ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টুপির কদর বেড়েছে বিদেশেও

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ১০ জুন ২০১৭

টুপির কদর বেড়েছে বিদেশেও

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ ঈদ সামনে রেখে মহাব্যস্ত সময় পার করছেন নওগাঁর নারী টুপি কারিগররা। এ সময় যেন তাদের দম ফেলার ফুসরত নেই। ব্যস্ত আর ব্যস্ত । সারা বছর টুপি সেলাইয়ের টুকটাক কাজ হলেও রমজানের ঈদে তাদের যেন ব্যস্ততা বেড়ে যায়। সুঁই-সুতো দিয়ে তৈরি নক্সা তোলা চমৎকার এসব টুপির চাহিদাও ব্যাপক। দেশের গু-ী পেরিয়ে সৌদি আরবে এ টুপির কদর বেড়েছে। গ্রামে ঢুকলেই চোখে পড়বে সুঁই আর সুতোর নিপুণ খেলায় টুপি তৈরির কাজ করার দৃশ্য। মনের মাধুরি মিশিয়ে সাদা টুপিতে বিভিন্ন রঙের সুতো দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছেÑ নানা রকম ফুল। গ্রামের নারীরা পাড়ার নিরাপদ স্থানে চট বা পাটি বিছিয়ে গল্পের তালে কাজ করে চলেছেন। এ দৃশ্যটি নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের। শুধু সুলতানপুরই নয়। উপজেলার শিবগঞ্জ, তাতারপুর, হরমনগর, মধুবন, কুঞ্জবন, উত্তরগ্রামসহ বিভিন্ন গ্রামে নারীরা এখন এ টুপি তৈরিতে ব্যস্ত। ঈদে বোনাসের পরিমাণটা একটু বেশি পেতেই পাইকারদের কাছ থেকে নেয়া এসব সাদা টুপি সেলাইয়ের পর বুঝিয়ে দিতে কারিগরদের তোড়জোড় চলছে। সংসারের কাজের পাশাপাশি সারা বছরই টুপি তৈরি হয়। আর টুপি তৈরি করে বাড়তি আয় করেন এসব নারীরা। পড়াশুনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও টুপি তৈরির কাজ করে থাকে। সুঁই-সুতো দিয়ে নিপুণ হাতে প্রতিটি টুপি তৈরি করতে প্রায় ১৫-২০ দিন সময় লাগে। তবে এ কাজ করে স্বাবলম্বী হলেও সময়ের ন্যায্য মজুরি তারা পান না। জানা গেছে, জেলার মধ্যে মহাদেবপুরে এ টুপি তৈরি শুরু হয় বিগত ২০০৭ সাল থেকে। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন জেলার ১১টি উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে এ টুপি তৈরি কাজ। টুপির সঙ্গে দুই হাজারের অধিক ব্যবসায়ী জড়িত। আর প্রায় ৩০ হাজার নারী কারিগর সম্পৃক্ত, যাদের উপার্জনের অন্যতম পথ এই টুপি তৈরি। টুপি কারিগর গৃহবধূ শাহনাজ, মোরশেদা ও সাবিনা বলেন, সাংসারিক কাজের পাশাপাশি এ টুপি তৈরির করেন তারা। তবে রমজান এবং সামনে ঈদের জন্য ব্যস্ততা একটু বেশি। মূলত বোতাম সেলাই ও চেইন সেলাই দিয়ে টুপি তৈরি করা হয়। বোতাম সেলাই টুপির পরিশ্রম একটু বেশি এবং পারিশ্রমিক ৪শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকা। আর সময় লাগে ১৫-২০ দিন। চেইন সেলাই টুপি সহজ ও সময় কম লাগে। কাজও দ্রুত হয়। এর পারিশ্রমিক ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা। তবে পরিশ্রমের তুলনায় পারিশ্রমিক খুবই কম। শিক্ষার্থী রুমি সুলতানা জানায়, পড়াশুনার পাশাপাশি সে টুপি তৈরির কাজ করে। এ থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে কাগজ-কলম ও হাত খরচসহ আনুষঙ্গিক কাজে ব্যয় হয়। টুপির প্রাথমিক কাজটি করেন, মধুবন গ্রামের গৃহবধূ সাজেদা খাতুন। তিনি বলেন, এক থান কাপড় থেকে প্রকারভেদে ৯০ থেকে ১০০টি টুপি তৈরি হয়। পলিথিনের কাগজে সোনামুখি সুঁই দিয়ে বিভিন্ন ফুলের গ্রাফিক্স করা হয়। এরপর সাইজ করা টুপির কাপড়ে গ্রাফিক্স পলিথিন রেখে তেল ও ব্লু (নীল রং) দিয়ে ছাপ দেয়া হয়। ছাপ দেয়া ফুলের ওপর সেলাই মেশিন দিয়ে সেলাই করা হয়। এ কাজটি করতে ১-২ দিন সময় লাগে। যার মজুরি পান ৭শ’ টাকা। এরপর এ টুপিগুলো বিভিন্ন কারিগরদের কাছে হাতের কাজ করতে দেয়া হয়। স্থানীয় টুপি ব্যবসায়ী মাজহারুল ইসলাম বলেন, গত আট বছর থেকে এ টুপির ব্যবসা করে আসছেন তিনি। প্রায় ১ হাজার ৫শ’ জন নারী কারিগর তার এ টুপি তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত। দাম বেশি হওয়ায় স্থানীয় বাজারে এসব টুপির তেমন একটা চাহিদা নেই। তবে সৌদি আরবে এ টুপির চাহিদা বেশি। প্রকার ভেদে প্রতিটি টুপি ৫শ’ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়।
×