ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

২৬ সেপ্টেম্বর উৎসব শুরু

৩০ হাজারের বেশি পূজামন্ডপ সারাদেশে

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

৩০ হাজারের বেশি পূজামন্ডপ সারাদেশে

রাজন ভট্টাচার্য ॥ সাড়ম্বরে দেশব্যাপী চলছে শারদীয় দুর্গোৎসবের আয়োজন। শুরু হয়েছে কেনাকাটাও। রাজধানীর মার্কেটগুলোতে বেড়েছে ক্রেতাদের ভিড়। তেমনি ফ্যাশন হাউসগুলোতে আসছে উৎসবের রকমারি পোশাক। ঋতুবৈচিত্র্যের সঙ্গে মিলিয়ে পোশাক-আশাকে বাহারি রং ঢংয়ের খেল। গত বছরের চেয়ে এবার পূজার সংখ্যা বেড়েছে। দেশের ৩০ হাজারের বেশি মন্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকায় এবার পূজা হবে ২৩১টি মন্ডপে। সব মিলিয়ে সনাতন সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে এখন দেশজুড়ে সাজসাজ রব। আজ মঙ্গলবার শুভ মহালয়া। পিতৃপক্ষের শেষে দেবীপক্ষের শুরু। একই সঙ্গে শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্নেরও শুরু আজ থেকে। মহালয়ার মাধ্যমে দেবী দুর্গা আজ পা রেখেছেন মর্ত্যালোকে। বছর ঘুরে আবারও উমা দেবী আসছেন তার বাপের বাড়ি। পুরাণমতে, অশুভ অসুর শক্তির কাছে পরাভূত দেবতারা স্বর্গালোকচ্যুত হওয়ার পর চারদিকে শুরু হয় অশুভ শক্তির প্রতাপ। এই অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে একত্র হন দেবতারা। তখন দেবতাদের তেজরশ্মি থেকে আবির্ভূত হন অসুরবিনাশী দেবী দুর্গা। মহালয়ার সময় ঘোর অমাবস্যা থাকে। তখন দুর্গা দেবীর মহাতেজের আলোয় সেই অমাবস্যা দূর হয়। প্রতিষ্ঠা পায় শুভশক্তি। সকাল ছয়টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে মহালয়ার অনুষ্ঠান শুরু হবে। হিন্দু শাস্ত্রমতে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া হিসেবে পরিচিত। মহালয়া দুর্গোৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এবারের দুর্গোৎসব উপলক্ষে সারাদেশে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে পূজা পরিষদের নেতৃবৃন্দ উৎসব সফলভাবে সমাপ্ত করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন। ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও মূলত আজ মহালয়া থেকেই পুজারীরা দুর্গা মায়ের আগমন ধ্বনি শুনতে পাবেন। ২৬ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠী। এর মধ্যে দিয়ে পাঁচদিনব্যাপী উৎসবের শুরু। ২৭ সেপ্টেম্বর সপ্তমী। দশমী পূজা ও বিসর্জনের মধ্য দিয়ে উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে। পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত সেন দীপু বলেন, এ বছরও সারাদেশে পূজামন্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। তবে আগাম বন্যার কারণে বন্যাকবলিত এলাকায় পূজামন্ডপের সংখ্যা কমেছে। এ বছর সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ এলাকায় পূজাম-পের সংখ্যা কমেছে। চলতি বছর দেশের পূর্বাঞ্চলে ২ হাজার ৩৫৩টি ম-পে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৬ সালে সিলেট বিভাগে ২ হাজার ৪৪০টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। পরিষদের তথ্য মতে; এ বছর সারাদেশে ৩০ হাজার ৭৭টি ম-পে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর ২৯ হাজার ৩৯৫টি, ২০১৫ সালে ২৯ হাজার ৭১টি। ২০১৪ সালে সারাদেশে ২৮ হাজার ৩৫৮টি, ২০১৩ সালে ২৮ হাজার ২০০টি, ২০১২ সালে ২৭ হাজার ৮০০টি ম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবারের মতো এ বছরও রাজধানীতে ম-পের সংখ্যা বেড়েছে। গত বছর ২২৬টি ম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বছর এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩১টি। প্রথমবারের মতো তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকা, পল্টন এবং রাজাবাজারে একটি করে মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজা পরিষদের তথ্য মতে, বিভাগ অনুযায়ী ঢাকা বিভাগে এবং জেলা অনুযায়ী চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। প্র্রতি বছর পূজাম-পের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা। সারাদেশে উৎসবের আঙ্গিকে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিরোধ এবং সম্প্রীতির আহ্বান জানিয়েছে তারা। ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ সাহা মনি বলেন, প্রতি বছর পূজার সংখ্যা বাড়ছে। ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ আমরা এই জায়গায় দেশকে নিয়ে যেতে পেরেছি। তিনি বলেন, নিরাপদে উৎসব উদযাপনে প্রশাসন তৎপর। পূজা পরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিভিন্ন মহলের নিয়মিত বৈঠক চলছে। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো এখনও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের খবর আসে আমাদের কাছে। অসাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি বিনষ্ট ও ধর্মনিরপেক্ষ ধারাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার লক্ষ্যে যে ষড়যন্ত্র চলছে, প্রতিমা ভাংচুর ও সাম্প্রদায়িক হামলা তারই অংশ। শারদীয় দুর্গোৎসবকে সফল করতে সরকার সর্বাত্মক সহায়তা করছে জানিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা আশা করছেন, ঢাকা শহরের পূজাম-পগুলোতে যে কঠোর নিরাপত্তা দেয়া হয়, একই নিরাপত্তা দেশের প্রতিটি পূজাম-পে দেয়া হবে। এদিকে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সারাদেশে ৩০ হাজার ৭৭টি পূজাম-পের নিরাপত্তায় র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি ১ লাখ ৬৮ হাজার আনসার সদস্য মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। রবিবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, পূজার শুরু থেকে বিসর্জন পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। কোন নাশকতাকারী উৎসবে যেন বাধা সৃষ্টি না করতে পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক থাকবে। তবে দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাত ৮টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জনসহ সকল অনুষ্ঠান শেষ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঢাকা মহনগরীর জন্য ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এবং সারাদেশের জন্য পুলিশ সদর দফতরে কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক শৃঙ্খলা কমিটি গঠন করা হবে। যে কমিটিতে বিভিন্ন ধর্ম-পেশার লোক থাকবে। পাশাপাশি প্রত্যেক ম-পে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদেরও থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া ইভটিজিং বা নারীরা যাতে হেনস্তার শিকার না হন সেজন্য নারী পুলিশের পাশাপাশি পূজা কমিটির স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যেও নারীদের রাখা হবে। ভক্তের আহ্বানে প্রতি বছর মর্তে আসেন মা দুর্গা। হিন্দু শাস্ত্রানুসারে দেবী দুর্গার বাহন সিংহ হলেও কৈলাস থেকে বাপের বাড়ি মর্ত্যালোকে আগমনের সময়ে তিনি চারটি আলাদা বাহন ব্যবহার করেন। ফিরেও যান আলাদা বাহনে। দেবীর এই গমনাগমনে ধরাতলে শুভাশুভ ফল নির্ধারিত হয়। প্রতি বছর গজ (হাতি), ঘোটক (ঘোড়া), নৌকা, দোলা এসব বাহন করে দেবী দুর্গার মর্ত্যে আসা ও যাওয়ার সময় শুভ, অশুভ, ক্ষয়ক্ষতি ও নানাভাবে মানুষের মৃত্যু সংবাদও শোনা যায়। প-িত অশিত চক্রবর্তী জানান, এ বছর দেবী দুর্গার নৌকায় আগমন। এতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়বে। অতিবৃষ্টি, বন্যা ও ঝড়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ফসল ভাল হবে। ঘোড়ায় ফিরে যাবেন তিনি। ফলে যত রোগ বালাই দূর হবে। সব রোগ ব্যাধি নিয়ে বাপের বাড়ি থেকে ফিরবেন দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার আশ্বাস সোমবার পুলিশ সদর দফতরে আসন্ন দুর্গোৎসব উপলক্ষে পূজা পরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকের পর পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, দুর্গাপূজা ও আশুরা বরাবরের মতো নিরাপদ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রতি বছরই দুর্গাপূজার সংখ্যা বাড়ছে, কারণ আগের চেয়ে মানুষ বেশি নিরাপত্তা বোধ করছে। তিনি বলেন, ৩০ সেপ্টেম্বর দশমী এবং তাজিয়া মিছিল একদিনে হওয়ায় সমন্বয়ের মাধ্যমে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার বিষয়টি মাথায় রেখেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিমা তৈরি থেকে বিসর্জন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
×