ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রংপুরে বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২৭ আগস্ট ২০১৭

রংপুরে বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর, ২৬ আগস্ট ॥ উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে রংপুর জেলার ৮ উপজেলায় ৪ শতাধিক গ্রামের ৫ লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। জেলায় ৫ শতাধিক ল্যাট্রিন ও ৬ শতাধিক নলকূপ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে । সরেজমিনে দেখা গেছে, রংপুর জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী ও করতোয়া নদী ভাঙ্গনে রংপুর সিটি কর্পোরেশন, সদর উপজেলা, পীরগঞ্জ, পীরগাছা, গঙ্গাচড়া, তারাগঞ্জ, কাউনিয়া, মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ উপজেলার ৭৮ ইউনিয়নের মধ্যে ৩৭টি ইউনিয়নের ৪ শতাধিক গ্রামের ৫ লক্ষাধিক মানুষ বন্যার পানিতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । পীরগঞ্জ উপজেলার বন্যাকবলিত চতরা, চৈত্রকল, টুকুরিয়া ইউনিয়নের গোবিন্দপাড়া, ফুয়াদপুর, ১৪নং ফুয়াদপুর, চ-িদুয়ার, লামাঘাষিপুর, চক ভ্যাকা, গোয়ালবাড়ি, বদনাপাড়া, কাটা দুয়ার, জলমহল, বাইটকামারী, হলদিবাড়ি, গাংদুয়ার, ফরিদপুর, খান শ্যামপুর, কুমারপুর, সুরানন্দপুর, শিমুলবাড়ি, মেরির পাড়া, ধর্মদাসপুর, রামনাথপুর, দুর্গাপুর গ্রামের কোন কোন স্থানে হাঁটু, কোমর ও বুক এবং অথৈ পানি এখনও রয়েছে। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট ও ব্রিজ-কালভার্ট, পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঘর-বারান্দায় স্থান নিয়েছে মানুষ, গরু ছাগল। বন্ধ রয়েছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম। নৌকা আর কলা গাছের ভেলায় চলাচল করতে হচ্ছে ওই ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের বন্যার্তদের। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমল কুমার ঘোষ জানান, পানিবন্দী মানুষকে সরকারী সাহায্য সাধ্যমতো দেয়া হয়েছে । গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া, আলমবিদিতর, লক্ষিটারী, কোলকোন্দ, লোহানী, গজঘন্টাসহ সদর ইউনিয়নের জয়রাম ওঝা, শংকরদহ, চর ইশোরকুল, গান্নারপাড়, চর মটুকপুর, চিলাখাল, বিনবিনা, হাজীপাড়াসহ অর্ধশত গ্রামের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। পানিবন্দী মানুষের মাঝে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। এদের অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য গৃহপালিত পশু-পাখিসহ পাশর্^বর্তী উঁচু জায়গায় ও তিস্তা প্রতিরক্ষা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। এ বিষয়ে লক্ষীটারী ইউ.পি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী জানান, তার ইউনিয়নের চর শংকরদহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বর্তমানে তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে হুমকির মুখে রয়েছে। এছাড়াও ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের কাচনা, শাহপাড়া, হাড়িয়ারকুটি ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী, মামুন পাড়া, সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট, চিলাপাক, আলমপুর ইউনিয়নের মধুরামপুর, তেঁতুলতলা, চাকলা এবং কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর ডাঙ্গাপাড়া গ্রাম। ওই সব পানিবন্দী দুস্থ ও অসহায় মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতে না পেরে চরম খাদ্য সঙ্কটে ভুগছেন। কাশিয়াবাড়ী এলাকার পানিবন্দী আজিজার রহমান, রিমু বালা, জয়ন্তী বালা, অতুল চন্দ্র জানান, গত কয়েকদিন ধরে পানিবন্দী অবস্থায় তারা ঘরে বসে আছেন। হাতে কাজকর্ম না থাকায় ঘরে কোন খাবার ছিল না। এ পর্যন্ত সরকারী কোন সাহায্য সহযোগিতা পাননি। কাউনিয়া উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে বন্যার কিছুটা উন্নতি হলেও দুর্গত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। কোন কোন বাড়িতে হাঁটু থেকে কোমার পর্যন্ত পানি রয়েছে। ৪ ইউনিয়নের চরাঞ্চলসহ ১৭টি গ্রামে চলছে খাদ্য সঙ্কট। সেই সঙ্গে বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের তীব্র সঙ্কট বিরাজ করছে। টেপামধুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ইতোমেধ্য বেশ কিছু গ্রামে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। বালাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আনছার আলী জানান, ইতোমধ্যে ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলোতে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে ও সঙ্গে সঙ্গে নদীর ভাঙ্গনও শুরু হয়েছে। বন্যায় পীরগাছা উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিবদেব চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পানির নিচে তলিয়ে গেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, ইট, সিমেন্ট, পাথর দিয়েও রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিফতরের পরিসংখানে জেলায় ৫ শতাধিক ল্যাট্রিন ও ৬ শতাধিক নলকূপ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ কারণেই মানুষ ও পশুপাখির বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে । জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ফরিদুল হক বলেন, জেলার ৮ উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ৭৪ হাজার ৫০৫টি। এসব পরিবারের মোট সদস্য প্রায় ৩ লাখ ২২ হাজার ৫২৫। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে সরকারীভাবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ৩৬০ টন চাল ও ৩ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। আরও বরাদ্দ চেয়ে ঢাকায় জরুরী চাহিদাপত্র পাঠানো হলেও এখনও তা মেলেনি।
×