ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এ জীবনের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা খুঁজে পাই -শেরিল স্যান্ডবার্গ

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ২৯ আগস্ট ২০১৭

এ জীবনের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা খুঁজে পাই -শেরিল স্যান্ডবার্গ

ফেসবুকের চীফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ বার্কলীর ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটিতে ছাত্রদের স্নাতক হয়ে বেরিয়ে আসা উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে যে ভাষণ দিয়েছিলেন তা অন্যদের জন্য যথেষ্ট প্রেরণাদায়ক। ভাষণে তিনি দর্শক-শ্রোতাদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আপনাদের অনেকে ইতোমধ্যেই হয়ত সেই ধরনের ট্র্যাজেডি এবং দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছেন যা দূরপনেয় ছাপ রেখে গেছে। তাবে আজকের দিনটি সম্পর্কে আমি যা বলতে চাই তা হলো এর পরে আপনাদের কি করণীয়। বলতে চাই সেই সব করণীয় সম্পর্কে যেগুলো আপনারা প্রতিকূলতা যখন যেভাবেই আঘাত করুক না তা কাটিয়ে ওঠার জন্য করতে পারেন। এতে আপনাদের সামনের দিনগুলো সহজ হবে। তার কঠিন দিনগুলো যে দিনগুলো আপনাদের অস্তিত্বের মর্মমূলের প্রতি চ্যালঞ্জ সৃষ্টি করে সেগুলোই নির্ধারণ করে দেবে কে আপনি।’ ভাষণে স্যান্ডবার্গ প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে তার স্বামীর সাম্প্রতিক মৃত্যুর কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আজ আমি আপনাদের সঙ্গে আমার এই অনুভূতি শেয়ার করছি এই আশায় যে সমস্ত আনন্দ উচ্ছলতার এই দিনটিতে আপনারা জীবনের সেই শিক্ষাগুলো লাভ করতে পারেন যা আমি শুধু আমার স্বামীর মৃত্যুতে লাভ করেছি। আপনারা লাভ করতে পারেন সেই শিক্ষাগুলো যা হলো আশা সম্পর্কে শক্তি সম্পর্কে এবং আমাদের ভেতরকার আলো সম্পর্কে আলো কখনই নিভে যাবে না। কঠিন দিনগুলোই আপনার পরিচয় নির্ধারণ করে দেবে। আপনি সঞ্চারিত হবেন আপনি কি অর্জন করেছেন তার দ্বারা নয় বরং আপনি কিভাবে টিকে আছেন তার দ্বারা। স্যান্ডবার্গ অনেক হতাশার মধ্য দিয়ে গিয়েও কিভাবে জীবনের জন্য গভীরতর কৃতজ্ঞতা খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছিলেন তা আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করব আপনারা জীবনকে জীবনের মতো করে অনুভব করবেন। জীবনের প্রতিটি মূল্যবান দিন আনন্দ ও অর্থ নিয়ে বেঁচে থাকবেন। আশা করব ব্যথা-বেদনা ছাড়াই হেঁটে চলে বেড়াতে পারবেন, প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য কৃতজ্ঞ থাকবেন। আর চ্যালেঞ্জ যখন আসবে আশা করব এ কথা মনে করবেন যে আপনার গভীরে রয়েছে শেখার ও বড় হওয়ার ক্ষমতা। স্যান্ডবার্গ বলেন, জীবনে আপনারা নিশ্চয়ই অধিকতর ও গভীরতর প্রতিকূলতার সম্মুখীন হবেন। সুযোগ আসবে এবং হাতছাড়া হবে। চাকরি পোষাবে না। অসুস্থতা দেখা দেবে বা দুর্ঘটনা ঘটবে যা সবকিছুই বদলে দেবে নিমেষের মধ্যে। সম্মান ও মর্যাদাহাানির ব্যাপার ঘটবে। ভালবাসা হারিয়ে যাবে। ভাঙ্গা সম্পর্ক আর জোড়া লাগবে না এবং কখনও কখনও খোদ জীবনের অবসান ঘটে যাবে। এ সব কিছুর কোন না কোনটা আপনার জীবনে ঘটতে পারে। কিন্তু তাই বলে হতাশা হবেন না। আশা হারাবেন না। কারণ সুরঙ্গের ও প্রান্তেই আছে আলোর ইশারা। সিলিকন ভ্যালির প্রতিনিধি হিসেবে আমি সানন্দে আপনাদের জানাচ্ছি যে শেখার মতো অনেক তথ্য আছে। লোকে কিভাবে বিপর্যয়ের মোকাবেলা করে তা নিয়ে কয়েক দশক গবেষণায় কাটানোর পর মনস্তত্ত্ববিদ মার্টিন সেলিগম্যান লক্ষ্য করেছেন দুঃখ-কষ্ট বিপর্যয় থেকে আমরা যেভাবে ফিরে আসি সেক্ষেত্রে তিনটি ইংরেজী ‘পি’ গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো হলো পার্সোনালাইজেশন, পারভেসিভনেস ও পার্মানেন্স। প্রথম পি হলো পার্সোনালাইজেশন বা নিজস্বকরণ সেটা হলো এই বিশ্বাস যে আমাদের ভুল হচ্ছে। এটা দায়িত্ব গ্রহণ করা থেকে ভিন্ন। এটাই হলো সেই শিক্ষা যে আমাদের বেলায় ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর প্রতিটাই যে আমাদের কারণে ঘটেছে তা নয়। ডেভিড যখন মারা যায় তখন আমার যে প্রতিক্রিয়া হয়েছিল তা অতি সাধারণ। সেটা হলো ওর মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ী করা। ডেভিড কার্ডিয়াক এরিদমিয়ায় কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মারা যান।] মেডিক্যাল রেকর্ডপত্র ঘেঁটে নিজেকে আমি প্রশ্ন করেছিলাম আমি কি করতে পারতাম বা আমার কি করা উচিত ছিল। তিনটি পি সম্পর্কে শেখা বা জানার পর আমি এ সত্যটি মেনে নিয়েছিলাম যে আমি তার মৃত্যু রোধ করতে পারতাম না। চিকিৎসকরা তার করোনারি আর্টারি রোগ শনাক্ত করেননি। আমি অর্থনীতিতে মেজর। আমি এখানে কি করতে পারতাম? স্যান্ডবার্গ উল্লেখ করেন যে গবেষণায় দেখা গেছে, অতীতের নিজস্বকরণ থেকে প্রকৃতপক্ষে নিজেকে আরও শক্তিশালী করে তোলা যায়। যারা আগের কাজে খারাপ করেছে তাদের যদি এই বিশ্বাস থাকে যে তারা আরও ভাল করার ক্ষমতা রাখে তাহলে তারা সত্যই পরে ভাল করতে পারে। স্যান্ডবার্গ বলেন যে, দ্বিতীয় পি হলো পার্ভেসিভনেস বা সর্বব্যাপিতা। সেটা হলো এই বিশ্বাস যে একটা ঘটনা ব্যক্তির জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি জানান যে তার স্বামীর মৃত্যু তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব রেখেছিল। পরে তিনি ধীরে ধীরে এই নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হন। বাচ্চারাও অধিকতর ধাতস্থ হয়ে ওঠে। তাদের কান্নাকাটি কমে আসে এবং খেলাধুলার পেছনে অধিকতর মনোনিবেশ করে। তৃতীয় পি হলো পার্মানেন্স বা চিরস্থায়িত্ব। সেটা হলে এই ধারণা যে দুঃখ-বেদনা চিরস্থায়ী হবে। স্বামীর মৃত্যুর পর স্যান্ডবার্গ তো কত কিছুই করেছিলেন। কিন্তু তার পরও তার মনে হয়েছে যে এই বিধ্বংসী বিয়োগব্যথা চিরস্থায়ী হবে। এ থেকে কোন দিন তিনি মুক্ত হতে পারবেন না। ডিপ্রজন্ম ডেস্ক
×