ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়েছে

একদিনেই এসেছে ২০ হাজার রোহিঙ্গা

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

একদিনেই এসেছে ২০ হাজার রোহিঙ্গা

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ পরাশক্তি চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক স্বার্থ প্রতিষ্ঠা করার খেলায় নেমে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা পুরো রাখাইন রাজ্যকে রোহিঙ্গামুক্তকরণে নির্বিচারে হত্যা নিধনযজ্ঞ বন্ধ করছে না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়েও সেনা নিয়ন্ত্রিত মিয়ানমারের এনএলডি নেত্রী আউং সান সুচি সরকার অসহায়ত্বের কবলে পড়লেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোন সমাধানের পথে এগুতে পারছে না। নোবেল বিজয়ী সুচির অবস্থা এখন এমন যে, তিনি নিজেও তার প্রয়াত পিতার ন্যায় এক ধরনের বুলেটের মুখে রয়েছেন। সামরিক জান্তার শেখানো বুলি তিনি তোতা পাখির মতো আউড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। ২০১৫ সালে সে দেশের গণতন্ত্রমনা জনগণের সঙ্গে রোহিঙ্গাদেরও সমর্থন নিয়ে যে সুচি নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করেছিলেন তিনি এখন বিশ্বজুড়ে রোহিঙ্গা গণহত্যার খলনায়কের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। অথচ, পুরো ঘটনার নেপথ্যে রয়েছেন সে দেশের সেনাবাহিনীর কমান্ডার ইন চীফ জেনারেল মিন অং লাইং। এ সেনানায়ককে সর্বোতভাবে সমর্থন যোগাচ্ছে পরাশক্তি চীন। যার কারণে সামরিক জান্তা এ সেনানায়কের প্রণীত নীলনক্সা অনুযায়ী পুরো রাখাইন রাজ্যকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীসহ সকল সম্প্রদায়ের সদস্যমুক্ত করতে সামরিক অভিযান পরিচালনায় লিপ্ত হয়েছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমানাকে বিভাজিত রেখায় রয়েছে নাফ নদী। সেই নাফ নদীর অদূরে ‘মংডু ও কিয়াপফু’ তে দুটি বিশেষ চীনা অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা করা হবে। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর প্রথম পর্যায়ে মংডুর অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা নিয়ে দু’দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর হবে কিয়াপফুতে। অপরদিকে, ভারতও মিয়ানমারে চীনের অর্থনৈতিক একক আধিপত্য বিস্তার রোধে তৎপর রয়েছে। এছাড়া মংডু এলাকার সমুদ্র তীরবর্তী স্থানে রয়েছে হাইড্রোকার্বন। খনিজ এ সম্পদের প্রতিও চীনের দৃষ্টি রয়েছে। বাণিজ্যিক স্বার্থে চীন ইতোমধ্যেই তেল ও গ্যাসের সরবরাহের জন্য দীর্ঘ পাইপ লাইন প্রতিষ্ঠার কাজ সম্পন্ন করেছে। এ লক্ষ্যেই ভারত সরকারীভাবে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার বাহিনীর অভিযানের পক্ষাবলম্বন করেছে। তবে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মানবিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশে শরণার্থী হয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি ত্রাণ সহায়তাও প্রেরণ করেছে। মিয়ানমারে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য ও সে দেশের বিভিন্ন সূত্রে সুনির্দিষ্টভাবে প্রাপ্ত খবরে বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়েছে। এমনও ধারণা দেয়া হয়েছে, দেশটি আবারও পুরোপুরি সেনা নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু গণতন্ত্রমনা হিসাবে আউং সান সুচি সারাবিশ্বে পরিচিতি পেয়েছিলেন সেই সুচি এখন গণহত্যার নায়কের ভূমিকায় স্থান পেয়েছেন। মূলত, এর নেপথ্যের সব খেলায় রয়েছে সামরিক জান্তা প্রধান জেনারেল মিন অং লাইং। তার খুঁটির জোর পরাশক্তি চীন। সর্বশেষ ॥ এদিকে, আন্তর্জাতিক সকল সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে শুক্রবার মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যরা আবারও নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুনধুম এলাকায় কাঁটাতারের বেড়ার কাছ দিয়ে সশস্ত্র টহল দিয়েছে। এর আগে পুরো সীমান্ত এলাকাকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী সামরিক অপারেশন জোন ঘোষণা করে গত ২৫ আগস্টের রাত থেকে রোহিঙ্গা নিধন অভিযান যে শুরু করেছে তা এখনও অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া এ পর্যন্ত মিয়ানমারের বিমান বাহিনীর যুদ্ধ বিমান সতেরো বার বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। শুধু তাই নয়, ওপার থেকে সেনাবাহিনীর ছোড়া গুলি এপারে এসে পড়েছে। এসব ঘটনার পরও বাংলাদেশ সহনশীল ভূমিকায় থেকে কূটনৈতিক পন্থায় রোহিঙ্গা ইস্যুর সমাধান খোঁজার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। তবে পরিস্থিতি দিন দিন অবনতিশীল হওয়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রামুর দশম পদাতিক ডিভিশনকে সতর্ক অবস্থানে থাকার বিষয়টি লক্ষ্যণীয়। যদিও সরকারীভাবে এ ধরনের ঘোষণা এখনও মেলেনি। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ নৌবাহিনী সেন্টমার্টিন দ্বীপে অবস্থিত ফরোয়ার্ড বেসও রয়েছে সতর্ক অবস্থানে। সমুদ্রসীমা পাহারায় সর্বোচ্চমানের যুদ্ধ জাহাজ একটি ফ্রিগেট ও একটি করভেটও সেখানে মোতায়েন রয়েছে। পালাক্রমে একটি নিয়মিত টহল দেয়। অপরটি বেসে অবস্থান নিয়ে থাকে। সেনাবাহিনীর রামু পদাতিক ডিভিশনে সহসা বগুড়া থেকে ট্যাঙ্কও যোগ দেয়ার তথ্য মিলেছে। সামরিক সূত্রে পুরো বিষয়টি কোন যুদ্ধের জন্য নয়, তবে সীমান্ত এলাকায় সীমান্তরক্ষীদের পর সেনা টহল প্রয়োজনীয় শক্তি নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। একদিনেই ২০ সহস্রাধিক রোহিঙ্গা শুক্রবার ভোররাত থেকে বিকেল পর্যন্ত একদিনেই সীমান্তের ওপার থেকে ২০ সহস্রাধিক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। টেকনাফ, উখিয়া, নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তের বিভিন্ন জিরো পয়েন্টে আরও হাজার হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। উখিয়া উপজেলার পালংখালির আঞ্জুমানপাড়া, টেকনাফ উপজেলার হোয়াইকংয়ের উনচিপ্রাং, শাহপরীরদ্বীপ, বাহারছড়ার সৈকত এবং বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির আচারবুনিয়া, চাকঢালা, বাইশারি, আমতলী, ঘুনধুম, তমব্রু এলাকা দিয়ে শুক্রবার এসব রোহিঙ্গা দলে দলে অনুপ্রবেশ করেছে। আর নাফ নদীর মোহনায় টেকনাফের সমুদ্র সৈকতে শুক্রবার আরও দুটি লাশ ভেসে এসেছে। ফলে গত ২৯ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত নারী শিশুসহ ১১৪টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এরমধ্যে ৫৮ জন শিশু, ৩০ নারী ও পুরুষ ৩০ জন রয়েছে। এর আগে শুক্রবার উদ্ধার হয়েছে ৪টি লাশ। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাঈনউদ্দিন খান এসব লাশ উদ্ধারের ঘটনা নিশ্চিত করেছেন। উল্লেখ্য, রাখাইনে সেনা অভিযান শুরু হওয়ার পর সাগর পথে পালিয়ে আসা নৌরুটে ২৩ নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। দুই গ্রামে নতুন করে গণহত্যা শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাখাইনে রাচিদং শোয়াপ্রাং গ্রামে সেনা সদস্যরা নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। এতে আরও শতাধিক রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছে বলে সীমান্তের ওপার থেকে সূত্র নিশ্চিত করা হয়েছে। সেখানকার সেনা সূত্রগুলোর মতে, মৌলভী আবুল হাশিম নামের এক আরসা নেতার নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা জমায়েত হয়েছে এমন খবরে তারা সেখানকার বিভিন্ন রোহিঙ্গা বসতিতে তল্লাশি অভিযান চালায়। সেনা অভিযানে ভীতসন্ত্রস্ত রোহিঙ্গারা এক জায়গায় জমায়েত হলে তাদের ওপর চলে নির্বিচারে গুলি। এতে এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। নারী ও শিশুরাই বেশি আসছে গত ২৫ আগস্ট রাত থেকে সেনা অভিযান শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত যেসব রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে নারী ও শিশুর আধিক্য রয়েছে। বেসরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা ৫ লাখের কাছে পৌঁছে গেছে। যারমধ্যে ৬০ শতাংশই নারী ও শিশু। তাদের সঙ্গে বৃদ্ধ পুরুষ ও মহিলাও রয়েছে। তবে যুবকের সংখ্যা খুব কম। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিয়ানমার সামরিকবাহিনী যুবকদেরই বেশি টার্গেট করে গণহারে হত্যা করছে। ফলে বহু যুবক পরিবার ফেলে গহীন অরণ্যে গা-ঢাকা দিয়েছে। আবার অনেকে গণহত্যার শিকার হয়েছে। আবার অনুপ্রবেশকারীদের কাছ থেকে এমন তথ্যও মিলছে যে, রোহিঙ্গাদের নিজস্ব অধিকার রক্ষায় আরসা’র সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। তবে সীমান্ত এলাকার একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মিয়ানমারের সেনা বাহিনী শত শত রোহিঙ্গা যুবক ঘর ছেড়ে কোথায় পালিয়েছে এমন প্রশ্ন তুললে রোহিঙ্গাদের পক্ষে পরিষ্কার কোন তথ্য মেলেনি। কে কোথায় গেছে তা তাদের জানা নেই। মরে গেছে না বেঁচে আছে তাও তাদের জানা নেই। যারা এপারে চলে এসেছে তাদের কেউ কেউ এসেছে সপরিবারে। আবার কেউ কেউ এসেছে বিচ্ছিন্নভাবে। এমনও তথ্য মিলছে, আগে এসেছে স্ত্রী ও সন্তানরা। পরে এসেছে স্বামী। আবার বহু পরিবারের স্বামী ও যুবকরা নিখোঁজ রয়েছে। রোহিঙ্গা শূন্য করতে আগুন সামরিক বাহিনী রাখাইন রাজ্যকে রোহিঙ্গামুক্ত করতে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে এর প্রমাণ পেয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মাঝে যারা সন্ত্রাসী তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর নামে মূলত সেখানে চলছে গণহারে রোহিঙ্গা নিধন। ফলে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে বাধ্য হয়েছে। এছাড়া এ পর্যন্ত প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী ৫ সহস্রাধিক রোহিঙ্গা সেনা ও রাখাইনসন্ত্রাসীদের বর্বরতায় প্রাণ হারিয়েছে। প্রতিদিন জ্বালাও পোড়াও অব্যাহত রয়েছে। ফলে রোহিঙ্গাদের পলায়নও চলছে সকাল থেকে রাত অবধি। রক্তদান কর্মসূচী মিয়ানমারে সামরিক জান্তার অভিযানে গুরুতর জখম ও আহতদের জন্য শুক্রবার কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রক্তদান কর্মসূচীর উদ্বোধন করা হয়েছে। একুশে পদকপ্রাপ্ত বাংলাদেশী বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু, বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার উপ-সংঘরাজ ও রামু কেন্দ্রীয় সীমা বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ প-িত ভদন্ত সত্যপ্রিয় মহাথের সকালে রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারে এ রক্তদান কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন। ৬ দালালকে সাজা অবৈধভাবে শরণার্থী ক্যাম্প স্থাপন করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানের বিনিময়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগে উখিয়ার থাইংখালী এলাকা থেকে দালাল চক্রের ১ জনকে ২০ দিনের এবং ৫ জনকে ১৫ দিনের কারাদ- প্রদান করেছে র‌্যাব-৭ এর ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত দুই দিনে র‌্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্পের সদস্যদের নেতৃত্বে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কক্সবাজার জুয়েল আহমেদের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠন করে এসব দালালদের কারাদ- প্রদান করা হয়। দ-প্রাপ্তরা হলেন- মনির আহাম্মদ, ফরিদ আলম, নূরুল কবির, নূরুল আমিন বাবু, জয়নাল আবেদীন ও শাহাব উদ্দিন। ত্রাণ সহায়তায় সমন্বয়হীনতা টেকনাফ ও উখিয়ার অন্তত ১২টি রোহিঙ্গা বস্তিতে যে কোন ধরনের লোকজন এসে অনুমতিবিহীন ত্রাণ দেয়ার কারণে প্রতিদিন একাধিক রোহিঙ্গা পদদলিত হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার কুতুপালং ক্যাম্পে তিন রোহিঙ্গা পদদলিত হয়ে মারা গেছে। মানবতার খাতিরে সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও প্রতিদিন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকজন এসে ত্রাণ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত যে ত্রাণ সহায়তা এসেছে, তা দিয়ে টেকনাফে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলা করা সম্ভব। কিন্তু সঠিকভাবে বন্টনের অভাবে অধিকাংশ রোহিঙ্গাদের মাঝে খাদ্যাভাব চলছে। অর্ধেকেরও বেশি রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ গত ২০ দিনে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পাঁচ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে। ২৫ আগস্ট রাতে সামরিক অভিযান শুরুর পর ২৬ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়েছে। প্রতি দিন গড়ে অনুপ্রবেশ করছে ১৫-২০ হাজার রোহিঙ্গা। চলতি সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মিয়ানমারে প্রায় ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার বসবাস ছিল বলে সীমান্তের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। চিকিৎসা ব্যবস্থায় হিমশিম সহিংসতার পর রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সদর হাসপাতালে খোলা হয়েছে আলাদা রোহিঙ্গা সার্জারি ইউনিট। এত রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। কোন রোহিঙ্গার অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে পাঠানো হচ্ছে। কক্সবাজার সদর হাসপাতাল ছাড়াও কুতুপালং কমিউনিটি ক্লিনিক, এমএসএফ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালেও তাদের চিকিৎসা চলছে। সেনাবাহিনী ও রাখাইনদের হাতে নানাভাবে নির্যাতিত হয়ে পালিয়ে আসা অনেক রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধ, জখমসহ নানাবিদ রোগে আক্রান্ত। গুরুতর আহত রোহিঙ্গারা ভিড় করছে জেলা সদর হাসপাতালে। এসব রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসকরা। যাদের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন তাদের চমেক হাসপাতালে প্রতিনিয়ত প্রেরণ করা হচ্ছে। ইয়াবার চালানও আসছে টেকনাফ উপজেলা আইনশৃঙ্খলা ও চোরাচালান প্রতিরোধ টাস্কফোর্স কমিটির সভায় টেকনাফ সীমান্তে বর্তমানে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পাশাপাশি ইয়াবা চোরাচালান বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদ হোসেন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্যে উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ বলেন, বর্তমানে টেকনাফ সীমান্তে দলে দলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পাশাপাশি ইয়াবা চোরাচালান বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে একাধিক চালান ধরাও পড়েছে। বর্তমানে রোহিঙ্গা ইস্যু ভয়াবহ এবং ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। রোহিঙ্গা নিধনে ডার্ক ফোর্স রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সমূলে উৎপাটনে ডার্ক ফোর্স (সেনা সদস্য) এর রক্তাক্ত অভিযান থামছে না। প্রতিনিয়ত জ্বালাও পোড়াও এবং নির্বিচারে গুলি করে রোহিঙ্গাদের সমূলে উৎপাটনের পথ বেছে নেয়া হয়েছে বলে প্রতিনিয়ত খবর আসছে। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, যে কোন মুহূর্তে মিয়ানমারের শাসনভার আবারও সম্পূর্ণভাবে সেনা নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে। উল্লেখ করা যেতে পারে, দেশটির ৭০ বছরের ইতিহাসে ৫৫ বছরই শাসন ক্ষমতায় ছিল সেনাবাহিনী। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিদেশী গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে, গণতান্ত্রিক সরকারের নামে সুচি ক্ষমতায় থাকলেও মূলত নেপথ্যে সব কলকাঠির নায়ক সামরিক জান্তা। নতুন সংযোজন অনুযায়ী তাদের পার্লামেন্টে ২৫ শতাংশ আসন রয়েছে সেনা নিয়ন্ত্রণে। এছাড়া প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র ও সীমান্ত বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও সেনাবাহিনীর হাতেই রয়েছে। এক্ষেত্রে কথিত গণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষে হস্তক্ষেপের কোন সুযোগ নেই। ফলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সীমান্ত সমস্যা সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এরফলে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ অব্যাহত রয়েছে। এক্ষেত্রে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রধান মিন অং লাইং এর ইশারাতেই সামরিক অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে সুচি নিজের কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না। তিনি যা বলছেন তা সামরিক জান্তার নির্দেশে বলতে বাধ্য হচ্ছেন বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রচারিত হয়েছে। এমন খবরও পাওয়া যাচ্ছে, মিয়ানমারে পুনরায় সেনাশাসন ফিরিয়ে আনতে ডার্ক ফোর্স এখন রীতিমত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ প্রক্রিয়ায় সুচির ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার বিষয়টিও অমূলক নয়। যে কারণে রোহিঙ্গা নিধন অভিযানে সুচি সরব হতে তো পারছেনই না, উল্টো সামরিক জান্তার সমর্থনেই রয়েছেন। তিনি ২৫ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া সামরিক অভিযানকে প্রকাশ্যেই সমর্থন দিয়েছেন। চমেকে অগ্নিদগ্ধ শিশু রাখাইন রাজ্যে সে দেশের সেনাবাহিনীর আগুনে দগ্ধ ২৫ দিনের এক শিশুকে শুক্রবার চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ভোরে উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আইএমও’র গাড়িযোগে শিশুটিকে চমেকে প্রেরণ করা হয়। সঙ্গে রয়েছেন তার পিতা সৈয়দ নুর। তিনি জানিয়েছেন, তার বাড়ি আকিয়াব জেলার রাচিদংয়ের জোফরান এলাকায়। সেনা সদস্যরা তার বাড়িতে আগুন দিলে তার এই শিশুপুত্রটি অগ্নিদগ্ধ হয়। এর এই শিশুটিকে নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। অপরদিকে, আরও দুই রোহিঙ্গাকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা আহত হয়েছেন সড়ক দুর্ঘটনায়। এদের একজন সেলিম উল্লাহ (৩৫)। অন্যজন হাফেজ আহমদ (১৬)। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ১১৫ রোহিঙ্গাকে চমেকে ভর্তি করা হলো। রাখাইনে ত্রাণ যাবে, কোন ত্রাণ কর্মী যাবে না শুক্রবার মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জাউহতাইয়ের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যে ত্রাণ যাবে, তবে কোন ত্রাণকর্মী যাবে না। তিনি পরিষ্কারভাবে বলেছেন, ত্রাণ কর্মীদের প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী উইন মিয়াত আইয়ে বলেছেন, শুক্রবার পর্যন্ত সংঘাতময় এলাকায় বিদেশী কোন ত্রাণ সংস্থা প্রবেশ করেনি।
×