় তিন বোনই ছিল নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর অদম্য প্রত্যয়ে এক অবিচলিত জীবন সৈনিক। পেছনে ফিরে তাকানোর অবকাশই বোধ করেনি কখনও। বড় বোনও মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সম্মান কোর্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। সেখান থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে তার শিক্ষা কার্যক্রম সমাপ্ত করতেও সক্ষম হন। আর তীক্ষè মেধাবী নাজনীন সুলতানা চাঁদপুরের ‘মাতৃপীঠ সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়’ থেকে মাধ্যমিকের পাঠ শেষ করে ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। তাও মাধ্যমিকে অসাধারণ ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই। উচ্চ মাধ্যমিকেও প্রত্যাশিত রেজাল্ট নিয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। স্বপ্ন ছিল স্থপতি অর্থাৎ আর্কিটেক্ট হবে। স্বপ্নচ্যুতির বেদনা বেশি দূর গড়াতে পারেনি। কারণ মেধা তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ফলিত পরিসংখ্যানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। সেভাবেই পথচলা ক্রমান্বয়ে সামনের দিকে। পেছনে তাকাবার সময়-সুযোগ কোনটাই ছিল না। এক সময় অনার্সেও প্রত্যাশিত ফল চলে আসে। প্রথম শ্রেণীতে চতুর্থ। এরপর আরও জোর কদমে এগিয়ে চলা। স্নাতকোত্তর পরীক্ষায়ও প্রথম শ্রেণীতে চতুর্থ। আশা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবেন। সেখানেও আশাহতের কষ্ট সাময়িকভাবে আসলেও পরবর্তীতে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট ওয়েস্টে যোগদান জীবনে সফলতার আর এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। ২০১২ সালে পরিসংখ্যানের শিক্ষক হিসেবে নাজনীনের সত্যিকারের কর্মজীবনের যাত্রা শুরু। এর আগে অর্থাৎ ২০১১ সালে আর এক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ধানম-ির ইউল্যাবে সাময়িকভাবে শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। গত ৫ বছর ধরে তিনি ইস্ট ওয়েস্টের পরিসংখ্যানের শিক্ষক হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তার পেশাগত জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতে আরও উচ্চতর ডিগ্রী নেয়ার আকাক্সক্ষাকে সব সময় লালন করে যাচ্ছেন। সেই সফলতাও তাকে একদিন তার স্বপ্নের দুয়ারে পৌঁছে দেবে। তিনি বিবাহিত এবং এক কন্যা সন্তানের মা। স্বামী গাজীপুরের আইওটি থেকে ডিগ্রী নেয়া কৃতী প্রকৌশলী। তার এই দীর্ঘ সফলতার পেছনে প্রায় সবটুকু কৃতিত্বই দিয়েছেন স্নেহশীল, কর্মঠ এবং সন্তান-নিমগ্ন মায়ের প্রতি। যার সর্বক্ষণিক পরিশ্রম সহযোগিতা আর অনুপ্রেরণা ছাড়া এতদূর পর্যন্ত আসা কোনভাবেই সম্ভব হতো না। ছোট বোনটিও একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) এর ছাত্রী। নাজনীন মনে করেন পারিবারিক স্নিগ্ধ আবহ এবং নিজের একান্ত প্রচেষ্টা আর স্বপ্ন থাকলে যে কোন মেয়েকে উন্নয়নের সহযোগী শক্তি হিসেবে তৈরি হতে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয় না। কন্যা সন্তানটিকেও সেভাবেই গড়ে তুলতে চান। স্নেহশীল মা হিসেবে সার্বিক সাহচর্য এবং প্রেরণা দিয়েই একেবারে স্বাধীন সত্তায় মেয়েকে বড় করতে চান। শুধু মেয়ের মধ্যে আদর্শ আর স্বপ্নের বীজটা সফলভাবে বুনে দিতে হবে। তিনিও মনে করেন মেয়েরা পিছিয়ে থাকলে সমাজের সর্বাঙ্গীন উন্নতি ব্যাহত হবে। নিজেদের প্রয়োজনে, দেশের স্বার্থে সর্বোপরি সমৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় সংযুক্ত হওয়াটা এখন যুগ আর সময়ের দাবি। নারীর প্রত্যক্ষ এবং সফল অংশীদারিত্ব যেভাবে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তোলা হবে একইভাবে দেশের প্রয়োজনীয় চাহিদাও মেটানো যাবে। আর এই লক্ষ্যে নারী জাতিকে সমস্ত সামাজিক অভিশাপ অতিক্রম করে শুভ আর মঙ্গলের নিশানায় সামনে পথ চলা সুনিশ্চিত আর নিরাপদ করতে হবে। নারী নির্যাতনের দায়ভাগ যেমন সামাজিক অব্যবস্থার ওপর একইভাবে সংশ্লিষ্টদের অসচেতনতা, নিজেকে হীন আর দুর্বল ভাবা, নিজেকে গড়ে তোলার সুযোগকে ব্যবহার করতে না পারা সব মিলিয়েই অর্ধাংশ এই গোষ্ঠী শোষণ আর নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। এসব বন্ধনজাল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে নিজের চলার পথ নিজেকেই শঙ্কাহীন আর নির্বিঘ্ন করতে হবে।
×