ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

একটি জয়ের আশায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ৪ জুন ২০১৭

একটি জয়ের আশায় বাংলাদেশ

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডের পরই বোঝা গেছে, আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের জয় পাওয়া অনেক কঠিন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩০৫ রান করার পরও যেহেতু জয় আসল না, সামনে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড তো আরও কঠিন প্রতিপক্ষ। তবুও একটি জয়ের আশায় আছে সবাই। খেলাটি ক্রিকেট বলেই এ আশা। একটি জয় মিলে গেলে যে শূন্য হাতে ফিরতে হবে না। সেই আশা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনাও যে নেই তাও বলা যাবে না। ক্রিকেট খেলায় দিনটিতে যে দল ভাল করে তারাই জিতে। বাংলাদেশ তো এখন অনেক উন্নতি করছে। ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ৮৪ রানে অলআউট হওয়ার পরও যে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এত ভাল ব্যাটিং করা গেছে তাতেই বোঝা গেছে; অতীত ম্যাচ নিয়ে এখন আর পরে থাকেন না ক্রিকেটাররা। শুধুই সামনের ম্যাচ নিয়ে ভাবেন। নিজেদের সেই ম্যাচ নিয়ে প্রস্তুত করেন। ভুলগুলো শুধরে সামনে এগিয়ে যান। আর সেই ভাবনায় এখন সামনে আছে অস্ট্রেলিয়া। যে অস্ট্রেলিয়াকে এরআগেও হারিয়েছে বাংলাদেশ। তাই প্রথম ম্যাচে যতই ভাল ব্যাটিং করার পর হার হোক, অসিদের বিপক্ষেই সোমবার বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে সেই প্রত্যাশাও আছে। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাই যেমন যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ ক্রিকেট কাউন্সিলের অনুষ্ঠানে গিয়ে বলেছেন, ‘প্রথম ম্যাচে আমরা ভাল খেলেছি। শুধু জয়টাই মিলেনি। আশা করছি পরের ম্যাচগুলোতে আরও ভাল হবে। সামনে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড আছে। এ দুই দলের বিপক্ষে ভাল খেলতে পারব আশাকরি।’ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এরআগে বাংলাদেশ চারবার খেলেছে। ২০০০ সালে (তখন নাম ছিল নকআউট ট্রফি), ২০০২, ২০০৪ ও ২০০৬ সালে খেলেছে। কিন্তু মূল টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ কোন দলের বিপক্ষে জিততে পারেনি। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার সুবাদে ২০০২ ও ২০০৪ সালে সরাসরি টুর্নামেন্টে খেলেছে। আর ২০০০ ও ২০০৬ সালে খেলেছে বাছাইপর্বে। ২০০৬ সাল থেকে আর কোন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে পারেনি। ২০০৯ সাল থেকেই র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আট দলকে নিয়ে টুর্নামেন্টের খেলা চালু হয়। এরপর থেকেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বাইরে বাংলাদেশ। এবার ১০ বছর ৭ মাস পর আবার বাংলাদেশ সরাসরি টুর্নামেন্টে খেলছে। র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আটে থেকে নিজের যোগ্যতায় এ টুর্নামেন্টে খেলছে বাংলাদেশ। তবে যখন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে নেমেছে তখন বাংলাদেশ র‌্যাঙ্কিংয়ের ছয় নম্বরে থেকে খেলেছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারেই অবশ্য সাত নম্বরে নেমে গেছে। ২০০৬ সালের অক্টোবরে সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বাছাইপর্বে তিন ম্যাচ খেলে একটিতে জিতেছে (জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে), দুটিতে হেরেছে (শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে)। ২০০৪ সালে গ্রুপ পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে। ২০০২ সালে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মতো দলের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে। সবার আগে ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে একটি ম্যাচই খেলার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে বিদায় নেয়। বাংলাদেশ প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে। এবারও ইংলিশদের বিপক্ষে হার দিয়েই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা শুরু করেছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচটিতে সহজে হারলেও সবার মনে বিশ্বাস আছে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে। সামনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই তা সম্ভব। অবশ্য প্রথম ম্যাচে যে বাংলাদেশ ৮ ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলেছে, একজন বোলার কম নিয়ে খেলেছে; তা নিয়েই বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমানে নির্বাচক কমিটির সদস্য হাবিবুল বাশার যেমন মনে করেন, ‘আসলে নির্ভর করে কন্ডিশন কি রকম। টিম ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনা কি সেটা। কন্ডিশনটাই আসল। ইংল্যান্ডের কন্ডিশনটা সবাই হিসেব করে ফাস্ট বোলারদের জন্য। আসলে সেরকমটা এখন আর নেই। উইকেট যদি ফ্ল্যাট থাকে সেখানে ঠিক জায়গায় বল করে যাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি নিশ্চিত যে আমাদের বোলাররা এগুলো নিয়ে ভাবছেন। আমাদের জন্য পরের ম্যাচটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। পরের ম্যাচটাতে না জিতলে টুর্নামেন্ট থেকে আউট হয়ে যাব। আশা করছি পরের ম্যাচে আমরা ভাল করতে পারব।’ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক জালাল ইউনুস খুবই আশাবাদী। তিনি বলেছেন, ‘দেখেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কি হয়েছে তা নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না। একটা টুর্নামেন্টে এক ম্যাচ চলে যাওয়ার পর সেটা নিয়ে ভাবার কোন অবকাশ নেই। হ্যাঁ, সেই ম্যাচের ভুলগুলো নিয়ে ভাবা উচিত। ভুল শুধরে নেয়ার চেষ্টা করাও উচিত। কিন্তু ম্যাচ হেরে যাওয়াতে যে সব শেষ হয়ে গেছে এমনটি নয়। আমাদের পরের ম্যাচ নিয়ে ভাবতে হবে। আশা করছি, পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভাল করবে বাংলাদেশ।’ কিন্তু কিভাবে? ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে বোঝা গেছে ৩৫০ রান করেও জেতা কষ্টকর। যদি ভাল বোলিং না হয়। আর বাংলাদেশ প্রতি ম্যাচে ৩০০ রান করবে এমনটিও নয়। তাহলে কি দাঁড়াল, ৩০০ না করতে পারলে কোন লড়াই করা যাবে না। আর বল হাতে যদি প্রতিপক্ষকে ৩০০ রানের নিচে না বেঁধে রাখা যায়, তাহলে বিপদ। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড তো সবদিকেই পটু। রান বেশি করা এবং প্রতিপক্ষকে বোলিং করে চাপে রাখা তো তাদের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মানে বাংলাদেশের জেতা কঠিন। এরপরও আশা থাকে। স্বপ্ন থাকে। সেই স্বপ্নই সামনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায়। বাংলাদেশও সেই প্রেরণাতেই এগিয়ে যেতে চাচ্ছে। হাতে আছে দুই ম্যাচ। যে কোন একটিতে জিতলেই তো হয়। তাহলেই তো আর খালি হাতে ফিরতে হবে না। পারবে তা করতে বাংলাদেশ?
×