ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নদ-নদীর পানি বাড়ছে ॥ উত্তরাঞ্চলে ফের বন্যার শঙ্কা

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১২ আগস্ট ২০১৭

নদ-নদীর পানি বাড়ছে ॥ উত্তরাঞ্চলে ফের বন্যার শঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের উত্তরাঞ্চলে আবারও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, দেশের অধিকাংশ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমতলে ৯০ টি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের মধ্যে শুক্রবার পর্যন্ত ৮০টি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আবার বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে সারাদেশের ওপর মৌসুমি বায়ু অধিক সক্রিয়। এ কারণে রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, ঢাকা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণের আভাস দিয়েছে তারা। এমনকি অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড়ী এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা করা হয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর থেকে। এদিকে সুনামগঞ্জে গত তিন দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কানাইঘাট এবং সুনামগঞ্জ এলাকায় ২৭ এবং ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, কয়েকদিন ধরে অসম এবং অরুণাচলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে ওই এলাকায় নতুন করে বন্যা দেখা দিয়েছে। এখন বন্যার পানি উজান থেকে নেমে আসার কারণে প্রধান নদ- নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই কারণে নতুন করে উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও বন্যা দেখা দিতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। জনকণ্ঠের সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন বিভিন্ন নদ-নদী ও হাওড়ের পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার দুটি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢল নেমে এসে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৪৭ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে ভারি বর্ষণ শুরু হওয়ায় সুনামগঞ্জে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অসংখ্য পরিবার। ভারত থেকে আসা পাহাড়ী ঢল ও অবিরত বৃষ্টির প্রভাবে ইতোমধ্যে ২টি উপজেলা প্লাবিত হয়ে গৃহবন্দী মানুষের মধ্যে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে দেশের প্রধান প্রধান নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত অসম. অরুণাচল থেকে বৃষ্টি এবং বন্যার পানি নেমেই নতুন করে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। তারা জানিয়েছে আগামী পাঁচদিন পর্যন্ত দেশের অধিকাংশ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। এই অবস্থায় নতুন করে বন্যার আশঙ্কা দেয়া দিয়েছে। বর্তমানে যমুনা নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। পদ্মা নদীর পানি সমানতালে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, গত ১৪ জুলাই থেকে দেশের সব নদীর পানি কমতে শুরু করে। কিন্তু ২০ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত নদীর পানি হ্রাস-বৃদ্ধির মধ্যে ছিল। বর্তমানে সব নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি জানান অসম, অরুণাচলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। উজান থেকে ওই পানি নেমে আসছে নদীগুলোতে। এ অবস্থায় দেশে আবারও বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন করে দেশজুড়ে ভারি বর্ষণের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। আবহাওয়াবিদ একেএম রুহুল কুদ্দুছ বলেন, সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে আজ শনিবার রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, ঢাকা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি (৪৪-৮৮ মিমি) থেকে অতিভারি (৮৯ মিমি বা অধিক) বর্ষণ হতে পারে। ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পাহাড়ী এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়ার ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে মৌসুমি বায়ুর বর্ধিতাংশের অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, হিমালয়ের পাদদেশীয়, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে অসম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমিবায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় বিরাজ করছে। ফলে রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দম্কা হাওয়াসহ হাল্কা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে। এদিকে মৌসুমিবায়ু সক্রিয় থাকার কারণে শুক্রবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
×