ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রথম ম্যাচে মাশরাফিদের প্রতিপক্ষ আজ স্বাগতিক ইংল্যান্ড

শুরুতেই চমকে দিতে চায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১ জুন ২০১৭

শুরুতেই চমকে দিতে চায় বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ, লন্ডন থেকে ॥ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আবার খেলতে ১০ বছর ৭ মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে। সেই অপেক্ষার প্রহর আজ শেষ হচ্ছে। স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ২০০৬ সালের পর আবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে নামছে বাংলাদেশ। ম্যাচটি লন্ডনের কেনিংটন ওভাল মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে তিনটায় ম্যাচটি শুরু হবে। এ ম্যাচটি দিয়ে আবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির এবারের (অষ্টম) আসরের পর্দাও উঠছে। বাংলাদেশ থেকেই টুর্নামেন্টের সূচনা হয়েছিল। সেই ১৯৯৮ সালে। বাংলাদেশেই প্রথমবার এ টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। তখন টুর্নামেন্টের নাম ছিল ‘আইসিসি নকআউট ট্রফি’। কালের বিবর্তনে টুর্নামেন্টের আকার পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তন হয়েছে নাম। এখন টুর্নামেন্টের নাম-আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেই আজ বাংলাদেশের মিশন শুরু হচ্ছে। ক্রিকেটের কুলীন দল, অভিজাত দল, ক্রিকেটের জনক খ্যাত ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই খেলতে নামছে বাংলাদেশ। তাদের দেশেই। এ ম্যাচটি খেলার পর আরেক অভিজাত দল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়াই করবে বাংলাদেশ। এই ম্যাচটিও ওভালেই হবে, ৫ জুন। তবে ম্যাচটি দিবারাত্রিতে অনুষ্ঠিত হবে। ইংল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের সময় পার্থক্য যেহেতু পাঁচ ঘণ্টা, সেই হিসেবে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ম্যাচটি শুরু হবে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ খেলে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের সর্বশেষ ম্যাচটি খেলবে বাংলাদেশ। কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে ৯ জুন ম্যাচটি দুপুর সাড়ে তিনটায় শুরু হবে। যদি বাংলাদেশ সেমিফাইনালে উঠতে পারে, তাহলে নক আউট পর্বে খেলার সুযোগ পাবে। নয়ত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি শেষেই বাংলাদেশের এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মিশন শেষ হয়ে যাবে। এবার বাংলাদেশ দল দাপটের সঙ্গেই টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো অভিজাত দলকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এ টুর্নামেন্টে খেলছে। টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী, পয়েন্ট তালিকার সেরা আট দল খেলবে। দুই গ্রুপে লড়াই হবে। চার দল করে একেক গ্রুপে থাকবে। প্রতিটি দল পরস্পরের বিপক্ষে একটি করে ম্যাচ খেলবে। গ্রুপ পর্বে পয়েন্ট তালিকায় সেরা দুইয়ে থাকা দুই গ্রুপের দুটি করে দল সেমিফাইনালে উঠবে। সেখান থেকে সেমিফাইনাল জিতে দুই দল ফাইনালে উঠবে। ফাইনাল হবে ১৮ জুন, ওভালে। সেই হিসেবে বাংলাদেশ গ্রুপ পর্বে তিনটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছে। বাংলাদেশ এর আগে টুর্নামেন্টের মূল পর্বে দুইবার ও বাছাই পর্বে দুইবার খেলেছে। এর আগে সাতবারের টুর্নামেন্টে তিনবার অংশই নিতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০০০ সালে (তখনকার-নকআউট ট্রফি) ও ২০০৯ ও ২০১৩ সালে খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার সুবাদে ২০০২ ও ২০০৪ সালে মূল টুর্নামেন্টে সরাসরি খেলে বাংলাদেশ। ২০০০ সালে ও ২০০৬ সালে বাছাইপর্ব খেলে। ২০০৬ সালের পর থেকে ২০০৯ ও ২০১৩ সালের টুর্নামেন্টে খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০০৯ সাল থেকেই র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আট দলকে নিয়ে টুর্নামেন্টের খেলা চালু হয়। এরপর থেকেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বাইরে বাংলাদেশ। এবার ১০ বছর ৭ মাস পর আবার বাংলাদেশ সরাসরি টুর্নামেন্টে খেলছে। র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আটে থেকে নিজের যোগ্যতায় এ টুর্নামেন্টে খেলছে বাংলাদেশ। ২০০৬ সালের অক্টোবরে সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বাছাইপর্বে তিন ম্যাচ খেলে একটিতে জিতেছে (জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে), দুটিতে হেরেছে (শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে) বাংলাদেশ। চারদলের বাছাইপর্বে তিন নম্বরে থাকায় আট দলের মূল টুর্নামেন্টে খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। টেস্ট খেলুড়ে ১০ দেশের মধ্যে সেরা ছয় দল সরাসরি টুর্নামেন্টে খেলেছে। বাকি চার দলের বাছাইপর্ব থেকে পয়েন্ট তালিকার সেরা দুই দল মূল টুর্নামেন্টে উতরেছে। তবে ২০০৪ সালে ১২ দলের টুর্নামেন্টে দ্বিতীয়বারের মতো মূল পর্বেই খেলেছে বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে। ২০০২ সালেও বাংলাদেশ মূল টুর্নামেন্টে খেলেছে। এবার প্রথমবারের মতো মূল টুর্নামেন্টে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর সরাসরি খেলার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মতো দলের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে। এর আগে ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ছোঁয়া পেয়েছে বাংলাদেশ। সেটি ‘নকআউট ট্রফি’ই ছিল। নিয়ম ছিল এমন, টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে সেরা পাঁচ থাকা দলগুলো সরাসরি নকআউট পর্বে খেলে। ৯টি টেস্ট দলের মধ্যে বাকি তিন দল প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে বা বাছাই পর্বে খেলে। সঙ্গে আইসিসির সহযোগী দুই দেশ বাংলাদেশ ও স্বাগতিক কেনিয়া অংশ নেয়। আট দলের টুর্নামেন্টে বাছাইপর্ব থেকে তিন দল মূল টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পায়। প্রতিটি দল একটি করে নকআউট ম্যাচই খেলার সুযোগ পায়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারে বাংলাদেশ। এই ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রথম কোন ম্যাচ খেলে। আজকের আগ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এই একটি ম্যাচই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে বাংলাদেশ। আজ ইংলিশদের বিপক্ষে দ্বিতীয়বারের মতো মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। সেটি আবার তাদের মাটিতেই। পারবে বাংলাদেশ এবার জিততে? দীর্ঘ ১৬ বছর ৭ মাস আগে, ২০০০ সালের অক্টোবরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছে বাংলাদেশ, সেই দল এখন আর নেই। এখন বাংলাদেশ দলটি অনেক উন্নতি করেছে। তার প্রমান র‌্যাংকিংয়ের সেরা আটে থেকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা। তাছাড়া ইংল্যান্ড দলটিকেও এখন হারাচ্ছে বাংলাদেশ। ২০১০ সাল থেকেই ইংল্যান্ডকে হারানো শুরু হয়েছে। সেই থেকে সর্বশেষ সাত ম্যাচের চারটিতেই ইংলিশদের হারিয়েছে বাংলাদেশ। আর সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচের হিসেব ধরলে হারজিতের ব্যবধান বাংলাদেশ ৩-২ ইংল্যান্ড। বাংলাদেশ দলে অভিজ্ঞ ও তরুণ্যের দারুণ সমন্বয় আছে। এ সমন্বয় যদি মাঠে কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশ, তাহলে ইংল্যান্ডকে হারাতেও পারে মাশরাফিবাহিনী। আয়ারল্যান্ডে তিন জাতি ক্রিকেট সিরিজে বাংলাদেশ দুর্দান্ত খেলে। নিউজিল্যান্ডের মত দলকে হারায়। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি। পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে খারাপ খেলেছে। তবে প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে মুল টুর্নামেন্টের খেলার বিবেচনা করা কোনভাবেই সমুচিন নয়। প্রস্তুতি ম্যাচে দলগুলো নিজেদের ঝালাই করে নেয়। সেখানে জয়-পরাজয় মুখ্য নয়। তাই ক্রিকেট প্রেমীদের আশা, আজ ইংলিশদের হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মিশন শুভভাবে শুরু করুক বাংলাদেশ।
×