ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিআরটিসি মহিলা বাস সার্ভিসে কর্মজীবী নারীদের স্বস্তি

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১০ জুন ২০১৭

বিআরটিসি মহিলা বাস সার্ভিসে কর্মজীবী নারীদের স্বস্তি

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ মিরপুর ১০ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তানজিলা কামাল। তিনি একজন ব্যাংক কর্মী। গন্তব্য মতিঝিল। সারি সারি বাস থাকলেও ওঠার উপায় নেই। সব বাসেই উপচেপড়া ভিড়। এমন সময় সেখানে এলো বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) মহিলা বাস সার্ভিসের একটি গাড়ি। তানজিলা নির্বিঘেœ উঠে পড়লেন বাসে। তিনি জনকণ্ঠকে জানালেন, ‘অফিসের গাড়ি নেই। আর বিপত্তি এখানেই। প্রতিদিন ভিড় ঠেলে গণপরিবহনে যাতায়াত করা কঠিন। বিআরটিসির অন্য বাসে ওঠা দায়। কিন্তু সরকার মহিলাদের জন্য আলাদা বাস সার্ভিস চালু করায় ধন্যবাদ। এতে আমাদের মতো কর্মজীবী মহিলাদের জন্য ভাল হয়েছে। আরও কিছু বাস চালু করলে নারীদের জন্য সুবিধা হবে বলে জানান তিনি। মহিলা বাস সার্ভিসের প্রশংসা করেছেন রাজধানীর চাকরিজীবী মহিলারা। তারা বলছেন, সময় মতো বাস পাওয়া এবং পুরুষ যাত্রী না থাকায় স্বস্তিতে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন। তবে তারা বাসের সংখ্যা আরও বাড়ানোর দাবি করছেন। বাসের অন্য এক যাত্রী তাহমিনা বেগম জনকণ্ঠকে বলেন, বাসের সংখ্যা বাড়লে নারীরা নির্বিঘেœ যাতায়াত করতে পারবেন। মহিলা বাস সার্ভিসের কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তারা এই সার্ভিসের আরও বেশি রুট চান। তারা বলছেন, স্কুল-কলেজ-অফিস সময় ছাড়াও নারীরা বিভিন্ন কাজে বের হন। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এই সার্ভিস খুবই সীমিত। মহিলা যাত্রীদের অভিযোগ, অফিস সময়ে পাবলিক বাসে মহিলাদের জন্য বরাদ্দ থাকে মাত্র ৬টি আসন। আসনগুলো পূর্ণ হলে বাসগুলোতে নারী যাত্রীরা উঠার সুযোগ পান না। এছাড়াও নানা অজুহাতে বাসগুলো নারী যাত্রী নিতে চায় না। এই অবস্থায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিআরটিসির মহিলা বাস সার্ভিস। কিন্তু রাজধানীর ১৩ রুটে চলে বিআরটিসির মহিলা বাস সার্ভিসের মাত্র ১৫টি বাস। তবে উঠা-নামার তদারকিতে একজন নারী সুপারভাইজার থাকায় স্বাচ্ছন্দ্যও বোধ করেন নারী যাত্রীরা। অফিস শেষে ক্লান্ত কর্মজীবী নারীরা যখন একে একে আসতে থাকেন তখন বিআরটিসির মিরপুর-১২ থেকে মতিঝিল বাস ডিপোর নারী বাস সার্ভিস নিয়ে হাজির সুপারভাইজার আকলিমা। রাজধানীর মতিঝিল থেকে নারী সার্ভিসের সবশেষ বাসটি ছেড়ে যায় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। কারো সামান্য দেরি হলেও শেষ ভরসা এ সুপারভাইজার। অসুস্থ-বয়স্ক এবং গর্ভবতী নারীদের জন্য তার বেশি দরদ। নারী বান্ধব বিআরটিসি বাস সার্ভিসের সুপারভাইজারদের একজন তামান্না। এক সন্তানের জননী তামান্না সংসারের কাজ সেরে ঘড়ির কাঁটা ধরে রোজ ভোরে পথে নামেন। মিরপুর-১০ থেকে মতিঝিল বাস ডিপোর সুপারভাইজার তিনি। যাত্রীরা বলছেন, নিয়মিত যাতায়াতের কারণে তামান্না বা শাহনাজরা তাদের স্বজন হয়ে উঠেছেন। তাছাড়া এ নারীরা একদিকে যেমন নারীর ক্ষমতায়নের দৃষ্টান্ত, তেমনি তারা নারী বান্ধব গণপরিবহন নিশ্চিত করছেন। ঢাকার সড়কে মোট ১৭টি বিআরটিসি মহিলা বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। এর মধ্যে সকাল ৯টা ৫ মিনিট ও ১০টা ১০ মিনিট রাজধানীর তালতলা থেকে মতিঝিল এবং সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিট ও ৬টা ১০ মিনিটে মতিঝিল থেকে তালতলা, সকাল সাড়ে ৮টায় নতুনবাজার থেকে মতিঝিল এবং বিকেল ৬টা ১০ মিনিটে মতিঝিল থেকে নতুন বাজার, সকাল সোয়া ৭টায় ও সোয়া ৮টায় আবদুল্লাহপুর থেকে মতিঝিল এবং বিকেল সোয়া ৫টায় ও সোয়া ৬টায় মতিঝিল থেকে আবদুল্লাহপুর, সকাল সাড়ে ৭টায় মিরপুর-১২, মিরপুর-১০ থেকে মতিঝিল বাস ডিপো এবং সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় মতিঝিল দ্বিতল বাস ডিপো থেকে মিরপুর-১২ ও মিরপুর-১০, সকাল ৮টায় মিরপুর ১০ থেকে মতিঝিল এবং বিকেল সোয়া ৫টায় মতিঝিল থেকে মিরপুর-১০, সকাল ৮টায় মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিল এবং বিকেল সোয়া ৫টায় মতিঝিল থেকে মোহাম্মদপুর, সকাল পৌনে ৮টায় ও সোয়া ৮টায় নারায়ণগঞ্জ থেকে মতিঝিল এবং বিকেল সোয়া ৫টায় ও ৬টায় মতিঝিল থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত বিআরটিসি মহিলা বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। এছাড়া রাজধানীর মিরপুর-১২ থেকে আসাদগেট হয়ে আজিমপুর পর্যন্ত মহিলা স্কুল বাস সার্ভিস পরিচালিত হচ্ছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘এ খাতে ক্রমাগত লোকসান হওয়ার কারণে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বাসের সংখ্যা বাড়ানো যাচ্ছে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, রাজধানীতে নারীযাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বিআরটিসি মহিলা বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। বর্তমানে ঢাকায় ১৫টি মহিলা বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামে ২টি বাস। তিনি বলেন, ঢাকার সব কয়টি রুটে মহিলা বাস সার্ভিস সকাল ও বিকেলে সঠিক নিয়ম মেনেই চলাচল করছে। আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কোন ধরনের অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ মহিলা বাস সার্ভিস বাড়ানোর ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘মহিলাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করেই কিন্তু সরকার এ বিশেষ বাস সার্ভিস চালু করেছে। চাহিদার ভিত্তিতে আগামীতে রাজধানী ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে মহিলা বাস সার্ভিস চালু হবে। এছাড়া নারী যাত্রীর সঙ্গে স্বামী এবং মায়ের সঙ্গে ছেলে উঠার সুযোগ পেলে আরও অনেক নারী এসব বাসে চলাচলের সুযোগ পেতেন। বেসরকারী বাস মালিকদেরও নারী যাত্রীদের জন্য আলাদা বাস সার্ভিস চালু করার আহ্বান জানিয়েছে বিআরটিসি।’ বিআরটিসি অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৯ সাল থেকে একটি দোতলা বাস দিয়ে মহিলা বাস সার্ভিস চালু করা হয়। পরবর্তীতে চাহিদা বাড়ায় ২০০৯ সালে ২টি এবং ২০১১ সালে তা বাড়িয়ে ১৭টি করা হয়। বর্তমানে দোতলা বাস আছে ৯টি, একতলা ৮টিসহ ঢাকা ও চট্টগ্রামে মোট ১৭টি বাস চলছে। বর্তমানে রাজধানীতে ডিপোর সংখ্যা ৯টি, সিট ক্যাপাসিটি দোতলা বাসে ৭৫ এবং একতলা বাসে ৫২টি আসন। বিআরটিসি মহিলা বাস সার্ভিসের পাশাপাশি স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করেছে স্কুল বাস সার্ভিস।
×