ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোস্তাফা জব্বার

একুশ শতক ॥ খবর নেই ডিজিটাল বিশ^বিদ্যালয়ের

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ২৭ আগস্ট ২০১৭

একুশ শতক ॥ খবর নেই ডিজিটাল বিশ^বিদ্যালয়ের

॥ এক ॥ কোথায় আছে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়। কি খবর এর? কোথায় সেটি স্থাপিত হবে? এর উপাচার্য কে হবেন? ক্যাম্পাসের খবর কি? এসব কোন প্রশ্নের জবাব নেই কারও কাছে। অথচ এমনটি কি হবার কথা ছিল? জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে স্থাপিতব্য দেশের শ্রেষ্ঠতম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি কেন এখনও আলোর মুখ দেখেনি? গত ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪ বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের খসড়া আইনটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে এবং পরে সেটি সংসদে আইন আকারেও পাস হয়েছে। এটি অবশ্যই একটি মাইলফলক সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হবার আরও একটি সিঁড়ি অতিক্রান্ত হলো। সেদিন মিডিয়া যে খবরটি প্রকাশ করে তাতে এটি বলা হয় যে, তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিষয়ক সচিব জানিয়েছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়টির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাম যুক্ত থাকবে। তিনি আরও বলেন যে, এটি গাজীপুরে স্থাপিত হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের অঙ্গীকারের সঙ্গে যত স্বপ্ন যুক্ত আছে তার একটি হলো বিশ্বমানের ডিজিটাল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা। ২০০৯ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণাকারী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই সেই স্বপ্নটা প্রকাশ করি আমি। এটি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজও শুরু করি আমি। তখন প্লাটফরম হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি। তবে কালক্রমে কম্পিউটার সমিতির এই উদ্যোগ সরকারের উদ্যোগে পরিণত হয়। কিন্তু সর্বশেষ যে তথ্যাদি আমাদের কাছে পৌঁছেছে তাতে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপনের কোন অগ্রগতি নেই। বিশ্ববিদ্যালয়টির জায়গা এখনও ঠিক হয়নি। কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্কে জায়গা পাওয়া যায়নি। এর পাশে খাস জমিতে জায়গা চাওয়া হয়েছে, কিন্তু সেটিওর কোন খবর নাই। পূর্বকথা : অনেকেই জানেন না এবং সরকারের প্রেক্ষাপট বিবরণেও নেই যে, প্রকৃতপক্ষে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি। শুধু তাই নয়, ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণাও ওখান থেকেই এসেছে। অনেকেই জানেন না ডিজিটাল বাংলাদেশ সেøাগানটি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জনগণের সামনে প্রথম উপস্থাপন করেছিল বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি। ২০০৮ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি বাংলা একাডেমির বইমেলায় তাদের স্টলে সেøাগান দিয়েছিল ‘একুশের স্বপ্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ’। এটি নিয়ে আমি লেখালেখি করি ২০০৭ সাল থেকে। দৈনিক সংবাদ, দৈনিক করতোয়া, মাসিক কম্পিউটার জগত এসব পত্রিকায় আমার ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণা ও কর্মসূচী বহুবার প্রকাশিত হয়েছে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে হংকংয়ের এসোসিও সামিটে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি হিসেবে আমি এর ওপর একটি উপস্থাপনা পেশ করেছিলাম। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়টি লেখার কাজটিও আমার করা। আওয়ামী লীগের হয়ে ২৩ ডিসেম্বর ২০০৮ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে আয়োজিত প্রথম ডিজিটাল বাংলাদেশ সেমিনারের মুখ্য আলোচকও আমিই ছিলাম। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির তথ্যপ্রযুক্তি মেলাগুলোর সেøাগান ছাড়াও আয়োজিত হয়েছিল বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল বাংলাদেশ সামিট। ফলে সংগঠন হিসেবে ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণাটির পতাকা এই সংগঠনটিই বহন করেছে। বলা যায় সেই সূত্র ধরেই ২০০৯ সালে যখন এই সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ সেøাগান দিয়ে ক্ষমতায় আসে তখন আমরা বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির পক্ষ থেকে অন্য অনেক কাজের মধ্যে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাবনা পেশ করি। তৎকালে বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের সঙ্গে পুরো বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তিনি বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির প্রস্তাবে সম্মতি প্রদান করেন। বিস্তারিত আলোচনা শেষে ২০০৯ সালের ২৭ আগস্ট সদ্য বন্ধ করা রূপসী বাংলা হোটেলে তার মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন যুগ্ম সচিবের সঙ্গে আমি একটি সমঝোতা স্মারক সই করি। জনাব ইয়াফেস ওসমান নিজেও সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সেই সমঝোতা স্মারকে প্রধান দুটি বিষয় ছিল : ১) ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচী বাস্তবায়নে পারস্পরিক সহায়তা করা এবং ২) আন্তর্জাতিক মানের একটি আইসিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। সেই সমঝোতা স্মারক অনুসারে মন্ত্রণালয় ঢাকার কালিয়াকৈরে ৫ একর জায়গা দেবে এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি তহবিল সংগ্রহ করবে এমন সিদ্ধান্ত ছিল। বিষয়টি নিয়ে এরপর আরও অনেক আলোচনা হয়েছিল। স্থপতি ইয়াফেস ওসমান ও গাজীপুরের এমপি এবং বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা বিষয়কমন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক এবং আমি বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করেছি। প্রধানমন্ত্রীকে আমার ধারণার কথা বলেছি। সেই সভায় গাজীপুরের ডিসিও উপস্থিত ছিলেন। খুব দ্রুত এর উদ্বোধন হবে তেমন কথাও ছিল। আমরা কোরিয়া থেকে শতকরা মাত্র .৫ ভাগ সুদে ১০০ মিলিয়ন ডলারের একটি তহবিলও যোগাড় করেছিলাম। কিন্তু আইনী বাধার কারণে সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে পারেনি। সরকারের পিপিপি বিধান থাকলেও পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কোন উপায় ছিল না। অন্তত মন্ত্রণালয় থেকে তেমন কথাই আমাদের বলা হয়েছিল। তহবিল সংগ্রহের ব্যাপারে কোরিয়াকে মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব গ্যারান্টি দিতেও সম্মত হননি। বাধ্য হয়েই কম্পিউটার সমিতি ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়ায়। তবে ভাল বিষয় হলো প্রকল্পটি সরকার গ্রহণ করে। প্রধানমন্ত্রী গাজীপুরে এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে বলে ঘোষণা দেবার পর থেকে সরকারীভাবে এর কাজ শুরু করা হয়। ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কি করতে চেয়েছিলাম : যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে ভাবি তখন পুরো ভাবনাটির একটি বড় অংশ ছিল ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে। আমি চেয়েছি কৃষি ও শিল্পযুগের শিক্ষাকে ডিজিটাল যুগে পৌঁছাতে। প্রকৃতপক্ষে আমি প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা ভাঙ্গার চেষ্টা করছি বহু বছর ধরে। বিদ্যমান শিক্ষা পদ্ধতি যে আজকের দিনের জন্য উপযুক্ত নয় সেই কথাটি সুযোগ পেলেই আমি বলি। এজন্য শিশুশিক্ষা স্তরে কিছুটা কাজও করেছি আমি। সেই ’৯৯ সালে আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছি। দেশজুড়ে সেই স্কুলের প্রসারও হয়েছে। আমি সেই ধারণাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেবার জন্য ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করে যাচ্ছি। বিজয় ডিজিটাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছি শিক্ষাকে ডিজিটাল করার জন্য। এখন সেই প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবইকে সফটওয়্যারে রূপান্তর করছে আর ডিজিটাল ক্লাসরুম তৈরি করতে স্কুলগুলোকে সহায়তা করছে। তবে এসব কর্মকা- সীমিত রয়েছে শিশুদের মাঝে। আমার স্কুলগুলো প্রাথমিক স্তর থেকে যাত্রা শুরু করে। কোনটি এখন মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পৌঁছেছে বটে। তবে উপরের শ্রেণীগুলোর ডিজিটাল রূপান্তর আদৌ হয়নি। এরই মাঝে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত কম্পিউটার শিক্ষাটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাদের পাঠ্যবই সফটওয়্যারে পরিণত হয়নি। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসবের কোন ছোঁয়াই লাগেনি। এজন্য ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বপ্নটি ছিল উচ্চশিক্ষায় ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারকে নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে এমন একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা যেখান থেকে ডিজিটাল শিক্ষার সকল উপাদান সৃষ্টি করা হবে। বড় স্বপ্ন ছিল ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় নামে দেশের সেরা একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বিশ্বের সেরা দশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটিতে রূপান্তর করার ইচ্ছাও ছিল। গাজীপুরের চন্দ্রার মোড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিগ্রী কলেজের জায়গাতেই শুরু হবার কথা ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। জায়গাটি এখন পরিত্যক্ত। এর আশপাশে সরকারী জায়গাও আছে যেগুলো বেদখল হয়ে আছে। কথা ছিল সব মিলিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস গড়ে তোলা হবে। আমার পরিকল্পনা ছিল এর স্থাপত্য হবে বাংলাদেশের সেরা। আমরা চেয়েছিলাম, ঐ জায়গাটির প্রতি ইঞ্চি মাটি তারবিহীন নেটওয়ার্কভুক্ত থাকবে। ওখানে যে যাবে সে-ই বিনামূল্যে দ্রুতগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবে। ইচ্ছা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি হবে আবাসিক। এর ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মকর্তা-কর্মচারী; সবাই ওখানেই বসবাস করবে এবং সবাই নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকবে। প্রতিটি ক্লাসরুম, হলরুম, বসার ঘর, খাবার ঘর, ছাত্রাবাস, শিক্ষক কোয়ার্টার, লবিতে থাকবে বড় পর্দার মনিটর/টিভি। তাতে থাকবে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা। সকল ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক শিক্ষিকার থাকবে বহনযোগ্য ডিজিটাল যন্ত্র। সকল পাঠ্য বিষয় হবে ডিজিটাল। সকল বিষয়কে ইন্টার এ্যাকটিভ মাল্টিমিডিয়া সফটওয়্যারে রূপান্তর করে সেটি পাঠদানের পদ্ধতি হিসেবে প্রয়োগ করা হবে। কাগজের বইকে ডিজিটাল সফটওয়্যারে রূপান্তর করে সেই বইসমূহ রেফারেন্স হিসেবে পাঠ্য করা হবে। ইন্টারনেটের গতি হবে কমপক্ষে ১ গিগাবিটের। পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা হবে অনলাইন। খাবারের ব্যবস্থা থেকে ঘর পরিষ্কার করা পর্যন্ত সকল কাজের ব্যবস্থাপনা ও তদারকি হবে তথ্যপ্রযুক্তিতে। সকল পাবলিক প্লেসে বিরাজ করবে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। প্রয়োজনীয় পর্যবেক্ষণ চলবে সকল পাবলিক স্থানে। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার জন্য যতটা সম্ভব ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। তালার বদলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা চোখের মণি মেলানোতেই একসেস থাকবে। ওখানে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের ইতিহাস নিয়ে একটি জাদুঘর গড়ে তোলার ইচ্ছাও ছিল। বস্তুত এটি হবে বাংলাদেশে ডিজিটাল শিক্ষার শ্রেষ্ঠতম কেন্দ্র। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের সেরা গবেষণার কাজগুলো হবে এখানেই। এর নামের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নামটি যুক্ত করার প্রস্তাবও বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতিই করেছিল। আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক এই বিশ্ববিদ্যালয়টির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণা করার বিষয়টিও প্রস্তাব করেছিলেন। আমরা চেয়েছিলাম বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার ডিজিটাল রূপান্তরের নেতৃত্ব দেবে এটি। একই সঙ্গে ডিজিটাল শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র এই প্রতিষ্ঠানটিই হবে। ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণ প্রস্তুত, গবেষণা, প্রয়োগ ও শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ সব কিছুতেই এটি নেতৃত্ব দেবে। আমরা এটি ভাবিনি যে, এটি কেবল একটি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকেন্দ্রিক বিশ্ববিদ্যালয় হবে বা একটি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হবে। এতে কেবল কম্পিউটার বিজ্ঞান, ইলেকট্রিক্যাল-ইলেকট্রনিক্স ইত্যাদি পড়ানো হবে তেমন ভাবনাও আমাদের ছিল না। এখানে সকল বিষয়ই পড়ানো হবে। বরং আমরা ভেবেছিলাম এটিকে কেন্দ্র করেই বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ডিজিটাল অবয়বটি দেখবে। প্রস্তাবনার শুরুতেই আমরা একে বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক গবেষণার বাইরে একটি শিক্ষা গবেষণা কেন্দ্র হিসেবেও দেখে আসছি। আমার আরও একটি ধারণা ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ঘিরে। আমি চাইছিলাম আমাদের পাহাড়ী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েদের শিশুশিক্ষার জন্য তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষামূলক সফটওয়্যার তৈরি করবে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। তারা প্রধানত বাংলা মাধ্যম স্কুলে লেখাপড়া করে। কিন্তু মাতৃভাষা বাংলা না হবার ফলে তারা এসব স্কুলে এসে ভাষাগত সমস্যায় পড়ে। শৈশবে যদি তারা তাদের মাতৃভাষায় লেখাপড়া করতে পারে, তবে সেটি তাদের জন্য একটি বিশাল সুবিধা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। আমরা এরই মাঝে যেসব শিক্ষামূলক সফটওয়্যার তৈরি করেছি, সেগুলোকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় রূপান্তর করার কাজটি করতে পারে এই বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা এটাও ভেবেছি যে, এখানকার ক্লাসগুলো দেশের বা দেশের বাইরের যে কোন স্থান থেকে নেয়া যাবে। আবার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে যে কেউ দুনিয়ার যে কোন প্রান্ত থেকে যোগ দিতে পারবে। আমাদের বড় ভাবনাটি ছিল এরকম যে, দুনিয়াজুড়ে ডিজিটাল লাইফস্টাইলের যে ধারণা ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে তার প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত বহন করবে এই প্রতিষ্ঠানটি। এখানকার রুম-বাড়ি-ঘর ব্যবহার করবে দুনিয়ার সর্বশেষ ডিজিটাল প্রযুক্তি। এখানকার মানুষদের জীবন যাপন-সামাজিক যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য-কেনাকাটা সবকিছুই হবে ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর। নতুন যতো ডিজিটাল লাইফস্টাইল পণ্য উদ্ভাবিত হবে তার প্রথম টেস্ট করার জায়গা হবে এটিই। এরপর সেটি হয় প্রয়োগ করা হবে, নয় তো বাতিল করা হবে। (আগামী সপ্তাহে সমাপ্ত) ঢাকা ॥ ১৯ জুলাই, ১৭ লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার এর জনক [email protected],
×