ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

৫০ টেস্ট শেষে রানের দিক থেকে ছাড়িয়ে গেছেন শচীন, পন্টিং, সাঙ্গাকারা, জয়াবর্ধনে ও কুককে, এক টেস্টের উভয় ইনিংসে অর্ধশতক হাঁকিয়ে ছুঁয়েছেন হাবিবুলকে

তামিম ইকবালের আরেকটি রেকর্ড

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৩০ আগস্ট ২০১৭

তামিম ইকবালের আরেকটি রেকর্ড

মোঃ মামুন রশীদ ॥ এক বিস্ময়ের নাম হয়ে গেছেন তিনি। যখন অন্য ব্যাটসম্যানরা রীতিমতো সংগ্রাম করেছেন, রান করতে ধুঁকেছেন তখন তিনি সাবলীল ভঙ্গিতে খেলেছেন। এ কারণেই বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানে পরিণত হয়েছেন তিনি। বাঁহাতি ওপেনার তামিম ইকবাল সে কারণে অনেকগুলো রেকর্ডেরই মালিক হয়ে গেছেন। মিরপুর টেস্টে আরেকটি রেকর্ডের মালিক হয়ে গেলেন। ক্যারিয়ারের ৫০তম টেস্টের উভয় ইনিংসে অর্ধশতক হাঁকানো একমাত্র বাংলাদেশী হয়েছেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ৭১ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৭৮ রান। এক টেস্টের উভয় ইনিংসে অর্ধশতক বা তার বেশি রান করার দিক থেকে সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার ছিলেন সবার ওপরে। তাকে ছুঁয়ে ফেলেছেন তামিম। উভয়ের এমন কীর্তি আছে ৬ বার করে। আরেকটি পরিসংখ্যানে তামিম পেছনে ফেলেছেন টেস্ট ক্রিকেটের সর্বাধিক রান ও সেঞ্চুরির মালিক কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকর, শ্রীলঙ্কার দুই কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিং ও ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক এ্যালিস্টার কুককে। ক্যারিয়ারের ৫০ টেস্ট শেষে তাদের চেয়ে বেশি রান সংগ্রহ করেছেন তামিম। ক্যারিয়ারের ৫০ টেস্ট শেষে রান করার দিক থেকে স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান, ভারতের সুনীল গাভাস্কারসহ অনেকেই আছেন তামিমের চেয়ে এগিয়ে। ক্যারিয়ারের ৫০ টেস্ট শেষে ব্র্যাডম্যান সর্বাধিক ৬৭৯০ রান করেছিলেন ২৮ সেঞ্চুরি ও ১৩ হাফসেঞ্চুরিসহ, গাভাস্কার ৪৯৪৭ রান করেছিলেন ৫৭.৫২ গড়ে ২০ সেঞ্চুরি ও ২১ হাফসেঞ্চুরিসহ। ক্যারিয়ারের ৫০তম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৭১ রান করেন তামিম। দ্বিতীয় ইনিংসে সাজঘরে ফেরেন ৭৮ রানে। এর ফলে তার রান দাঁড়িয়েছে ৪০.২৭ গড়ে ৩৮২৬। এর মধ্যে করেছেন ৮ সেঞ্চুরি ও ২৪ হাফসেঞ্চুরি। ৫০ টেস্ট শেষে রান করার দিক থেকে তামিমের পেছনে পড়েছেন অনেক কিংবদন্তি ক্রিকেটার। এর মধ্যে অন্যতম শচীন টেন্ডুলকর। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বাধিক রানের মালিক তিনি। সেই শচীনও ক্যারিয়ারের প্রথম ৫০ টেস্টে রান করেছিলেন ৩৪৩৮। এছাড়াও তামিমের নিচে আছেন সাঙ্গাকারা (৩৬৯৮), কুক (৩৬৫৪) জয়াবর্ধনে (৩৫০১) ও পন্টিংদের (৩০৮১) মতো কিংবদন্তিরা। অন্যরকম এক উচ্চতায়ই নিজেকে নিয়ে গেলেন তামিম। অবশ্য যে কয়জন ক্রিকেটার প্রথম ৫০ টেস্টের পরিসংখ্যানে পিছিয়ে ছিলেন তারা সকলেই পরবর্তীতে অনেক বেশি রানের মালিক হয়ে গেছেন। পন্টিং ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বাধিক এবং অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বাধিক রানের (১৩,৩৭৮) মালিক। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটে সর্বাধিক রানের মালিক সাঙ্গাকারা (১২,৪০০) বিশ্বের পঞ্চম, জয়াবর্ধনে (১১,৮১৪) বিশ্বের অষ্টম এবং ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বাধিক (১১,৬০২) বিশ্বের নবম সর্বাধিক রান সংগ্রহকারী। বাংলাদেশ দল টেস্ট ক্রিকেটে মাত্র ১৭ বছর পার করেছে। অন্য দলগুলোর মতো টেস্ট ম্যাচও খুব বেশি পরিমাণে খেলার সুযোগ পায়নি। ৯ বছর ধরে টেস্ট খেলেও তাই সবেমাত্র ৫০ ম্যাচ খেলা হয়েছে তামিমের। ইতোমধ্যেই তিনি বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক রানের মালিক হয়ে গেছেন। আর একের পর এক নিজেকে কিংবদন্তিদের কাতারেও নিয়ে যাচ্ছেন। মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে করেছিলেন ৭১ রান। বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে দুর্দান্ত সেই ইনিংস খেলে বাংলাদেশ দলকে রক্ষা করেন তামিম। সেখানে তার সঙ্গী ছিলেন সাকিব। দ্বিতীয় ইনিংসেও তামিম পেরিয়ে গেলেন পঞ্চাশ। এবার সঙ্গী হিসেবে কাউকেই বেশিক্ষণ পাননি। বাংলাদেশের পক্ষে যারা ৫০ টেস্ট খেলেছেন তাদের কেউ দুই ইনিংসেই অর্ধশতক হাঁকাতে পারেননি। এমনকি প্রথম ইনিংসে সাকিবের ৫০-ই ছিল বাংলাদেশের পক্ষে ক্যারিয়ারের পঞ্চাশতম টেস্টে প্রথম অর্ধশতক হাঁকানোর ঘটনা। সেই সাকিবও দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু জোড়া অর্ধশতকের নজির স্থাপন করেছেন তামিম। এমন কীর্তি অবশ্য এটাই তার প্রথম নয়। এক টেস্টে জোড়া পঞ্চাশ এই নিয়ে পেলেন তামিম ৬ বার। ছুঁলেন বাংলাদেশের রেকর্ড। এতদিন এই রেকর্ড এককভাবে ছিল বর্তমানে জাতীয় দলের নির্বাচক ও সাবেক অধিনায়ক হাবিবুলের। ৫০ টেস্টের ক্যারিয়ারে সাবেক অধিনায়ক ৬ বার ছুঁয়েছিলেন এক টেস্টে জোড়া পঞ্চাশ। কিন্তু ক্যারিয়ারের ৫০তম টেস্টে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তামিম টেস্ট ক্যারিয়ার শুরুই করেছিলেন দুটি হাফসেঞ্চুরিতে। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে ডানেডিন টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে করেছিলেন ৫৩ ও ৮৪। এরপর ২০১০ সালে মিরপুরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৫ ও ৫২, কদিন পর ইংল্যান্ডে গিয়ে লর্ডসে ৫৫ ও ১০৩, ২০১৩ সালে কিউইদের বিপক্ষে মিরপুরে ৯৫ ও ৭০, পরের বছর জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামে ১০৯ ও ৬৫। তিন বছর পর আবার একই কৃতিত্ব দেখালেন তিনি। আর সেটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি ম্যাচে। উভয় ইনিংসেই তিনি দলের রক্ষাকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। হাবিবুল ও তামিম ছাড়াও কোন টেস্টের উভয় ইনিংসে অর্ধশতক হাঁকানোর কীর্তি আছে আরও কয়েকজন ব্যাটসম্যানের। তবে একাধিকবার করার ঘটনা আছে বাংলাদেশের আর মাত্র তিনজনের। মিরপুর টেস্টের আগে উভয় ইনিংসে অর্ধশতক ৩ বার করেছেন সাকিব, মুশফিকুর রহীম ও নাসির হোসেন ২ বার করে করেছেন। তবে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৬১ টেস্ট খেলা মোহাম্মদ আশরাফুল আশ্চর্যজনকভাবে এমন কীর্তি দেখাতে পারেননি একবারও।
×