ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সাত খুন মামলার রায়

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ২৫ আগস্ট ২০১৭

সাত খুন মামলার রায়

দেশে-বিদেশে বহুল আলোচিত নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার রায় হয়েছে উচ্চ আদালতে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৬ জানুয়ারি চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকা-ের দায়ে বিচারিক আদালত ২৬ জনকে মৃত্যুদ- দিয়েছিল। এর বিরুদ্ধে আসামিদের আপীল ও ডেথ রেফারেন্স অগ্রাধিকারভিত্তিতে মঙ্গলবার নিষ্পত্তি করে হাইকোর্ট। রায়ে হাইকোর্ট ১৫ আসামির সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদ- বহাল রেখেছে, যাদের মধ্যে আছে লে. কর্নেল (অব) তারেক সাঈদ, কাউন্সিলর নূর হোসেন, মেজর (অব) আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার (অব) এম মাসুদ রানা প্রমুখ। তবে আদালত বলেছে, নূর হোসেন হলো চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকা-ের ‘মাস্টারমাইন্ড’। সঙ্গে ছিল অন্যরা, যারা বিপুল অর্থের বিনিময়ে এই নৃশংস হত্যাকা- ঘটিয়েছে। একই সঙ্গে ১১ আসামির সাজা কমিয়ে দেয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদ-। সেইসঙ্গে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ-াদেশ পাওয়া ৯ আসামির দ- বহাল রাখা হয়েছে। রায়ের পর্যবেক্ষণে নিহতদের প্রতি র্যাবের ভয়াবহ নৃশংসতা, নিষ্ঠুরতা, সর্বোপরি নির্দয় আচরণের উল্লেখ করে বলা হয়েছে, যদি আসামিদের উপযুক্ত সাজা দেয়া না হয় তাহলে বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতা তৈরি হবে। হাইকোর্টের রায়ে বিচারপ্রার্থীরা স্বভাবতই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন এবং আসামিপক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আদালতে আপীল করার কথা বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, ৭ আসামি ঘটনার পর থেকে অদ্যাবধি পলাতক। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ৭ জনকে অপহরণ ও হত্যাকা- সংঘটিত হওয়ার পর সাড়ে ৩ বছরের মধ্যে নিম্ন ও উচ্চ আদালতে এই মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন হয়েছে। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে দেশে ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এটি একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কেননা, দেশে ফৌজদারি মামলায় বিলম্বিত বিচারের একাধিক নজির রয়েছে। সে ক্ষেত্রে এই মামলা একটি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আসামিদের অনেকে র‌্যাবের মতো একটি বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত বাহিনীর সদস্য হওয়ায় অনেকেই সন্দেহ পোষণ করেছিলেন যে, শেষ পর্যন্ত সাত খুন মামলার বিচার হবে না। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত সরকার ও প্রশাসনের কঠোর নিরপেক্ষ অবস্থানের কারণে তদন্ত ও বিচারকার্য সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হতে পেরেছে। প্রধান আসামি নূর হোসেন ঘটনার পরপরই ভারতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও সরকারের ত্বরিত হস্তক্ষেপে তাকে সে দেশ থেকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। অর্থ-বিত্ত ও ক্ষমতায় আসামিপক্ষ শক্তিশালী হওয়ায় তারা বারবার তদন্ত ও বিচারিক কার্যক্রমে হস্তক্ষেপের পাঁয়তারা করেছে বলেও খবর আছে। সর্বশেষ মামলার পিপির কন্যাকে মিষ্টির সঙ্গে বিষ দিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগও উঠেছে। তবে শেষ পর্যন্ত তারা ব্যর্থ হয়েছে। পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট এও বলেছে যে, কিছু সদস্যের কারণে সামগ্রিকভাবে পুরো র‌্যাব বাহিনীকে দায়ী করা যায় না। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই। র‌্যাব রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী একটি বিশেষ বাহিনী। জনগণের আস্থা ও নিরাপত্তার প্রতীক। বিশেষ করে সন্ত্রাস প্রতিরোধ ও জঙ্গী তৎপরতা দমনে র‌্যাবের ভূমিকা প্রশংসনীয়। সেখানে কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল সদস্যের নৃশংস ও ঘৃণ্য আচরণের জন্য র‌্যাবের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা নস্যাত হতে পারে না। একই সঙ্গে অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে স্থানীয় পুলিশ ও গোয়েন্দা প্রশাসনের নিরপক্ষ ভূমিকা, যারা অর্থের বশীভূত হয়ে কাজ করেনি ক্রীড়নক হিসেবে। সর্বোপরি সরকার যে দেশে আইনের শাসন ও স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ এ রায়ের মধ্য দিয়ে তা-ই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবেই কাজ করতে পেরেছে।
×