ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দৃষ্টিহীন সিদ্দিকুর চেন্নাই থেকে ফিরে এলেন

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১২ আগস্ট ২০১৭

দৃষ্টিহীন সিদ্দিকুর চেন্নাই থেকে ফিরে এলেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আমার চোখের আলোর বিনিময়ে এ দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য লেখাপড়ার পরিবেশ স্বাভাবিক হোক। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন, অন্ধ বলে যেন সমাজে আমাকে কোনদিন হেয় হতে না হয়। আমি নিয়মিত লেখাপড়া করতে ও সম্মানজনক অবস্থান চাই। কারও প্রতি আমার কোন ব্যক্তিগত আক্রোশ কিংবা ক্ষোভ নেই। শুক্রবার বিকেলে ভারতের চেন্নাইয়ের শংকর নেত্রালয়ে চিকিৎসা শেষে ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরে নেমে তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান এ কথা জানান। তিনি জানান, তবে তদন্তে যদি কিছু বেরিয়ে আসে তাহলে সেটা রাষ্ট্রীয় ব্যাপার। বিমানবন্দর থেকে বিকেল পৌনে ৫টায় সাংবাদিকদের সামনে আসেন দৃষ্টিশক্তি হারানো সিদ্দিকুর রহমান। ভারতের চেন্নাইয়ে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন পুলিশের টিয়ারশেলে চোখে আঘাত পাওয়া তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান (২৩)। শুক্রবার বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে দিকে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। এ সময় বিমানবন্দরে সিদ্দিকুর রহমানকে রির্সিভ করেন তার সহপাঠীরা। সিদ্দিকুর পৌঁছানোর আগে তার বন্ধুরা জড়ো হন বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১-এর নিচে ক্যানোপি-১-এর সামনে। তারা সবাই চোখ বেঁধেছিলেন কালো কাপড়ে। বন্ধুদের মধ্যে শেখ ফরিদসহ অন্যরা জানান, আমাদের এই কালো কাপড় শিক্ষাব্যবস্থার অন্ধত্বের প্রতীক। কেবল সিদ্দিকুর নয়। আমরা পুরো জাতি আজ অন্ধ, শিক্ষাব্যবস্থাও অন্ধ। আমরা আমাদের দাবি পূরণ করতে এসে অন্ধত্বকে বরণ করে নিলাম। আমাদের চোখে কালো কাপড় বাঁধা প্রতীকী অন্ধত্ব। এর মাধ্যমে আমরা বোঝাতে চাই। রাষ্ট্রও অন্ধ। শিক্ষাব্যবস্থা অন্ধ। সিদ্দিকুরের বন্ধুরা বলেন, ইতোমধ্যে এ ঘটনায় সাত জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। কিন্তু কাউকে শাস্তি দেয়া হয়নি। সিদ্দিকুর কি তার চোখের বিনিময়ে কারও শাস্তি দাবি করতে পারে না? এদিকে বিমানবন্দর থেকে সিদ্দিকুর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে একটি কেবিনের রাখা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, দেশে ফেরার আগে বৃহস্পতিবার চেন্নাইয়ের শঙ্কর নেত্রালয়ের চিকিৎসক লিঙ্গম গোপালের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন সিদ্দিকুর রহমান। তাকে ৫ থেকে ৬ সপ্তাহের ওষুধ দেয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সিদ্দিকুর রহমানের চোখ ভাল হবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই। বাম চোখের রেটিনার ৯০ শতাংশের বেশি নষ্ট হয়ে গেছে। আর ডান চোখ তো আগেই নষ্ট হয়েছে। চেন্নাইয়ে অস্ত্রোপচারের পর এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও সিদ্দিকুর রহমানের চোখের কোন উন্নতি হয়নি। তবে অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার চোখে আলো ফিরবে কিনা তা ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পর জানা যাবে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় গত ২৭ জুলাই দুপুরে একটি ফ্লাইটে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিদ্দিকুর রহমানকে চেন্নাইয়ের শঙ্কর নেত্রালয়ে নেয়া হয়। তার সঙ্গে গিয়েছিলেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ জাহিদুল আহসান মেনন ও বড় ভাই নওয়াব আলী। চেন্নাইয়ে নেয়ার পর ২৮ জুলাই প্রথম চিকিৎসক দেখানো হয়। পরে ৩১ জুলাই চিকিৎসক সিদ্দিকুর রহমানের চোখ পরীক্ষা করে জানান, তার দুই চোখই নষ্ট হয়ে গেছে। তবে রোগী চাইলে তারা অস্ত্রোপচার করবেন। ১ আগস্ট রোগীর কাছ থেকে সম্মতি পেয়ে ৪ আগস্ট অস্ত্রোপচার করা হয়। সিদ্দিকুর রহমান চেন্নাই যাওয়ার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জানান, সিদ্দিকুর রহমান যাতে অন্তত একটি চোখে দেখতে পান। সেজন্য চিকিৎসকরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন। সিদ্দিকুর রহমান দেশে ফিরলেই তাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে চাকরি দেয়া হবে। চেন্নাইয়ে পাঠানোর আগে সিদ্দিকুর রহমান জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ২০ জুলাই শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়া নতুন সাতটি সরকারী কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচী পালন করছিলেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান। এরপর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, সিদ্দিকুরের ডান চোখে আলো ফেরার সম্ভাবনা নেই। তবে বাঁ-চোখের অবস্থাও ভাল না। পরে তার চোখের চিকিৎসার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশে ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের তত্ত্বাবধানে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে চেন্নাইয়ের শংকর নেত্রালয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠান।
×